সাইপ্রাসে কী স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে নাকি হতাশায় কাটছে?

ছোট্ট একটি দ্বীপ সাইপ্রাস। গিটার আকৃতির বলা চলে। আয়তন ৯২৫১ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপে রয়েছে হাজারও বাংলাদেশির বসবাস। একবুক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে দেশটিতে বাংলাদেশিরা পাড়ি জামাচ্ছেন। আসলেই কি স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে নাকি হতাশায় কাটছে তাদের?

অনেকটা পাল্টে গেছে রূপকথার সেই সাইপ্রাস। প্রবাসী শিক্ষার্থীরা সফল হতে পারছে? নাকি সীমানার বাইরে ঘটছে অন্যকিছু। তবে সাইপ্রাসে এশিয়ানদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কারণ হিসেবে বাংলাদেশিদের সততা লক্ষ্য করা গেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরির বাজারের অবস্থা ভালো নয়। শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষিত লোক তাদের যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পাচ্ছে না। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা শেষ হতে না হতেই কর্মজীবন গড়ার জন্য বেছে নিচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো।

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ- আমেরিকায় যেসব শিক্ষার্থীরা আসে তাদের বেশিভাগ পছন্দনীয় দেশ হিসেবে ইউরোপের জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেন, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ডেনমার্কসহ আরও কিছু দেশ বেছে নেয়। এই দেশগুলোতে ভিসা পাওয়া খুব কঠিন হওয়ায় যারা এসব দেশের ভিসা পেতে ব্যর্থ হয়, তারা পরে ইউরোপের দ্বিতীয় সারির দেশগুলোকে বেছে নেয়।

এই দ্বিতীয় সারির দেশগুলোর মধ্যে সাইপ্রাসে ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হওয়ার কারণে অনেকেই আবার সাইপ্রাসকে বেছে নেয়। তবে এখন সাইপ্রাসের ভিসা পাওয়াও খুব কঠিন হয়ে পড়ছে।

সাইপ্রাসে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে প্রায় ৩০টির মতো উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশটিতে প্রায় কলেজগুলোতে টিউশন ফি ও অন্যান্য নিয়ম-কানুন প্রায় একই। প্রথম বার বাংলাদেশ থেকে আসার সময় এক বছরের টিউশন ফি দিতে হয়। এক বছরের টিউশন ফি ৪ হাজার ২০০ ইউরো, মানে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

সাইপ্রাস একটি ইউরোপের দেশ হলেও দেশটি অত্যন্ত ছোট হওয়ায় এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান নাই। এমনকি সাইপ্রাসের ৪০ শতাংশ লোকের ভালো কোনো কর্মসংস্থান নাই।

বর্তমানে সাইপ্রাসে কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। এতটায় খারাপ যে, বাসা ভাড়ার টাকা ও ইনকাম করতে পারছে না। কলেজগুলোতে পড়াশোনা হয় শুধু নামমাত্র। কলেজের টাকাগুলো ঠিকমতো দিতে পারলেই কলেজ কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা থাকে না। শুধুমাত্র পরীক্ষার দিনটা বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে ওইদিন হাজির হলেই পরীক্ষার ঝামেলা শেষ।

অনেকদিন কাজ খুঁজতে হয়, এমনকি অনেকের কাজ খুঁজতে খুঁজতে বছর লেগে যায়। আবার অনেকেই সাইপ্রাস আসার সঙ্গে সঙ্গে খুব অল্প সময়ে ভাল কাজ জোগাড় করে ফেলে। সবসময় ভালো কাজ থাকলে ভালো টাকা উপার্জন করা যায়। যেমন- অনেকেই বছর শেষে খরচ বাদ দিয়ে ১০ থেকে ২০ হাজার ইউরো সঞ্চয় করতে পারে (৯ লাখ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা বাংলাদেশি টাকায়)।

আবার কেউ কেউ মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকাও আয় করে, সেক্ষেত্র বিশেষে ব্যবসার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এই ক্যাটাগরির লোক খুব কম বললেই চলে। আবার অনেকের আয়-ব্যয় বাদ দিয়ে বছর শেষে কিছুই থাকে না। এই ক্যাটাগরির লোকও কম নয়। শতকরা প্রায় ২০ ভাগ লোক আছে এই ক্যাটাগরিতে।

সাইপ্রাস কিছুদিন আগেও এমন ছিল, যেখানে অর্থ উপার্জন আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া দুটিই সম্ভব ছিল কিন্তু এখন তা করা যাচ্ছে না। না করতে পারছে পড়াশোনা না কাজ- ফলে যেই টাকা খরচ করে সাইপ্রাস আসে আর যেই স্বপ্ন নিয়ে আসা হয় তার কোন পূরণ করা সম্ভব হয় না।

সাইপ্রাসে বিভিন্ন সেক্টরগুলোতে ছাত্ররা বেশি কাজ করে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা দেশটিতে রেস্টুরেন্ট ও ডেলিভারির কাজ করে, ওইসব কাজে ঘণ্টায় ৪-৬ ইউরো বেতন পাওয়া যায়। আবার অনেকেই কৃষি বিষয়ক কাজ করে, ওইসব কাজেও ঘণ্টায় ৫-৭ ইউরো বেতন আছে। আর গ্রোসারির দোকানেও অনেকেই কাজ নেয়, এক্ষেত্রে বেতন মাস হিসেবে দেয়া হয়।

দেশটি তুরস্ক উপকূল থেকে দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এর পূর্ব দিকে রয়েছে সিরিয়া ও লেবানন। সাইপ্রাসের মূল আয়তনের ৪০ শতাংশ টার্কিশ (তুরস্কের দখলে) আর ৬০ শতাংশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ইউরো সাইপ্রাস (রিপাবলিক অব সাইপ্রাস এর দখলে)।