জার্মানিতে পড়াশোনা : অর্থিক সহায়তা

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তির পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্যের দিকেও নজর দিতে হয়। অনেক দেশেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ-শিক্ষাঋণসহ বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা করে থাকে। এসব দেশের তালিকায় জার্মানি অন্যতম।
জার্মানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদেরকে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে৷ তবে বৃত্তি গ্রহণে আগ্রহীদেরকে একটু বেশিই পরিশ্রম করতে হয়৷ এক্ষেত্রে শুধু বুদ্ধিমত্তা এবং গ্রেডই বিবেচ্য নয়, একইসঙ্গে আবেদনকারীর ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক যোগাযোগকে বিবেচনা করা হয়৷ বৃত্তি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত তাদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থী বাছাই করে থাকে৷
এছাড়া স্নাতক পর্যায়ের এবং উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও বিভিন্ন রকমের সহায়তা কার্যক্রম রয়েছে৷ এজন্য তথ্য সংগ্রহ এবং দ্রুত আবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে অর্থ সহায়তার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক হয়ে থাকে৷ তাই হাতে সময় থাকতে আবেদন করা জরুরী৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, মাত্র তিন শতাংশ জার্মান শিক্ষার্থী বৃত্তির আওতায় অধ্যয়নের সুযোগ পেয়ে থাকেন৷ তাই, শিক্ষার্থীদের উচিত অধ্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের বিষয়ে অন্যান্য উপায়ের দিকেও নজর রাখা৷
শিক্ষাঋণ গ্রহণ
জার্মানির কিছু রাজ্যে টিউশন ফি চালু করায় আর্থিকভাবে অনেক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন৷ শিক্ষার খরচ যোগাতে ব্যাচেলর এবং মাস্টার পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ তবে এই বিষয়টির সুরাহায় রাজনীতিবিদ এবং অর্থনীতিবিদরা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংক ঋণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন৷
বিভিন্ন জার্মান ব্যাংক শিক্ষার্থীদেরকে অপেক্ষাকৃত কম সুদে শিক্ষাঋণ প্রদান করছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকরা সাধারণত দীর্ঘদিন বেকার থাকেন না এবং তারা দ্রুত ঋণের টাকা পরিশোধে সক্ষম৷
তবে যারা শিক্ষাঋণ নিতে আগ্রহী, তাদের উচিত বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজখবর নেওয়া৷ কেননা, ব্যাংকভেদে সুদের হারে তারতম্য রয়েছে৷
বাফুগ্: রাষ্ট্র সমর্থিত শিক্ষাঋণ
সরকারও শিক্ষার্থীকে শিক্ষাঋণ প্রদান করে, তবে সেটা নির্ভর করে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের আয়ের উপর৷ আইন অনুযায়ী, যেটি বাফুগ্ নামে পরিচিত, একজন শিক্ষার্থী প্রতিমাসে ৬৫০ ইউরো পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন৷ এই অর্থের অর্ধেক হচ্ছে সুদমুক্ত ঋণ, আর বাকি অর্ধেক হচ্ছে অনুদান যা কখনো ফেরত দিতে হবে না৷
সকল জার্মান শিক্ষার্থী বাফুগ্’এর জন্য আবেদন করতে পারবে৷ তবে বিদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি প্রযোজ্য, বিশেষ করে কতদিন ধরে এবং কেন তারা জার্মানিতে অবস্থান করছেন সেগুলো ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়৷ যারা বাফুগ্’এর সহায়তা পাবেন কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন, তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংঘে যোগাযোগ করতে পারেন৷
বৃত্তির পরিমাণ
জার্মানিতে বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর বসবাসের খরচ হিসেবে করা হয়৷ তবে যারা অধ্যয়নের পাশাপাশি কাজ করতে আগ্রহী, তাদেরকে অবশ্যই বিষয়টি বৃত্তি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হয়৷ সেক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের সমপরিমাণ অর্থ বৃত্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়৷
রাজনৈতিক ফাউন্ডেশন
জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করতে পেরেছে যে, আজকের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের নীতি-নির্ধারক৷ ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং ডক্টরেট প্রার্থীদেরকে অর্থ সহায়তা প্রদানে আগ্রহী জার্মান রাজনীতিবিদরা৷ কারণ যারা জার্মানিতে অধ্যয়ন করবেন, তারা জার্মান প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন সম্পর্কে আরো বেশি ধারণা অর্জন করবেন৷
মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশেষত রাজনৈতিক ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষা বিষয়ক অর্থ সহায়তা পেতে পারেন৷ এক্ষেত্রে অবশ্য প্রার্থীর সামাজিক যোগাযোগের অতীত ক্ষমতা এবং অধ্যয়নের পর নিজের দেশে ফিরে গিয়ে তা কাজে লাগানোর আগ্রহের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়৷
অর্থ সহায়তা বিষয়ক ওয়েবসাইট
জার্মান ছাত্র সংঘের জোট স্কলারশিপ বিষয়ক বিভিন্ন সহায়ক তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে৷ এছাড়া জার্মান একাডেমী এক্সচেঞ্জ সার্ভিস বা ডিএএডি’র ওয়েবসাইটেও এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে৷
স্কলারশিপের তথ্য পেতে এই লিংকটি দেখুন- http://www.daad.de/deutschland/foerderung/hinweise/00461.en.html
তথ্য সূত্র: ডয়েচে ভেলে (জার্মান বার্তা সংস্থা)
গ্রন্থনা : স্টুডেন্টকেয়ারবিডি.কম