হতে চাইলে পি. আর. প্রফেশনাল

পাবলিক রিলেশনস আর কিছুই নয়, একটি ব্র্যান্ডকে বিশ্বের জনতার কাছে প্রোমোট করা এবং সমাজে সেই ব্র্যান্ডের ‘ইমেজ’-কে রক্ষা করার কাজ।

তোমার কমিউনিকেশন স্কিল কি জবরদস্ত? বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে দেখা করে, মিষ্টি কথায়, আকর্ষক আদব-কায়দায় তাদেরকে পটিয়ে ফেলতে কি তোমার জুড়ি নেই? তা হলে পি. আর. ( পাবলিক রিলেশনস) কেরিয়ার তোমার পক্ষে আদর্শ হতে পারে। তুমি যদি সৃজনশীল মানুষ হও, আবার ৯-৫ ডেস্ক জব যদি তোমার কাছে চক্ষুশূল হয়, তা হলে পি. আর. হয়ে উঠতে পারে তোমার ড্রিম জব। কী এই পি.আর.? পাবলিক রিলেশনস আর কিছুই নয়, একটি ব্র্যান্ডকে বিশ্বের জনতার কাছে প্রোমোট করা এবং সমাজে সেই ব্র্যান্ডের ‘ইমেজ’-কে রক্ষা করার কাজ। পি. আর. এজেন্টদের কারসাজিতে যে কোনও সেলেব বা সংস্থার খ্যাতি মূহূর্তে আকাশ ছুঁতে পারে বা কর্পূরের মতো উবে যেতে পারে। এমনই হচ্ছে পি.আর.-এর ক্ষমতা!

 

কেরিয়ার হিসেবে কেমন?

তুমি যদি আত্মবিশ্বাসী হও, নানা ধরনের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে তুমি যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করো, আবার একই সঙ্গে তোমার মধ্যে ক্রিয়েটিভ (সৃজনশীল) এবং প্রবলেম সলভিং ক্ষমতা থাকে তা হলে এর চেয়ে যোগ্য কেরিয়ার খুঁজে পাওয়া মুশকিল! একটি সংস্থা বা সেলেবের ইমেজ বা খ্যাতিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব হবে তোমার। আবার একই সঙ্গে তাঁদের ইমেজকে সবরকম কলঙ্ক বা ‘নেগেটিভ’ পাবলিসিটি থেকে রক্ষা করার দায়িত্বটিও তোমার। এর জন্য তোমাকে নানা খবরের কাগজ, নিউজ় চ্যানেল ও বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।

 

কাজটা কী

সাধারণত পি. আর. এজেন্টদের দুই ধরনের দায়িত্ব থাকে— ব্র্যান্ড প্রোমোশন এবং ব্র্যান্ড প্রোটেকশন। ব্র্যান্ড প্রোমোশনের ক্ষেত্রে তোমাকে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিবিশেষের ইমেজ গড়ে-পিটে তুলতে হবে। আমজনতা এবং তোমার ক্লায়েন্টের মধ্যিখানে তুমি হবে মিডলম্যান। কীভাবে জনসাধারণকে তোমার ক্লায়েন্টের প্রতি আরও উৎসাহিত করা যায়, কীভাবে একটি সংস্থা বা সেলেবকে জনতার কাছে একটি রোমাঞ্চকর ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করা যায়, তার দায়িত্ব তোমার। তার জন্য তোমাকে নানারকম মিডিয়া হাউজ় বা চ্যানেলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তারা তোমার ক্লায়েন্টের ব্যাপারে যাতে ভাল-ভাল খবর লেখে, যাতে মেপেজুপে তোমার ক্লায়েন্টের সমালোচনা করে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নানাধরনের প্রেস রিলিজ়, কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে তোমার ক্লায়েন্ট যাতে প্রচারের আলোয় থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তোমার ক্লায়েন্টের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মধ্য দিয়ে তাদের ইমেজকে ‘ম্যানেজ’ করারও দায়িত্ব নিতে হবে। কোনও সেলেবের পি. আর.-এর দায়িত্ব যদি নাও, তা হলে তাকে জনসমক্ষে কীভাবে আরও বেশি ‘সমাজ-সচেতন’ হিসেবে প্রতিপন্ন করা যায়, তার দায়িত্বও তোমার। আবার একইসঙ্গে তোমার ক্লায়েন্টের সুনাম যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সে ব্যবস্থাও করতে হবে তোমায়। কোনও রকম কলঙ্ক, বির্তক থেকে রক্ষা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া, রিভিউ বা রেটিং সাইট বা বিভিন্ন মিডিয়ায় তোমার ক্লায়েন্টের ‘ইমেজ’ যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে তোমায়। কোনও সংস্থা যদি কোনওরকম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যায়, সেই সংস্থাকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করার দায়িত্বও তোমার।

 

কী স্কিল লাগবে

পি. আর.-এর কেরিয়ারে সফল হতে হলে সর্বপ্রথম দরকার উৎকৃষ্ট মানের কমিউনিকেশন স্কিল। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলামেশা করতে তুমি যত সক্ষম হবে ততই পি. আর. এজেন্ট হিসেবে তোমার সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে। এছাড়াও দরকার গবেষণা করার ক্ষমতা। তোমার ক্লায়েন্ট সংস্থা বা সেলেবটির ব্যাপারে নিঁখুত এবং বিস্তারিত গবেষণা করতে হবে। সে কোন কনজ়িউমার বা দর্শকদের এন্টারটেইন করছে, তার ইউ এস পি ( ইউনিক সেলিং পয়েন্ট) কী, সে সম্বন্ধে তোমায় অবগত থাকতে হবে, না হলে ভাল ব্র্যান্ড গ়ড়ে তুলতে পারবে না। তা ছাড়াও লাগবে ভাল লেখার ক্ষমতা। তোমার ক্লায়েন্টের জন্য প্রেস রিলিজ় তোমায় দক্ষ ভাবে লিখতে হবে, যাতে সেটা দর্শকের নজর কাড়ে।

 

দক্ষিণা কেমন

আর পাঁচটা পেশার মতোই এই পেশাতেও তোমার উপার্জন কীরকম হচ্ছে, তা নির্ভর করবে তোমার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার উপর। সাধারণত বছরে ৪-১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে পি. আর. প্রফেশনালদের দক্ষিণা। পি. আর. অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার হিসেবে অগলিভি আ্যান্ড ম্যাদার, জে, ওয়াল্টার থম্পসন, মুদ্রা কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেড-এর মতো নানা সংস্থায় কাজ পেতে পার।

 

ডিগ্রির প্রয়োজন আছে কি?

সাধারণত পি. আর. সংস্থারা যে-কোনও বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন চায়। কোনও বিষয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কাজটা যেহেতু মূলত সৃজনশীল, তাই তুমি  যদি সাহিত্য, মাস-কমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক হও, তা হলে সেটি অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ!