এত দিন ‘হাজির বিরিয়ানি’ গানের কথাকে সাধারণ শ্রোতা আর সংগীতাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা অশ্লীল ও আপত্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন। ‘দহন’ ছবির এই গানকে ঘিরে সংগীতাঙ্গনের অনেকেই নিজেদের ক্ষোভের কথা ফেসবুকের পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয় এবং চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছেও প্রকাশ করেছেন। এবার চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘গানটি সেন্সরবিহীন এবং এই গানের কথা অশ্লীল ও আপত্তিকর।’ সেন্সরবিহীন এই গান ইউটিউবে প্রদর্শনের ব্যাপারে ‘দহন’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড।
১ নভেম্বর সংগীতাঙ্গনের প্রতিনিধি হিসেবে গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, গায়কসহ সাতজনের একটি দল তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সঙ্গে দেখা করে ‘হাজির বিরিয়ানি’ গানটির ব্যাপারে অভিযোগ দেয়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে সংগীতাঙ্গনের ৭১ জন গায়ক-গায়িকা, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকারের স্বাক্ষর যুক্ত করে দেওয়া হয়। গানটিকে ছবি থেকে বাদ দেওয়ার আবেদনও জানান তাঁরা। এদিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার তিন দিনের মাথায় চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ‘দহন’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে। সেন্সর বোর্ড সচিব মোহাম্মদ আলী সরকার স্বাক্ষরিত এই চিঠি গতকাল পৌঁছে গেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজের কাছেও।
চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড সচিব মোহাম্মদ আলী সরকার আজ সোমবার দুপুরে বলেন, ‘আমাদের কাছে সংগীতাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা গানটির ব্যাপারে আপত্তির কথা জানিয়েছেন। সংগীতাঙ্গনের এসব গুণী মানুষের আবেদন আমরা আমলে নিয়েছি। গানটিতে যে ধরনের কথা আছে, তা সত্যিই আপত্তির ও অশ্লীল। ছবিটি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে এখনো জমা হয়নি। জমার পরই সেন্সর বোর্ড সদস্যরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।’
চিঠি পাওয়ার পর আবদুল আজিজ বলেন, ‘ছবি না দেখে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এমন কথা বলতে পারেন না। এটা পুরোপুরি সেন্সরবহির্ভূত আচরণ। এরপরও বলতে চাই, সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ যেহেতু আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে সেটার জবাব আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিয়ে দেব।’
আবদুল আজিজ এর আগে বলেছিলেন, এই গান তিনি সেন্সর করিয়ে আনবেন। তিনি বরাবরই দাবি করে আসছেন, সেন্সর বোর্ড সদস্যরা ছবিটি দেখার পর এই গান নিয়ে কোনো আপত্তি করবেন না। ১২ নভেম্বর নাগাদ ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
এরই মধ্যে গানটি সম্পর্কে জেনেছেন সেন্সর বোর্ডের সদস্য নাসিরউদ্দিন দিলু। তিনি বলেন, ‘ছবিটি এখনো সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা হয়নি। ছবিতে সাংঘর্ষিক কিছু পেলে কিংবা দেশের কারও অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে, এমন দৃশ্য রেখে ছবির ছাড়পত্র আমরা দিই না।’
‘হাজির বিরিয়ানি’ গানটির কথা লিখেছেন ভারতের কলকাতার প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। সংগীত পরিচালনা করেছেন এবং গেয়েছেন কলকাতার আকাশ সেন। গানটি নিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজের যুক্তি, ‘এই গানে নায়কের চরিত্র সম্পর্কে দর্শককে ধারণা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা গানটির সমালোচনা করছেন, পুরো ছবি দেখার পর করবেন না, তা আমি নিশ্চিত।’
পরিচালক রায়হান রাফি বলেছেন, ‘ছবির স্বার্থে এই গান। সংগীতাঙ্গনের বিক্ষুব্ধদের সঙ্গেও আমি একমত। গানটি আমাদেরও যে খুব ভালো লেগেছে, তা কিন্তু নয়। কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে গানটি করা। এই গানের মধ্যে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, হিসুর মতো শব্দগুলো স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। আমাদের এও বোঝা দরকার, এটি মাদক-সন্ত্রাসবিরোধী ছবি।’ পরিচালক ও প্রযোজকের এমন কথায় মোটেও একমত নন গীতিকবি, সুরকার, সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি বলেন, ‘কোনো ঘটনার ভয়াবহতা বোঝাতে গেলে সেই কাজ পর্দায় করে দেখাতে হবে, তা বিশ্বাস করি না।’
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, ভারতের গীতিকবি ও গায়ক হওয়ায় এই ধরনের গান তৈরি সম্ভব হয়েছে। বিষয়টিতে একমত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি বলেন, ‘ভারতের অনেক চলচ্চিত্রে অনেক ধরনের কথা যুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশটা ছোট, আমাদের সংস্কৃতি আলাদা। এত বছরে আমরা কখনো এ ধরনের কথা শুনিনি। গানের কথা তো মুখেই আনতে পারছি না।’
গানটি নিয়ে কষ্টের কথা শুরুতে ফেসবুকেও জানান আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি লিখেছেন, ‘এই দেশের সব দেয়ালেই ৩০ লাখ শহীদের রক্ত লেগে আছে। সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা এমন অশ্লীল কথার গানের ছাড়পত্র দিলে তাঁদের ছবি ফেসবুকে তুলে ধরা হবে। বাবা শব্দের মানে হচ্ছে ইয়াবা, বর্তমান সরকার এই মরণনেশার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এই অসামাজিক গান বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হোক।’
‘দহন’ ছবির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম ও পূজা। এই জুটির প্রথম সিনেমা ‘পোড়ামন ২’–এ বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি প্রশংসিতও হয়।