নুহাশ বললেন, ‘আমি অনেক দিক থেকে লাকি (সৌভাগ্যবান)। প্রীতমের মতো গায়ক ও অভিনয়শিল্পী পেয়েছি, সাবিলার মতো মেধাবী অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, চিত্রনাট্য ছাপিয়ে তাঁরা অভিনয়টা দুর্দান্ত করেছেন। এ কারণেই আমি লাকি। মোটেই আনলাকি নই।’
একের পর এক ঈদের নাটকের শুটিংয়ের চাপ। এই সময়ই একটা চিত্রনাট্য আসে সাবিলার কাছে। যে চিত্রনাট্যের ওপর রচনা ও পরিচালকের নামের জায়গায় নুহাশ হুমায়ূনের নাম লেখা। কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ছেলে। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহটা বেড়ে যায়। তবে সব আগ্রহ বারুদ হয়ে জ্বলে ওঠে পুরো চিত্রনাট্য পড়ার পর। সাবিলা বললেন, ‘এই স্টাইলে চিত্রনাট্য আমি কখনো পাইনি। দেখেই মুগ্ধ হই। পড়তে পড়তে আরও মুগ্ধতা বেড়ে যায়। আমি তখনই হ্যাঁ বলে দিই। আমি বুঝি, এটা আমাকে করতেই হবে।’
একই অবস্থা প্রীতমেরও। গানের মানুষ। নুহাশ যোগাযোগ করলে ধারণা করেছিলেন, গানই গাইতে হবে। কিন্তু বিধি বাম! ‘অভিনেতা’ হিসেবে মিউজিক ভিডিওতে উপস্থিতি আর গাঁটের শেষ সম্বল দুটি নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে কে জানত, তাঁকেই মাঠে নামতে হবে পুরোদস্তুর অভিনেতা হয়ে। তা-ও নুহাশের পরিচালনায়! কিন্তু ভয়টা কেটে গেছে তখনই, যখন নুহাশের সঙ্গে প্রথম কথা হয়। ৭০০ টাকা সূত্রেই নুহাশের সঙ্গে প্রীতম ও সাবিলার কথা, আলাপ, আড্ডা, মহড়া এবং অভিনয়। এখন তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ।
৭০০ টাকায় কী পাওয়া যাবে? মানে, দর্শক কেন দেখবে ৭০০ টাকা। নুহাশ একটু ভেবে নিয়ে উত্তর দেন, ‘এটা আমার এক রাত্রে লেখা চিত্রনাট্য। আমাকে যখন আইফ্লিক্স থেকে বলা হয়, তখনই লিখতে বসি। এটা প্রথম ও একমাত্র ড্রাফট। ছবির গল্পটা এমন, ৭০০ টাকা নিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে এক তরুণ। এই টাকার মধ্যেই প্রেমিকার আবদার রক্ষা করতে হবে। কীভাবে ম্যানেজ করবে সবকিছু—সেটাই দেখা যাবে ছবিতে।’
তাহলে তো কমেডি ছবি বলা যায়? নুহাশ ওপরে-নিচে মাথা নাড়েন। ‘তা বলতে পারেন। কিন্তু এটা জোর করে হাসানোর মতো না।’ পাশ থেকে প্রীতম জোর গলায় বলেন, ‘এটা দেখে মানুষ হাসবেই। এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।’ প্রীতমের সঙ্গে গ্যারান্টি দিলেন সাবিলাও। কিন্তু নুহাশ আমতা আমতা করতে থাকলেন। কে জানে নুহাশ তখন বাবা হুমায়ূন আহমেদের কোনো নির্মাণের কথা ভাবছিলেন কি না!
কেন প্রীতম ও সাবিলা?
২০১৭ সালের ঈদে প্রচারিত হয়েছিল নুহাশ হুমায়ূনের প্রথম নাটক হোটেল অ্যালবাট্রস। নুহাশের ভাষায় সেটা ছিল একটা ‘সিরিয়াস’ গল্প। মাঝে আরও দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। কাজ শেষ করেছেন ১১ জন নির্মাতার সঙ্গে অমনিবাস চলচ্চিত্র ইতি, তোমারই ঢাকার। সেখান থেকে এক ধাক্কায় ‘কমেডি’ গল্প। ‘আমি আসলে আমার প্রতিটি কাজ নিয়েই নিরীক্ষা করছি। দেখা যাক। তবে আমার আগাগোড়া স্বপ্ন চলচ্চিত্র নির্মাণ।’ বলেন নুহাশ। সেই নিরীক্ষা থেকেই কি গানের মানুষ প্রীতমকে দিয়ে অভিনয়? প্রশ্ন শুনে হাসেন তিনজনই। ততক্ষণে চা, শর্মা ও চপ চলে এসেছে। খেতে খেতে রসিকতা করেই সম্ভবত নুহাশ বলেন, ‘আমাকে এজেন্সি থেকে বলা হয় এমন একজনকে নিতে, যাকে দিয়ে গান ও অভিনয়—দুইটাই করানো যাবে। এটা প্রীতম ছাড়া আর কে করতে পারবে? বলেন!’
প্রীতম হা রে রে করে প্রতিবাদ করে হাত তোলেন। সেটা থামিয়ে দেন সাবিলা। ‘মিউজিক ভিডিওর অর্ধেক তো অভিনয়ই করো তুমি।’ দুজনের ঠোকাঠুকি জমে ওঠে। সেটা থামলে দুজন তথ্য দেন, এই ঠোকাঠুকির বন্ধুত্ব তাদের দুই বছরের। নুহাশ যোগ করেন, এই ছবিতে দর্শক সাবিলার কণ্ঠে গানও শুনতে পাবেন।