সেই পাখি , সেই ইমন

‘বোঝে না সে বোঝে না’র ‘পাখি’ আর ‘কুসুম দোলা’র ‘ইমন’। দুটি সিরিয়ালই প্রচারিত হয়েছে স্টার জলসায়। আর এই সিরিয়াল দুটি দারুণ জনপ্রিয় হয়। অল্প সময়েই বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ পরিবারের একজন হয়ে যান মধুমিতা সরকার। ‘পাখি’ হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয়তা, তেমনি ‘ইমন’ও দর্শকের দারুণ পছন্দের। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ অনেক আগেই শেষ আর গত মাসে শেষ হলো ‘কুসুম দোলা’। এখন কী করছেন মধুমিতা? জানা গেল, ‘কুসুম দোলা’র শুটিং শেষ হওয়ার পরদিনই নাকি নিজের পছন্দমতো চুল কেটেছেন। সিরিয়ালের চরিত্রের কারণে অনেক দিন নিজের মতো করে চুল কাটতে পারেননি। কাজে একটু বিরতি। এই তো সুযোগ! বললেন, ‘অনেক দিন একই রকম আছি, এবার একটু চেঞ্জ করেছি।’

এবার তিনি অন্য মধুমিতা। নিজের মতো করে ‘লুক’ বদলেছেন। জিমে যাচ্ছেন নিয়মিত। বই পড়ছেন, ফিল্ম দেখছেন। শুটিং শেষ করেই চলে যান মুম্বাইয়ে। ফিরে এসে জানালেন, একবারেই পারিবারিক কাজে সেখানে গিয়েছিলেন।

ছোট পর্দায় মধুমিতা সরকারের শুরুটা হয়েছিল ২০১১ সালে। সিরিয়ালটির নাম ‘সবিনয় নিবেদন’। প্রচারিত হয়েছিল সানন্দা টিভিতে। একই সিরিয়ালে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন সৌরভ চক্রবর্তী। কাজ করতে এসে পরিচয় হলেও মন দেওয়া-নেওয়া শুরু হয় মাস ছয়েক পর। ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই তাঁরা বিয়ে করেছেন।

মধুমিতা যখন স্কুলে ছিলেন, তখনই টুকটাক মডেলিং করেছেন। একসময় তাঁর ছবি ছাপা হয় ‘উনিশ কুড়ি’ ম্যাগাজিনে। ওই ছবি দেখে সানন্দা টিভি থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই থেকে টানা ব্যস্ততা। পড়ার জন্যও এতটুকু সময় পাননি। জানালেন, ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের শুটিংয়ের সময় একদম ছুটি পাওয়া যেত না। আর সৌরভের বিয়ে করতে খুব ইচ্ছে করছিল। শুটিংয়ের চাপের জন্য তো আর বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া যায় না! রাজি হয়ে যান মধুমিতা। শেষ পর্যন্ত রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন তাঁরা।

সৌরভ চক্রবর্তী নিজেও সিরিয়ালের জনপ্রিয় তারকা। কাজ করছেন চলচ্চিত্রে। একই ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন দুজন। মধুমিতা জানালেন, কখনো তাঁদের মধ্যে ইগো ক্ল্যাশ হয়নি। তাঁর মতে, ‘যেহেতু দুজনই একই প্রফেশনের, তাই একে অপরকে বুঝতে সুবিধা হয়।’ কাজ আর সংসার নিয়ে বললেন, ‘আমার বর খুব ভালো বোঝে, কাজ সামলে আমি কতটা সংসারকে দিতে পারব। আমি খুব লাকি যে সৌরভ আমার জীবনে রয়েছে। শ্বশুরবাড়িতে মা, বাবা, দিদি—আমাকে কখনো বুঝতেই দেয়নি আমি বউমা। ফলে আলাদা করে দুটো জায়গা মেনটেন করার কথা কখনো ভাবতে হয়নি।’

‘বোঝে না সে বোঝে না’র কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৬ সালে ‘কুসুম দোলা’। সংসার কিংবা নিজের জন্য আলাদা করে এতটুকু সময় পাননি মধুমিতা। টানা কাজ করেছেন। তবে এবার অন্য কিছু ভাবছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘এই মুহূর্তে আর মেগা সিরিয়াল করব না।’ তাহলে? মধুমিতা আর তাঁর স্বামী সৌরভের নিজস্ব প্রোডাকশন হাউস আছে। এখান থেকে বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ তৈরি হচ্ছে। এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠানে বেশি করে সময় দেবেন। আর ওয়েব সিরিজে অভিনয় করবেন। সিনেমায় কাজের ব্যাপারেও আলোচনা করছেন।

‘পাখি’ আর ‘ইমন’, দুটি চরিত্রই দারুণ জনপ্রিয়। মধুমিতার কাছে কোনটি বেশি প্রিয়? বললেন, ‘পাখিকে আমি শ্রদ্ধা করি। এত বছর পাখিকে দর্শক ভালোবেসেছেন। কিন্তু ইমন আমার নিজের। আমি ওর সঙ্গে কানেক্ট করতে পারি।’

‘ইমন’ চরিত্রটির সঙ্গে নাকি মধুমিতার যথেষ্ট মিল রয়েছে। আরও বললেন, ‘এতটা মিল আর কোনো চরিত্রের সঙ্গে আমার হয়নি। ক্যামেরা, লাইট—কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না। শুধু অন্য চরিত্রের নাম মনে রাখি। বাকি পুরোটা তো আমার নিজেরই রিঅ্যাকশন। যেভাবে বাবাকে বলি, মাকে বলি, চিত্কার করে, ঠিক সেভাবে সেটেও কথা বলছি। ফলে আলাদা কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়নি।’

‘পাখি’ আর ‘ইমন’-এর মধ্যে পার্থক্য টানতে গিয়ে বললেন, ‘তিন বছর “পাখি” হিসেবে কাজ করেছি। “পাখি” খুব ভয় পেত, কিন্তু “ইমন”-এর কোনো ভয় নেই। দুটি সিরিয়ালের মাঝে মাত্র এক-দেড় মাসের গ্যাপ পেয়েছিলাম। “ইমন” একদম অন্য রকম একটা চরিত্র। নিজে যেটা ঠিক মনে করে সেটা ঠিক, যেটা ভুল মনে করে সেটা ভুল। এমন চরিত্র কখনো করার সুযোগ পাইনি।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ‘বোঝে না সে বোঝে না’র ‘পাখি’ চরিত্রটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, ওই বছর ঈদে ‘পাখি ড্রেস’ নামে মেয়েদের নানা পোশাক বাজারে আসে। ঈদে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে না দেওয়ায় বাবার ওপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেন এক তরুণী। আবার ‘পাখি ড্রেস’ না পাওয়ায় এক নারী স্বামীর সংসার ছেড়ে যান।

২০১৬ সালে বাংলাদেশের একটি টেলিছবিতে অভিনয় করেন মধুমিতা সরকার। টেলিছবিটির নাম ‘মেঘ বালিকা’। এখানে মধুমিতা অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিমের সঙ্গে। ওই বছর ঈদের দিন দুপুরে এনটিভিতে প্রচারিত হয় টেলিছবিটি। পরিচালনা করেন পারভেজ আমিন। টেলিছবিটির শুটিং করা হয় ভারতের মানালিতে।