হার্টের সমস্যা বয়স্কদের বেশি হয় এই ধারণা এখন অচল। এখন হৃদরোগ আর বয়স মানে না। চল্লিশের পরে তো বটেই তিরিশের কোটায় এমনকি পনেরো-বিশ বছরের অল্প বয়সীদের হার্ট অ্যাটাক হতে দেখা যাচ্ছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. উজ্জ্বল কুমার রায়
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাককে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন। মায়োকার্ডিয়াল-এর অর্থ হার্ট আর ইনফ্রাকশন কথার অর্থ শরীরের কোনো পেশির রক্ত না পেয়ে শুকিয়ে যাওয়া। হার্টের ব্লকেজ মানে নির্দিষ্ট স্থানে রক্তের অভাব। এই ব্লকেজ যদি সত্তর থেকে একশো শতাংশ হয় সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় রোগীর ক্লিনিক্যাল প্রেজেন্টেশন কী রকম হবে। বুকে ব্যথার অনেক পার্থক্য আছে। একজনের কয়েক দিন বা বছর ধরেই বিস্তর বুকে ব্যথা হচ্ছে। সেটা হলো ক্রনিক অ্যানঝাইনা। আবার দেখা যায়, অন্যজনের হঠাৎই বুকে অসহ্য ব্যথা যে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। সেটা হলো অ্যাকিউট অ্যানঝাইনা, চিকিৎসা পরিভাষায় অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম। এসব রোগীর ই.সি.জি করে রোগের প্রকৃতি ও চিকিৎসার ধরন নির্ধারণ করতে হয়। ই.সি.জি রিপোর্টে যদি এসটি এলিভেটেড এসআই পাওয়া যায়, তবে বুঝতে হবে রোগীর একশ শতাংশ ব্লকেজ আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব রোগীর আর্টারি ওপেন করতে হয় বারো ঘণ্টার মধ্যেই অর্থাৎ বুকে ব্যথা শুরু হওয়া থেকে বারো ঘণ্টার ভেতরে। কারণ হার্টের পেশি একবার নষ্ট হয়ে গেলে সেটিকে পুনরুদ্ধার করা যায় না। মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন বা ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীদের অবিলম্বে প্রাইমারি অ্যান্জিওপ্লাস্টি করতে হয়। প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় স্টেমি।
অল্প বয়সীদের হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাকের বিষয়ে সচেতন হতে লক্ষণগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকতে হবে। বুকে চিনচিনে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, বমি বমি ভাব, হঠাৎ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ও শ্বাসকষ্ট—এই সবই হলো হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ। মাইল্ড অ্যাটাকের ক্ষেত্রে কিছু সময় পাওয়া গেলেও বড়সড় ধাক্কায় কিন্তু রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। হার্ট অ্যাটাকের পর প্রথম চার ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপরে সময় যত বাড়তে থাকে ততই বাড়ে ক্ষতির সম্ভাবনা।
অল্প বয়সীদের হার্ট অ্যাটাক বাড়ছে কেন
প্রশ্ন আসতে পারে, তরুণ প্রজন্ম হার্ট অ্যাটাকের শিকার কেন হচ্ছে? এক কথায় উত্তর হলো অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। নাগরিক জীবনে সাম্প্রতিক কালে কর্মব্যস্ততা ও মানসিক চাপ অনেক বেড়ে গেছে। কর্মক্ষেত্র ও পারিবারিক নানাবিধ চাপ জীবনকে প্রভাবিত করে। আরও আছে ফাস্টফুড, অ্যালকোহল ও ধূমপানের মতো বাজে অভ্যাস। বাড়ছে ওবিসিটি। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষকের পরামর্শ ছাড়াই জিম করার প্রবণতা বেড়েছে। অন্যদিকে নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ ছাড়াই ডায়েট ও বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া হচ্ছে। এসব অনিয়মের জন্য হৃদযন্ত্র বিকল হতে শুরু করছে অল্প বয়সেই।
সুস্থ থাকতে
- অতিরিক্ত ওজন থেকে ব্লাড প্রেশার, বাড়তি কোলেস্টেরলের আশঙ্কা তৈরি হয়। বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলাই ভালো। দেহের উচ্চতার অনুপাতে বডি মাস ইনডেক্স মেনে চলতে হবে।
- খাবারের ম্যানুতে ফাইবারযুক্ত ও শস্যদানা রাখুন। পর্যাপ্ত ফল, শাকসবজি খান। তবেই হার্টের অসুখকে দূরে রাখা সম্ভব।
- শরীর সচল রাখতে নিয়ম করে শরীরচর্চা প্রয়োজন। জগিং, হাঁটা-চলা ও সাঁতার কাটা দরকার। দিনে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন শরীর চর্চা করা প্রয়োজন।
- ধূমপানের অভ্যাস থাকলে অতিসত্বর ত্যাগ করা উচিত। ধূমপানের ফলে করোনারি আর্টারির রোগ হয়। ধমনিতে রক্তের চলাচলকে বাধামুক্ত রাখতে চাইলে ধূমপান ত্যাগ করাই উচিত।
লেখক : এডিটর ইন চিফ
সাপ্তাহিক তিলোত্তমা ও পাক্ষিক স্বাস্থ্যসেবা