কণ্ঠের যত্ন নেয়ার প্রয়োজন আছে
কণ্ঠস্বরজনিত কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছে বিশ্বের লাখো কোটি মানুষ। কিভাবে কণ্ঠ সুস্থ রাখা যায়, জানাচ্ছেন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
গলার সামনে স্বরযন্ত্র (ল্যারিংস) অবস্থিত। এতে দুটি কণ্ঠনালি (ভোকাল কর্ড) থাকে। এই নালি দুটির কম্পনের মাধ্যমে শব্দ তৈরি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ফুসফুস থেকে প্রবাহিত বাতাস কণ্ঠনালিতে কম্পনের সৃষ্টি করে। কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় এই কম্পন হয় প্রতি সেকেন্ডে ১০০ থেকে এক হাজারবার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দিনে ১০ লাখবার কণ্ঠনালি দুটির সংস্পর্শ হয়। কণ্ঠনালির ওপর আমরা কতটুকু নির্ভরশীল, তা এ থেকেই বোঝা যায়। তাই কণ্ঠ সুস্থ রাখা খুবই জরুরি।
কণ্ঠের যত্ন নেয়ার প্রয়োজন আছে
লক্ষণ
কণ্ঠনালির সমস্যার লক্ষণ হলো—গলা ব্যথা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয় বা দুই সপ্তাহে ভালো না হয়, তবে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে নানা কারণে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হতে পারে।
কণ্ঠনালির প্রদাহ
কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো, কণ্ঠনালির ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহ। শ্বাসনালির ভাইরাসজনিত প্রদাহে কণ্ঠনালি ফুলে যায়, এতে কণ্ঠনালির কম্পনের সমস্যা সৃষ্টি করে, ফলে স্বর পরিবর্তন হয়। আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশদূষণের কারণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ বা ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে এবং কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিলে এটা ভালো হয়ে যায়। তীব্র প্রদাহ অবস্থায় যদি কেউ জোরে কথা বলে, তাতে কণ্ঠনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কণ্ঠনালির তীব্র প্রদাহ ভাইরাসজনিত হলে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহের সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হলে বিশেষ চিকিৎসার দরকার হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস
কণ্ঠনালির ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহে ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। পাকস্থলীর এসিড রিফ্ল্যাক্সের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত গরম চা বা পানীয় পান, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।
কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার
যখন কথা বলা হয়, তখন কণ্ঠনালির সঙ্গে এর আশপাশে অবস্থিত মাংসপেশিরও সাহায্য লাগে। কণ্ঠনালি সঠিক ও নিয়মের বাইরে ব্যবহার করা, অতি উচ্চৈঃস্বরে বা অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালির প্রদাহ দেখা দিতে পারে, যা ভারী জিনিসকে ঠিকভাবে না ওঠানোর জন্য পিঠে ব্যথা হওয়ার মতো। গলা ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন এবং কথা বলার সময় ঠিকভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়, কথা বলতে কষ্ট হয়। ফলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ বা নডিউল, এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে।
কণ্ঠনালির অপব্যবহার
জনসমাবেশ, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে জোরে কথা বলা, অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলা ঠিক নয়। ঘাড় ও কানের মধ্যে ফোন চেপে ধরে কথা বলায় ঘাড় ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশিতে টান লাগে। উচ্চৈঃস্বরে বা চিৎকার করে কথা বলা, জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বললে কণ্ঠনালির ওপর বেশি চাপ পড়ে।
কম ক্ষতিকারক কণ্ঠনালির রোগ
বারবার বা দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির অপব্যবহারে যে ক্ষতি হয়, পরবর্তী সময়ে তা কণ্ঠনালির কম্পনের মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ, নডিউল বা সিস্ট হতে পারে। নডিউল সাধারণত কণ্ঠশিল্পীদের বেশি হয়। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবী, অধিক সন্তানের মা, হকারদের মধ্যে এসব রোগ হতে পারে। এর চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার, যেমন মাইক্রোল্যারিংগোস্কপি ও কণ্ঠথেরাপি।
কণ্ঠনালিতে রক্তক্ষরণ
প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করলে, অধিক শক্তি দিয়ে কথা বললে অথবা গলায় আঘাত পেলে হঠাৎ কথা বলা বন্ধ হতে পারে। কণ্ঠনালির সূক্ষ্ম রক্তনালি ছিঁড়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এ অবস্থায় কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে, যত দিন না জমাট রক্ত মিলিয়ে যায়।
কণ্ঠনালির দুর্বলতা
কণ্ঠনালির স্নায়ুর দুর্বলতা বা কোনো সমস্যার জন্য কণ্ঠনালির পরিবর্তন হতে পারে। ভাইরাসজনিত প্রদাহের জন্য স্নায়ুর দুর্বলতা হয়। সাধারণত এক দিকের স্নায়ুর প্যারালাইসিস হয়, দুই দিকের স্নায়ু একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়া খুবই বিরল। এক দিকের স্নায়ুর প্যারালাইসিসের কারণ হচ্ছে ভাইরাল ইনফেকশন, টিউমার, ক্যান্সার ও থাইরয়েড অপারেশন। কণ্ঠনালির প্যারালাইসিসের জন্য ফ্যাসফেসে আওয়াজ হয় এবং এটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। কয়েক মাসের মধ্যে এক দিকের প্যারালাইসিস ভালো হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কণ্ঠনালির প্যারালাইসিস ভালো হয় না, তখন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
কণ্ঠনালির ক্যান্সার
আমাদের দেশে গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালির ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। স্বরের পরিবর্তন ১৫ দিনের মধ্যে ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। ব্যক্তির রোগের ইতিহাস, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালির ক্যান্সারে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। কণ্ঠনালির ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। এ রোগের সব ধরনের চিকিৎসা, যেমন—সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি আমাদের দেশেই রয়েছে।
কণ্ঠ সুস্থ রাখতে করণীয় : কণ্ঠের যত্ন
♦ পানি কণ্ঠনালিকে আর্দ্র রাখে ও আর্দ্র কণ্ঠনালি শুষ্ক কণ্ঠনালি থেকে বেশি ব্যবহার করা যায়। এ জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।
♦ খেলা শুরুর আগে যেমন প্রস্তুতির দরকার, তেমনি দীর্ঘ বক্তৃতার আগেও কণ্ঠনালির হালকা ব্যায়াম করা উচিত। অনুশীলন করলে কণ্ঠের মান ও উপস্থাপনা সুন্দর হয়। কথা বলা ও গান গাওয়ার মাঝখানে দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে কথা বলা ও গান গাওয়াকে সুন্দর করে এবং কণ্ঠনালির অবসাদ হয় না। বক্তব্য বা উপস্থাপনা বা বড় সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মাইক্রোফোন ব্যবহার করা ভালো।
♦ দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত, যা কণ্ঠনালির অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। নিজের কণ্ঠকে শুনুন এবং যদি কোনো রকমের উপসর্গ থাকে বা পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাহলে যথাযথ যত্ন নিন।
♦ যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্বর পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়, তাহলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এমন কিছু করবেন না, যাতে কণ্ঠনালির ক্ষতি হয়।
♦ ধূমপান, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানীয় কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান কণ্ঠনালির কণ্ঠনালির প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ক্যান্সারেরও কারণ। তাই এগুলো বর্জন করা ভালো।
♦ জোরে জোরে বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলা উচিত নয়। উচ্চৈঃস্বরে কথা বললে বা কণ্ঠনালির অপব্যবহার করলে কণ্ঠনালি সূক্ষ্ম আঘাত পেতে পারে।
♦ দূর থেকে কাউকে ডাকতে হলে হাততালি, শিস বা হাত নেড়ে অথবা আলোর মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। খেলা উপভোগ করার সময় পছন্দের দলকে সমর্থন করার জন্য জোরে চিৎকার না করে পতাকা ওড়ান বা অন্য কোনো উপায়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করুন।
♦ এমন কিছু খাবেন না, যাতে পেটে গ্যাস হতে পারে। মাথা উঁচু করে ঘুমাবেন, হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরে ঘুমাবেন। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কণ্ঠনালিতে চাপ পড়ে, এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।
♦ মোবাইল ফোনে কথা বলতে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
♦ গাড়িতে বা ট্রেনে যাত্রার সময় কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিন। খাওয়ার সময় ফোনে কথা বলবেন না। ফোনে অতিরিক্ত কথা বললে কণ্ঠনালিতে চাপ পড়ে। উচ্চ কোলাহল বা শব্দপূর্ণ পরিবেশে মোবাইল ফোনে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এতে কণ্ঠনালির বিশ্রাম হবে। কণ্ঠনালি বা কণ্ঠস্বর সুস্থ থাকবে।
গলার সামনে স্বরযন্ত্র (ল্যারিংস) অবস্থিত। এতে দুটি কণ্ঠনালি (ভোকাল কর্ড) থাকে। এই নালি দুটির কম্পনের মাধ্যমে শব্দ তৈরি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ফুসফুস থেকে প্রবাহিত বাতাস কণ্ঠনালিতে কম্পনের সৃষ্টি করে। কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় এই কম্পন হয় প্রতি সেকেন্ডে ১০০ থেকে এক হাজারবার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দিনে ১০ লাখবার কণ্ঠনালি দুটির সংস্পর্শ হয়। কণ্ঠনালির ওপর আমরা কতটুকু নির্ভরশীল, তা এ থেকেই বোঝা যায়। তাই কণ্ঠ সুস্থ রাখা খুবই জরুরি।
কণ্ঠের যত্ন নেয়ার প্রয়োজন আছে
লক্ষণ
কণ্ঠনালির সমস্যার লক্ষণ হলো—গলা ব্যথা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয় বা দুই সপ্তাহে ভালো না হয়, তবে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে নানা কারণে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হতে পারে।
কণ্ঠনালির প্রদাহ
কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো, কণ্ঠনালির ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহ। শ্বাসনালির ভাইরাসজনিত প্রদাহে কণ্ঠনালি ফুলে যায়, এতে কণ্ঠনালির কম্পনের সমস্যা সৃষ্টি করে, ফলে স্বর পরিবর্তন হয়। আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশদূষণের কারণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ বা ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে এবং কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিলে এটা ভালো হয়ে যায়। তীব্র প্রদাহ অবস্থায় যদি কেউ জোরে কথা বলে, তাতে কণ্ঠনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কণ্ঠনালির তীব্র প্রদাহ ভাইরাসজনিত হলে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহের সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হলে বিশেষ চিকিৎসার দরকার হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস
কণ্ঠনালির ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহে ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। পাকস্থলীর এসিড রিফ্ল্যাক্সের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত গরম চা বা পানীয় পান, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।
কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার
যখন কথা বলা হয়, তখন কণ্ঠনালির সঙ্গে এর আশপাশে অবস্থিত মাংসপেশিরও সাহায্য লাগে। কণ্ঠনালি সঠিক ও নিয়মের বাইরে ব্যবহার করা, অতি উচ্চৈঃস্বরে বা অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালির প্রদাহ দেখা দিতে পারে, যা ভারী জিনিসকে ঠিকভাবে না ওঠানোর জন্য পিঠে ব্যথা হওয়ার মতো। গলা ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন এবং কথা বলার সময় ঠিকভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়, কথা বলতে কষ্ট হয়। ফলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ বা নডিউল, এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে।
কণ্ঠনালির অপব্যবহার
জনসমাবেশ, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে জোরে কথা বলা, অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলা ঠিক নয়। ঘাড় ও কানের মধ্যে ফোন চেপে ধরে কথা বলায় ঘাড় ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশিতে টান লাগে। উচ্চৈঃস্বরে বা চিৎকার করে কথা বলা, জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বললে কণ্ঠনালির ওপর বেশি চাপ পড়ে।
কম ক্ষতিকারক কণ্ঠনালির রোগ
বারবার বা দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির অপব্যবহারে যে ক্ষতি হয়, পরবর্তী সময়ে তা কণ্ঠনালির কম্পনের মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ, নডিউল বা সিস্ট হতে পারে। নডিউল সাধারণত কণ্ঠশিল্পীদের বেশি হয়। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবী, অধিক সন্তানের মা, হকারদের মধ্যে এসব রোগ হতে পারে। এর চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার, যেমন মাইক্রোল্যারিংগোস্কপি ও কণ্ঠথেরাপি।
কণ্ঠনালিতে রক্তক্ষরণ
প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করলে, অধিক শক্তি দিয়ে কথা বললে অথবা গলায় আঘাত পেলে হঠাৎ কথা বলা বন্ধ হতে পারে। কণ্ঠনালির সূক্ষ্ম রক্তনালি ছিঁড়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এ অবস্থায় কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে, যত দিন না জমাট রক্ত মিলিয়ে যায়।
কণ্ঠনালির দুর্বলতা
কণ্ঠনালির স্নায়ুর দুর্বলতা বা কোনো সমস্যার জন্য কণ্ঠনালির পরিবর্তন হতে পারে। ভাইরাসজনিত প্রদাহের জন্য স্নায়ুর দুর্বলতা হয়। সাধারণত এক দিকের স্নায়ুর প্যারালাইসিস হয়, দুই দিকের স্নায়ু একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়া খুবই বিরল। এক দিকের স্নায়ুর প্যারালাইসিসের কারণ হচ্ছে ভাইরাল ইনফেকশন, টিউমার, ক্যান্সার ও থাইরয়েড অপারেশন। কণ্ঠনালির প্যারালাইসিসের জন্য ফ্যাসফেসে আওয়াজ হয় এবং এটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। কয়েক মাসের মধ্যে এক দিকের প্যারালাইসিস ভালো হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কণ্ঠনালির প্যারালাইসিস ভালো হয় না, তখন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
কণ্ঠনালির ক্যান্সার
আমাদের দেশে গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালির ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। স্বরের পরিবর্তন ১৫ দিনের মধ্যে ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। ব্যক্তির রোগের ইতিহাস, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালির ক্যান্সারে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। কণ্ঠনালির ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। এ রোগের সব ধরনের চিকিৎসা, যেমন—সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি আমাদের দেশেই রয়েছে।
কণ্ঠ সুস্থ রাখতে করণীয় : কণ্ঠের যত্ন
♦ পানি কণ্ঠনালিকে আর্দ্র রাখে ও আর্দ্র কণ্ঠনালি শুষ্ক কণ্ঠনালি থেকে বেশি ব্যবহার করা যায়। এ জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।
♦ খেলা শুরুর আগে যেমন প্রস্তুতির দরকার, তেমনি দীর্ঘ বক্তৃতার আগেও কণ্ঠনালির হালকা ব্যায়াম করা উচিত। অনুশীলন করলে কণ্ঠের মান ও উপস্থাপনা সুন্দর হয়। কথা বলা ও গান গাওয়ার মাঝখানে দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে কথা বলা ও গান গাওয়াকে সুন্দর করে এবং কণ্ঠনালির অবসাদ হয় না। বক্তব্য বা উপস্থাপনা বা বড় সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মাইক্রোফোন ব্যবহার করা ভালো।
♦ দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত, যা কণ্ঠনালির অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। নিজের কণ্ঠকে শুনুন এবং যদি কোনো রকমের উপসর্গ থাকে বা পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাহলে যথাযথ যত্ন নিন।
♦ যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্বর পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়, তাহলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এমন কিছু করবেন না, যাতে কণ্ঠনালির ক্ষতি হয়।
♦ ধূমপান, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানীয় কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান কণ্ঠনালির কণ্ঠনালির প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ক্যান্সারেরও কারণ। তাই এগুলো বর্জন করা ভালো।
♦ জোরে জোরে বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলা উচিত নয়। উচ্চৈঃস্বরে কথা বললে বা কণ্ঠনালির অপব্যবহার করলে কণ্ঠনালি সূক্ষ্ম আঘাত পেতে পারে।
♦ দূর থেকে কাউকে ডাকতে হলে হাততালি, শিস বা হাত নেড়ে অথবা আলোর মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। খেলা উপভোগ করার সময় পছন্দের দলকে সমর্থন করার জন্য জোরে চিৎকার না করে পতাকা ওড়ান বা অন্য কোনো উপায়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করুন।
♦ এমন কিছু খাবেন না, যাতে পেটে গ্যাস হতে পারে। মাথা উঁচু করে ঘুমাবেন, হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরে ঘুমাবেন। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কণ্ঠনালিতে চাপ পড়ে, এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।
♦ মোবাইল ফোনে কথা বলতে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
♦ গাড়িতে বা ট্রেনে যাত্রার সময় কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিন। খাওয়ার সময় ফোনে কথা বলবেন না। ফোনে অতিরিক্ত কথা বললে কণ্ঠনালিতে চাপ পড়ে। উচ্চ কোলাহল বা শব্দপূর্ণ পরিবেশে মোবাইল ফোনে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এতে কণ্ঠনালির বিশ্রাম হবে। কণ্ঠনালি বা কণ্ঠস্বর সুস্থ থাকবে।