কিডনির রোগ কেন হয়
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এবং নেফ্রাইটিস (কিডনির বিভিন্ন সমস্যা)—এই তিন রোগের কারণে ৮০ ভাগ লোকের কিডনি রোগ হয়। জন্মগত কিছু সমস্যার কারণেও কিডনি রোগ হতে পারে। একজন সুস্থ মানুষেরও হঠাৎ প্রচণ্ড বমি বা পাতলা পায়খানার সময়ে প্রয়োজনীয় পানি ও স্যালাইন না খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রায়ই যারা ব্যথার ওষুধ সেবন করেন, তাদেরও কিডনির সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণের কারণেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কিডনির রোগের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিডনির কার্যক্রম ক্ষমতা কমতে থাকলে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। কিডনি রোগের সাধারণত লক্ষণের মধ্যে রয়েছে— প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, কোমরের দুপাশে ও তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর-মুখ ফোলা ইত্যাদি। এ ছাড়া ক্ষুধামান্দ্য, ওজন হ্রাস পাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত, প্রচন্ড ক্লান্তিভাব ইত্যাদি লক্ষণ ক্রনিক কিডনি ডিজিসের শেষ পর্যায়ে প্রকাশ পেতে শুরু করে।
সুস্থদের জন্য পরামর্শ
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবনযাপন, স্থূলতা, ধূমপান ও ভেজাল খাদ্য কিডনি রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ জানেই না তারা কিডনি রোগে আক্রান্ত। কারণ, কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়ার আগে তার লক্ষণগুলো অতটা প্রকাশ পায় না। কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে প্রাথমিক অবস্থায় একটু সচেতন হলে কিডনি রোগ রোধ করা সম্ভব। কঠিন এই রোগ প্রতিরোধের সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে—
কিডনি ভালো রাখতে পর্যাপ্ত ও নিরাপদ পানি খেতে হবে। দিনে ১০-১২ গ্লাস পানি ও পানীয় পান করা জরুরি। বিভিন্ন অসুস্থতা যেমন, জ্বর, ডায়রিয়া, বমি হলে বেশি করে পানি, স্যালাইন এবং অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের পর গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মায়ের পানির চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে সুষম খাদ্যাভ্যাস সবচেয়ে জরুরি। যে কোনো পুষ্টি উপাদান বেশিও গ্রহণ করা যাবে না, আবার কমও নয়। একজন সুস্থ, পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম। অর্থাৎ, ওজন ৬০ কেজি দিনে ৬০ গ্রাম মাছ অথবা মাংস খাওয়া যাবে।
চিনি ছাড়া বা কম চিনি দেওয়া খাবার গ্রহণ করুন। পরিশোধিত (রিফাইনড) খাবার এড়িয়ে চলুন। গোটা শস্যের বা হোল গ্রেইন খাদ্যশস্য বেছে নিন। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খান।
সুস্থ থাকতে বিকল্প নেই শরীরচর্চার। নিয়মিত অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটার পাশাপাশি কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে।
কিডনি সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই রক্তচাপ ও রক্তের সুগার সুনিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। বয়স ৪০ হলে নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্তের সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রস্রাব পরীক্ষাও করাতে হবে।
ধূমপান ও মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করা যাবে না। ৪০ বছর বয়সের পর কিডনির কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। এ বয়সে ব্যথার ওষুধ যতটা সম্ভব কম সেবন করবেন।
কিডনি রোগীর জন্য পরামর্শ
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। রোগের শুরু থেকে সচেতনভাবে জীবনযাপন করলে কিডনি সমস্যা জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এমনকি কিডনির রোগ নিয়েই আজীবন সুস্থ থাকা যায়। এজন্য খাবার-দাবারের বেলায় কিডনি রোগীকে অধিক সচেতন হতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যায় চিকিৎসক রোগীর পানি, লবণ এবং আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত কিছু ফল কম পরিমাণে খেতে বলা হয়।
কারও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে লাল মাংস, কলিজা, মগজ, সামুদ্রিক মাছ প্রভৃতি খাবার খেতে নিষেধাজ্ঞা থাকে। মোটকথা, কিডনির সমস্যার ধরন অনুযায়ী আপনার জন্য যে খাদ্যতালিকা নির্ধারিত, সেটি মেনে চলুন। সবারই যে সব ধরনের খাদ্য নিষেধ, তাও কিন্তু নয়। নিয়মিত হাঁটুন এবং সাধারণ শরীরচর্চা করুন। সর্বোপরি চিকিৎসকের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চলুন।