শুধু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বাজারই বাংলাদেশে বছরে ১০,০০০–২০,০০০ কোটি টাকা।
এর বড় কারণ হলো রিফাইন্ড ভোজ্যতেল, যা নামি কোম্পানিগুলো সলভেন্ট এক্সট্রাকশন পদ্ধতিতে তৈরি করে।
এই পদ্ধতিতে তেলবীজকে গুঁড়ো করে স্টিম কুকড করা হয়,
তারপর পেট্রোলিয়াম দ্রাবক (যেমন: হেক্সেন) দিয়ে তেল বের করা হয়।
হেক্সেন সস্তা ও সহজলভ্য বলে বেশি ব্যবহার হয়।
এই দ্রাবকগুলো তেলবীজ থেকে প্রায় ৯৯% তেল বের করতে পারে, যা কোম্পানির জন্য লাভজনক।
এই তেল সরাসরি খাওয়ার উপযোগী নয়, তাই তাকে রিফাইন, ডাবল রিফাইন, ব্লিচ, ডিওডোরাইজ করে বাজারে বিক্রি করা হয়।
রিফাইন শব্দটি শুনতে ভালো লাগলেও, আসলে এটি অখাদ্য ও বিষাক্ত তেলকে সুন্দর করে তোলার প্রক্রিয়া।
এতে তেলের প্রাকৃতিক রঙ, গন্ধ, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সব নষ্ট হয়ে যায়।
নিউট্রালাইজেশন, ব্লিচিং, ডিওডোরাইজেশন করে তেলের গন্ধ, রঙ, ভিটামিন বাদ দেওয়া হয়।
এই প্রক্রিয়ায় তেল শুধু দেখতে সুন্দর হয়, কিন্তু পুষ্টিগুণ থাকে না।
এতে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়, যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ইনফ্লামেশন বাড়ায়।
হেক্সেনের অবশিষ্টাংশ শরীরে থেকে যায়, যা ক্ষতিকর।
এই রিফাইন্ড তেল আমাদের পাকস্থলীর প্রাচীর নষ্ট করে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, এসিড রিফ্ল্যাক্স ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফ্যাট-সল্যুবল ভিটামিন (A, E, K) নষ্ট হয়ে যায়।
ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধকারী উপাদান থাকে না।
শরীরে শুধু খালি ক্যালোরি যায়, যা বিষের মতো।
এই তেল খেয়ে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, আর কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে।
এর বিকল্প হলো ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘানি ও এক্সপেলার মেশিনে তৈরি তেল।
এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক ব্যবহার হয় না, তেলের রঙ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণ অক্ষত থাকে।
ঘানিতে কোনো উত্তাপ বা রাসায়নিক ছাড়া চাপ দিয়ে তেল বের করা হয়।
এতে ৬০–৬৫% তেল পাওয়া যায়, বাকি অংশ খৈল হিসেবে পশুখাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
হট প্রেসিং করে তেলবীজ হালকা গরম করে চাপ দিয়ে তেল বের করা হয়। এতে ৭৫–৮০% তেল পাওয়া যায়, কিছু পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।
সলভেন্ট এক্সট্রাকশন পদ্ধতিতে ৯৯% তেল পাওয়া গেলেও তা বিষাক্ত।
ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে কম তেল পাওয়া যায়, কিন্তু তা স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু এবং নিরাপদ।
পাশাপাশি খৈল থেকে ভালো দুধ, মাংস ও প্রাকৃতিক সার পাওয়া যায়।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তেল ব্যবহার করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং স্থানীয় অর্থনীতি সচল হয়।
তাই সচেতন মানুষদের উচিত রিফাইন্ড তেল বর্জন করে ঘানি বা এক্সপেলার তেল ব্যবহার করা।