মন চাইছে দূরের কোনো দারুণ এক জায়গা থেকে ঘুরে আসতে কিন্তু আবার ভয়ও পাচ্ছেন আপনি গর্ভবতী বলে? আপনি কি মাতৃত্বে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেওয়ার আগে সব ভাবনাচিন্তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে একটা দারুণ ছুটি কাটাতে চাইছেন? সফরকালে ডাক্তারের পরামর্শ ঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার ভাবনাচিন্তার কোনো কারণই নেই। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি চাইলেই আপনার মনোমতো কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। কী সেই সতর্কতাগুলো? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
কখন সফরে বেরোবেন?
ডাক্তাররা বলেন গর্ভাবস্থায় কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসার জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে চার থেকে ছয় মাসের সময়। শুরুর এবং শেষের তিন মাসে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে থাকেন তারা। এ সময় ভ্রমণ করলে সেক্ষেত্রে মিসক্যারেজের ঝুঁকি থেকে যায় বলেও জানান তারা।
সফরকালীন সতর্কতা
প্রতিটি গর্ভধারণেরই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকে। কিন্তু লম্বা সময় নিয়ে ভ্রমণের সময় আপনার অনাগত সন্তানের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে কিছু মৌলিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রথম যে ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিত তা হলো, মূত্রত্যাগ করতে দেরি করবেন না অন্যথায় তা আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মূত্রত্যাগের ভয়ে পানি পান করা বন্ধ করবেন না, নাহয় এর কারণে মাথাব্যথা কিংবা বমি হতে পারে।
ডাক্তারদের মতে, লম্বা দূরত্বের ভ্রমণে এছাড়াও রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই, বিমান যাত্রার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং নিয়মিত বিরতিতে আশপাশে কিছুটা হাঁটাচলা করারও সাধারণ পরামর্শটা তারা দিয়ে থাকেন। অন্যথায় পানিশূন্য হয়ে পড়ারও ভয় থেকে যায়।
অনেক এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সহকারী নিযুক্ত রাখেন, যদি না থাকে, তাহলে নিজের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হোন।
সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি
ডাক্তারদের মতে, একটা লম্বা সময় ধরে একই রকমের অবস্থান নিয়ে বসে থাকা রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করতে পারে। যার ফলে পেডাল এডেমা হতে পারে, যা হলে আপনার পা এবং গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। আর তাই, যদি গাড়িতে ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করুন, নিয়মিত বিরতিতে গাড়ি থামান এবং একটু স্ট্রেচ করে গোড়ালির জড়তা দূর করুন এবং হাঁটাচলা করুন। গাড়ির বায়ু চলাচলের দিকে খেয়াল রাখুন। সিটবেল্ট বাঁধার সময় খেয়াল রাখুন যেন তা আপনার পেট বরাবর না হয়ে যায়, অন্যথায় তা আপনার গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন সবার আগে
ভ্রমণে বেরোবার আগে অবশ্যই আপনার গাইনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। তার কাছ থেকে গ্রিন সিগনাল পেলে তবেই ভ্রমণে বের হোন। জরুরি মুহূর্তে মেডিক্যাল স্টোরে দৌড়ঝাঁপ ঠেকাতে ডাক্তারের পরামর্শমত কিছু জরুরি ওষুধপাতিও লাগেজে রাখতে পারেন।
ডাক্তাররা বলেন, অনেক মহিলাই গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি এবং মাথা ঘোরানোর ব্যাপারে অভিযোগ আনেন। এর জন্য দায়ী পুষ্টিহীনতাই। তাই ভ্রমণের সময় এমন পরিস্থিতি এড়াতে নিয়মিত পানি পান করুন এবং উচ্চপুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করুন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
আপনি যত উঁচুমানের হোটেলেই থাকতে যান না কেন, টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। কেননা, দেখতে পরিষ্কার হলেও তা ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায়। এই যেমন অনেক সময়-হাই কমোড ব্যবহারের ফলে ইনফেকশনের ভয় থেকেই যায়।
সাগরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে
পানিপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আগে থেকে জাহাজের মেডিক্যাল ক্রু সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন যদি ‘সি সিকনেসে’ আক্রান্ত হন তাহলে কি করবেন। এর প্রতিকারে ডাক্তার আপনাকে কিছু ওষুধ লিখে দিতে পারেন।
জলপথে ভ্রমণের সময় নরভাইরাস আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এর ফলে আপনার মারাত্মক বমি হতে পারে যা অনেকদিন ধরেই থাকতে পারে। নরভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। যদি আক্রমণ করেই ফেলে তাহলে অতিসত্বর ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
বিমানভ্রমণের ক্ষেত্রে
আকাশপথে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে নন প্রেশারাইজড প্লেন পরিহার করুন, কেননা এসব বিমানের বাতাসে অক্সিজেনের স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। যা আপনার অনাগত সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কিছু কিছু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ সময় ভ্রমণের জন্য ডাক্তারের গ্রিন সিগনাল সংবলিত চিঠি চায়। এটা কর্তৃপক্ষভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই টিকিট কেনার আগে এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
সবশেষে, নিজের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখুন। সতর্কতার জন্য ডাক্তারের দেয়া সব পরামর্শ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেনে চলুন। গর্ভধারণকে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার বলেই মনে করে দুশ্চিন্তাকে দূরে রাখুন এবং দারুণ এক ছুটি কাটিয়ে আসুন।