নিদ্রাহীনতা দূর করার উপায়

নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়ার সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত ঘুম নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তারা প্রায় মাঝরাতে জেগে ওঠেন এবং নিদ্রাহীন অবস্থায় বাকি রাত কাটিয়ে দেন। কারণ ঘুম ভাঙ্গার পর তাদের আর ঘুম আসে না।

দীর্ঘদিন থেকে যারা অনিদ্রায় ভুগছেন এবং ক্রমাগত ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ মানুষই একে খুব একটা আমলে নেন না যা পরবর্তী সময় গুরুত্বপুর্ণ সমস্যার কারণ হতে পারে।

নিদ্রাহীনতার কারণ:

বিভিন্ন কারণে এই নিদ্রাহীনতার সমস্যা হতে পারে। কখনো কখনো নিদ্রাহীনতা হয় সাময়িক, কখনো আবার বহুদিন এটি নিয়ে ভুগতে হয়। নিদ্রাহীনতার কারণ ব্যক্তিভেদেও ভিন্ন হতে পারে। তবে আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে নিদ্রাহীনতার সমস্যা আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে।

নিদ্রাহীনতার সমস্যায় সবচেয়ে বেশি পড়েন তরুণ-তরুণীরা। সাধারণত বিভিন্ন রকমের দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা ও ভয় থেকে এর শুরু। এছাড়া খাবারে অনিয়ম, অতিরিক্ত সময় ধরে টিভি দেখা, কম্পিউটারের পর্দার সামনে বসে থাকা, শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা থেকেও নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। আবার সারাদিনের মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম, মনোযোগের সমস্যা, ঘুমানোর স্থান পরিবর্তন এসব কিছুর উপর ভিত্তি করেও নিদ্রাহীনতার সমস্যা হয়।

চীনের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ লি বলেন, নিদ্রাহীনতা কর্মক্ষমতা হ্রাস করাসহ বিভিন্ন মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি করতে পারে। নিদ্রাহীনতা আমাদের শরীরের যে ক্ষতি সাধন করে তা থেকে সবাই ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছে যে, প্রথমত ঘুম ভালো না হলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। এ থেকে নানা ব্যাধি সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক সংক্রান্ত ব্যাধি এবং ডায়বেটিস রোগ সৃষ্টি করে এটি।

তিনি আরো বলেন, ঘুম পর্যাপ্ত কিনা তা সময়ের দ্বারা নির্ণয় করা উচিত নয়। ভালো ঘুম বলতে গেলে ঘুমের সময় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সময়ের তুলনায় ঘুমর গভীরতা কেমন হলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের ঘুমের সময় কম হলেও গভীর হওয়ায় পরদিন তীক্ষ্ণ বোধশক্তিসম্পন্ন ও ফুরফুরে মনে হয়। সুতরাং সময়ের দ্বারা নয়, দ্বিতীয় দিনের মানসিক অবস্থা ও কর্মক্ষমতার দ্বারা নিদ্রাহীনতা নির্ণয় করা উচিত।

প্রতিকারের উপায়:

ঘুম আসছে না বা ঘুম নেই? তার জন্য আলাদা করে চিন্তার কিছু নেই। এমন উদাসীনতায় চলতে থাকা সময়টা যে শরীর ও মনের উপর কতটা বিরূপ প্রভাব ডেকে আনে তা হয়তো অনেকটা অগোচরেই থেকে যায়। আরেকটি আত্মঘাতী ভুল হলো চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঘুমের ওষুধ খাওয়া। তাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো নিদ্রাহীনতার সমস্যা যাতে আপনাকে স্পর্শ করতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া।

যেভাবে দূর করবেন:

খাদ্যাভাস সঠিক রাখা নিদ্রাহীনতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খুব বেশি তেল-মশলা জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করুন।

প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। এটা প্রতিদিন সন্ধ্যা বা পড়ন্ত বিকালে করতে পারেন। রাতের খাবারের পর ঘুমানোর আগে কিছুটা বিরতি নিন। বই পড়ুন অথবা হালকা হাঁটাচলা করুন।

শোবার ঘরের পরিবেশ অন্ধকার করলে তা ঘুম আসার জন্য সহায়ক হয়। তবে ব্যক্তিভেদে তা ভিন্ন হতে পারে। তারপরও নিদ্রাহীনতার সমস্যা পুরোপুরি না কাটলে যা করতে পারেন-

নিজের ব্যক্তিগত কোনো ধ্যান নিয়ে ভাবুন অথবা যে কোনো কিছু মনে রাখার বা শেখার চেষ্টা করুন। এতে করে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে আলস্য ভর করবে এবং তা ঘুম আসতে সহায়ক হবে। মেডিটেশন বা ইয়োগা অনিদ্রার সমস্যার কার্যকরী সমাধান হতে পারে।

ঘুম না এলে বিছানায় এপাশ ওপাশ না করে কাজে লেগে যান। যেমন বই পড়া কিংবা কাপড় গোছানো। এতে করে মস্তিষ্কের আলস্য বৃদ্ধি পাবে এবং দ্রুত ঘুম আসবে।

অনিদ্রার সমস্যা বেশি হলে চা, কফি ও ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এবং খাদ্যদ্রব্য পরিহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে সিগারেট ছেড়ে দেয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা অনিদ্রার সময়ে সিগারেট খাবেন না।

সর্বশেষ সমাধান না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে না জেনে, না বুঝে ভুল ঘুমের ওষুধ কখনোই সেবন করবেন না।

গর্ভকালীন সময়ে নিদ্রাহীনতা দূর করার প্রয়োজনীয় কিছু টিপস

 

নিদ্রাহীনতা