পরিমাণ মত পানি পান না করলে যে ক্ষতিগুলো হয়

পরিমাণ মত পানি পান না করলে যে ক্ষতিগুলো হয়

বেঁচে থাকার জন্য খাবার খাওয়া জরুরি ঠিকই। কিন্তু পানি ছাড়া এক মুহূর্তও শ্বাস নেওয়া সম্ভব নয়। পানি আপনার দীর্ঘকাল সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে।

সম্প্রতি হওয়া একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খেলে শরীরের ভেতরে নানা নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে একাধিক অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে।একজন প্রাপ্ত বয়স্কের শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশই পানি দিয়ে তৈরি। তাই তো দেহের ভেতরে পানির ঘাটতি দেখা দেওয়া অর্থ হল ব্রেন, লাং, পেশী এবং স্কিনের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকা। আর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গগুলি ঠিক মতো কাজ করতে না পারলে যে স্বাভাবিকভাবেই শরীর ভাঙতে শুরু করে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। তবে পানি আরও নানভাবে শরীরের দেখভালে কাজে আসে। যেমন ধরুন, দেহের ভেতরে তাপমাত্র স্বাভাবিক রাখতে, শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে পুষ্টিকর উপাদান পৌঁছে দিতে, শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে, স্যালাইভার উৎপাদন বাড়াতে, জয়েন্টের সচলতা বজায় রাখতে এবং দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে সুরক্ষা প্রদানে সাহায্য করে থাকে। তাই তো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাটা জরুরি। খাবারের মাধ্যমেও জলীয় উপাদান শরীরে প্রবেশ করে, যা পানির ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে থাকে। শুধু তাই নয়, ফল, চা, কফি, দুধ, জুস প্রভৃতির মাধ্যমেও কিন্তু পানির ঘাটতি দূর হয়। তাই এই সব দিকগুলো বিচার করে তবে দৈনিক পানি পানের হিসেব নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে মহিলাদের প্রতিদিন ২.৭-৩ লিটার এবং পুরুষদের ৩.৭-৪ লিটার পানি পান জরুরি।

. এনার্জির ঘাটতি দূর করে:

শরীরকে চনমনে রাখতে পানির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে আমাদের মস্তিষ্কের সিংহভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি। তাই তো পানির ঘাটতি দেখা দিলে ব্রেন অ্যাকটিভিটি কমতে শুরু করে। ফলে শরীরেরও সচলতা কমতে থাকে। প্রসঙ্গত, পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়তে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি এবং মনযোগ ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে। সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়তে শুরু করে। আর একবার মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করা শুরু করে দিলে স্বাভাবিকভাবেই এনার্জির ঘাটতিও দূর হয়।

 

. ওজন হ্রাস পায়:

শুনতে আজব লাগলেও একথা ঠিক যে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পানির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া শুরু করলে ফ্যাটের বাই প্রোডাক্টরা দেহ থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ক্ষিদেও কমে যায়। আর কম মাত্রায় খেলে শরীরে ক্যালরির প্রবেশের মাত্রাও কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে।  দেহে পানি ঘাটতি কমতে থাকলে মেটাবলিজম রেটও বাড়ে। ফলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

 

. শরীর বিষ মুক্ত হয়:

সারা দিন ধরে নানাভাবে টক্সিক উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে শুরু করে, যা ঠিক সময়ে শরীর থেকে বেরিয়ে না গেলে ভাইটাল অর্গ্যানদের উপর খারাপ প্রভাব পরে। সেই সঙ্গে ক্যান্সারের মতো রোগ শরীরে বাসা বাঁধার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই এই বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরি? এখন প্রশ্ন হল শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করা যায় কিভাবে? এক্ষেত্রেও পানি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে ঠিক ঠিক মাপে পানি খেলে প্রস্রাব এবং ঘামের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। আর এমনটা হওয়া মাত্র শরীর খারাপ হাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ক্যান্সার কোষের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

 

.ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে:

শরীরে পানির ঘাটতি দূর হলে ত্বকের ভেতরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্কিন তার হারিয়ে যাওয়া আদ্রতাও ফিরে পায়। ফলে বলিরেখা যেমন কমে, তেমনি ত্বকের উপর বয়সের ছাপও পরতে পারে না।

 

. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে:

একাধিক গবেষণায় দেখায় গেছে নিয়মিত ৩-৪ লিটার পানিপান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে রোগ ভোগের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। তাই সুস্থভাবে বাঁচতে থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে ভুলবেন না যেন!

টিপসফিটনেসস্বাস্থ্য