শিশুর মাতৃগর্ভে আসার পর থেকেই তাঁকে ঘিরে অভিভাবকদের নানা পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায়। মা ও শিশুর যত্নের প্রাথমিক পাঠও শুরু হয় তখন থেকেই। সাধারণত, প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে মাতৃগর্ভে প্রায় ৮ থেকে ৯ সপ্তাহ পর থেকেই গর্ভে শিশুর উপস্থিতি টের পান হবু মায়েরা। এই সময় শিশু কখনও সখনও লাথি মারে মায়ের পেটে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কাবেরী বরাটের মতে, প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে তা ৯ সপ্তাহ হলেও দ্বিতীয় বা পরবর্তী সন্তানদের ক্ষেত্রে ১৩ থেকে ১৪ সপ্তাহ পর মা শিশুর এই লাথিটা টের পান।
বরং নয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শিশুর উপস্থিতি টের না পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মত চিকিৎসকের। কিন্তু জানেন কি গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন কখন শিশু লাথি মারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, গর্ভাববস্থায় লাথি মারার অর্থ শিশুর সামগ্রিক বিকাশ এককথায় ঠিক আছে। তার মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পথও প্রশস্থ রয়েছে। তবে শিশু মোটেই শখ করে এই লাথিটুকু মারে না। বরং কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণেই সে গর্ভাশয়ে পা ছোড়ে। কেন শিশু এমন আচরণ করে জানেন?
মা ভারী খাবার গ্রহণের পর মায়ের শরীরের বিপাক হার ধীরে হতে থাকে। এই সময় মায়ের শরীর থেকেই শিশু তার খাদ্যরস গ্রহণ করে। খাবার গ্রহণের সঙ্গে শিশুর শরীরও পুষ্টিলাভ করে ও তার কোষগুলিকে উদ্দীপ্ত করে। তখন হাতপা ছেড়ে শিশু।
হবু মা খুব গরম কোনও জায়গা থেকে হঠাৎ ঠান্ডা কোনও স্থানে গেলে, এসি ঘরে প্রবেশ করলে বা সেখান থেকে বেরোলে, আবহাওয়ার এই হঠাৎ পরিবর্তন প্রভাব ফলে শিশুর সেন্সরি অর্গানে। তাই আবহাওয়ায় বড়সড় বদল আনা কোনও ভৌগোলিক পরিবর্তন, বা আবহাওয়ার পরিবর্তন করলে শিশু হাত-পা ছুড়ে জানান দেয়।
সাধারণত আমরা বাম পাশ ফিরে শুলে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই দিক ফিরে শুলে হবু মায়ের শরীরে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি ভাল হওয়ায় শিশুর শরীরেও অক্সিজেন বেশি পৌঁছয়। তাই সে নড়াচড়া করার শক্তি পায়। তেমন সময়ও সে হাত-পা ছুঁড়ে তার উপস্থিতি জানান দেয়।
কোনও কারণে হবু মা উত্তেজিত হয়ে পড়লে, হাসি-কান্নায় অংশ নিলে কিংবা হঠাৎ ভয় পেলে তাঁর শরীরে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বেড়ে যায়। গর্ভস্থ শিশুর উপরও তার প্রভাব পড়ে। শিশুর সেন্সরি অর্গানে সেই উত্তেজনার রেশ পৌঁছলে সেও উত্তেজিত হয় ও পা ছোড়ে।