এক বুক আতঙ্ক নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে মেয়েটি। চোখ মেলে দেখে তার গোলাপি জামা, সাদা বিছানার চাদর, কাঁথা রক্তে লাল হয়ে গেছে। প্রতিবার মাসিকের সময় তার এভাবেই অতিরিক্ত রক্তপাত হয়। এই রক্তপাত কি স্বাভাবিক?
প্রচণ্ড অস্থিরতা! কেউ একজন ছুড়ি হাতে তাড়া করছে মেয়েটিকে। মেয়েটি দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না; হাত পা অবশ হয়ে এসেছে তার। হঠাৎ দেখলো, কেউ একজন তার পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছে; রক্তে ভেসে গেছে তার শরীর…………
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত কী?
মাসিক চলাকালীন সময়ে অধিক রক্তপাত হলে তাকে মেনোরেজিয়া (Menorrhagia) বলে। মেনোপজের পূর্বাবস্থায় সাধারণত এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, তবে বেশীর ভাগ মহিলাই এই সমস্যার সম্মুখীন হয় না। আবার অধিক রক্তপাতের কারণে খিঁচুনি হয় এবং অনেকের মনে এটি ভীতির সৃষ্টি করে ও দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হয়।। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
সমস্যাটির কারণ কী?
শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন কারণে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। যেমন-
- হরমোনাল ইমব্যালান্স বা হরমোন জনিত সমস্যা দেখা দিলে।
- জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয় না এমন টিউমার থাকলে।
- ঘন ঘন গর্ভের সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মারা গেলে।
- এমন খাবার গ্রহণ করলে যেগুলো রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে দেয়।
- পেল্ভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ অর্থাৎ জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ হলে।
- অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দিলে।
- ভ্যাজাইনাল সিস্ট বা জননাঙ্গে সিস্ট দেখা দিলে।
- ইউটেরিন, ওভারিয়ান বা সারভাইকাল ক্যান্সার হলে।
- যকৃত, কিডনি বা থাইরয়েড ডিজিজ থাকলেও এধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপুর্ণ বিষযগুলো কী?
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে হরমোন নিঃসরণ ক্রিয়া বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়। এই সময়ে ডিম্বাশয় বা ওভারি শুকিয়ে যায়, তাই ওভাম অর্থাৎ ডিম্বানু সৃষ্টি হয় না। ফলে ওভারি থেকে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নামক হরমোন নিঃসৃত হয় না। ডিম্বাণু উৎপাদন বা পরিস্ফুটন ছাড়াই যাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায় তারা হলো- মেয়েদের প্রথমবার মাসিক হওয়ার পরের এক বছর পর্যন্ত এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মেনোপজ হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া থেকে মুক্তির উপায় কী?
নিম্নলিখিত পন্থা অবলম্বন করে এই লক্ষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব-
- মাসিকের সময় অধিক রক্তপাত হলে ক্লান্তিবোধ হয়। তাই এই সময়ে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। বেশি নড়াচড়া ও ভারী কোনো কাজ করা যাবে না।
- রাতে কমপক্ষে আট ঘন্টা ঘুমান।
- ঠাণ্ডা পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা তলপেটে কিছুক্ষণ ধরে রেখে শুয়ে থাকুন।
- কলার মোচা রান্না করে তা টক দই এর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
- ২০ গ্রাম ধনে ২ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। পানি শুকিয়ে ১/২ কাপ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর এই মিশ্রণটিকে ঠাণ্ডা করে খেয়ে নিন।
- নিয়মিত আলু, গুড়, কুমড়ার বীজ খেলে এই সমস্যা কমে আসবে।