লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis) হলো এক মারাত্মক ও অনিরাময়যোগ্য লিভারের রোগ, যা লিভারের টিস্যুতে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে। এটি লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে এবং ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যানুসারে, এটি বর্তমানে বিশ্বের মৃত্যুর ১১তম প্রধান কারণ।
এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো:
- লিভার সিরোসিস কী?
- লিভার সিরোসিসের কারণ
- লক্ষণ
- সঠিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
- চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়
লিভার সিরোসিস কী?
লিভার সিরোসিস এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা, যেখানে প্রদাহ, ভাইরাল সংক্রমণ অথবা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে লিভারের টিস্যুতে দাগ পড়ে। ফলে লিভারে রক্ত চলাচল ও পুষ্টি গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়।
লিভার সিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে, তাই সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লিভার সিরোসিসের কারণ
প্রধান কারণগুলো হলো:
- দীর্ঘদিন অ্যালকোহল সেবন
- হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সংক্রমণ
- নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)
- অটোইমিউন হেপাটাইটিস (শরীরের ইমিউন সিস্টেম লিভার আক্রমণ করে)
- উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগ যেমন হেমোক্রোমাটোসিস, উইলসন ডিজিজ
- পিত্তনালীতে বাধা (Bile Duct Obstruction)
- সংক্রমণজনিত রোগ যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিফিলিস
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রাস্তার জাঙ্কফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ
- অনিরাপদ যৌনতা, যা হেপাটাইটিস বিস্তার করতে পারে
লিভার সিরোসিসের শুরুতে অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে রোগ তীব্র হলে সাধারণত নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়:
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
- শরীর দুর্বলতা ও সহজ ক্লান্তি
- বমি ও বমি বমি ভাব
- ক্ষুধামন্দা
- জন্ডিস (চোখ ও চামড়া হলুদ হওয়া)
- পেট ফোলা ও পেটব্যথা
- পা ফোলা
- মানসিক বিভ্রান্তি
- রক্তবমি বা কালো মল
- ওজন হ্রাস
- হাতের তালু লাল হওয়া
- মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়া, পুরুষদের অণ্ডকোষ ছোট হওয়া
লিভার সিরোসিস রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি
সঠিক রোগ নির্ণয় লিভার সিরোসিস চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা:
- MRI ও MRE স্ক্যান
- সিটি স্ক্যান ও আল্ট্রাসনোগ্রাম
- লিভার বায়োপসি
- ব্লাড টেস্ট (লিভার ফাংশন টেস্ট)
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা
লিভার সিরোসিসের জন্য মূল চিকিৎসা হলো:
রোগের মূল কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা
অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা
হেপাটাইটিস ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে ওষুধ গ্রহণ
সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ
জটিল পর্যায়ে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন হতে পারে
Liver Cirrhosis প্রতিরোধের উপায়
লিভার সিরোসিস প্রতিরোধ করা সহজ, যদি সচেতনভাবে কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়:
✅ অ্যালকোহল সেবন পুরোপুরি বন্ধ করুন
✅ স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন
✅ রাস্তার ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
✅ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের জন্য টেস্ট করান
✅ নিরাপদ যৌনতা অনুশীলন করুন
✅ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
✅ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডস লেভেল ঠিক রাখুন
✅ পর্যাপ্ত ব্যায়াম করুন
✅ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
✅ পেইনকিলার অতিরিক্ত সেবন থেকে বিরত থাকুন
✅ বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করুন
লিভার সিরোসিস প্রতিরোধযোগ্য, যদি সময়মতো সচেতন হওয়া যায়। সঠিক জীবনযাপন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এই ভয়ংকর রোগ সহজেই এড়ানো সম্ভব।
লেখক:ডা. মোঃ হুমায়ুন কবীর
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, গবেষক, স্বাস্থ্য নিবন্ধকার
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাঁটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল, ঢাকা-১০০০
📞 মোবাইল: ০১৭১৭-৪৬১৪৫০, ০১৯১২-৭৯২৮৯৪