সেক্স বিষয়টি নিয়ে যে আমাদের চারপাশে একটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের মনোভাব আছে তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু যতই আড়াল-আবডাল থাকুক না কেন, এই নিষিদ্ধ সুখ চেখে দেখার উদ্দীপনার হাত থেকে রেহাই পায় না কেউই। আর বিপদখানি ঘটে ঠিক এইখানেই! এমনিতেই ‘সেক্স এডুকেশন’-এর মতো বিষয় এখনও আমাদের পাঠ্যক্রম থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। পাশাপাশি সেক্সের মধ্যে অনেকেই নানা রকম অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পেতে চায়। কিন্তু সমুদ্রে নামতে গেলে যে লাইফ জ্যাকেট পরে নামতে হয়, সেকথাটাই ডিলিট হয়ে যায় মগজ থেকে! আর এই ফাঁকেই চোরের মতো চুপিচুপি শরীরের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে যৌনসংক্রমণ বা যৌনরোগ। যে কোনও ধরনের যৌন সংক্রমণই কিন্তু ক্যানসারের মতো মারণ রোগের চেয়ে খুব একটা কম নয়। সঠিক সময় তা ধরা না পড়লে বা তার সঠিক চিকিৎসা না হলে কিন্তু তা প্রাণঘাতী পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু অতদূর ভেবে লাভ নেই। বরং আগে থেকেই সৈন্যসামন্ত নিয়ে মাঠে নামাই বুদ্ধিমানের কাজ।
যৌনসংক্রমণ এবং যৌনরোগের মধ্যে
পার্থক্য আছে কি?
যৌনসংক্রমণ মানে হল সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন (STI)। বিনা প্রোটেকশনে শারীরিক মিলন করলে এই ধরনের সংক্রমণ আসতে পারে। মিলনের সময় কোনওভাবে যৌনাঙ্গের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা প্যারাসাইট শরীরে প্রবেশ করতে পারে। প্রাথমিক স্তরে পেনিস কিংবা ভ্যাজাইনার থেকে অনবরত ‘হোয়াইট ডিসচার্জ’ এর অন্যতম লক্ষণ হলেও হতে পারে। ঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না হলে এটা যৌনরোগে পরিণত হয়। সেক্ষেত্রে দেখতে গেলে দুটো একই মুদ্রার দুই পিঠ। এই ধরনের সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে পার্টনারের মধ্যেও এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইনফেকশন থাকলে প্রাথমিকভাবে যেসব লক্ষণ দেখা যায়…
সংক্রমণ যে শরীরে বাসা বেঁধেছে, প্রাথমিকভাবে তা জানান দেওয়ার জন্য শরীরে বেশ কয়েকটা লক্ষণ দেখা যায়। কী-কী সেই লক্ষণ? চলো জেনে নিই…
- টয়লেট করার সময় ব্যথা অনুভব করা।
- ইন্টারকোর্সের পর কিংবা পিরিয়ড না চলাকালীন ব্লিডিং হওয়া।
- ভ্যাজাইনা বা পেনিস থেকে একটু হলদেটে, সবুজ বা রক্তযুক্ত ডিসচার্জ হওয়া।
- গোপনাঙ্গ থেকে দুর্গন্ধ বেরনো।
- পিউবিক অঞ্চলে বা যৌনাঙ্গে প্রচণ্ড ইচিং (চুলকানি) হওয়া।
- গোপনাঙ্গের আশেপাশে বাম্প্স, সোর, ওয়ার্টস বা ব্লিস্টার্স দেখা দেওয়া।
- তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা।
তবে এই লক্ষণগুলো সবই প্রাথমিক পর্যায়ে। যৌনরোগের অনেক ধরন আছে, যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস, জেনিটাল ওয়ার্টস, জেনিটাল হার্পিস, হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি (HIV), ট্রিকোমোনিয়াসিস, পিউবিক লাইস, স্কেবিস, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস, ক্যানডিডা এর মধ্যে কয়েকটি। প্রাথমিক কয়েকটিতে মিল থাকলেও প্রত্যেকটি রোগের লক্ষণ এমনিতে আলাদা। তাই সঠিক ডায়গনোসিসের জন্য অবশ্যই কোনও অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যৌনসংক্রমণ এড়িয়ে চলার অব্যর্থ উপায়…
এতক্ষণ আমরা যে-যে লক্ষণ নিয়ে কথা বলছিলাম তার ছায়া তোমার জীবনে যাতে না পড়ে, তার ব্যবস্থা করতে চাও তো নাকি? দেখে নিই কী-কী সর্তকতা মেনে চললে যৌনসংক্রমণের আক্রমণ এড়িয়ে চলা সম্ভব…
- সুস্থ যৌনজীবনের মূলমন্ত্রই হল সর্তকতা। তাই ইন্টারকোর্সের সময় ভুল করেও কখনও ‘প্রোটেকশন’-এর প্রয়োজনীয়তাকে তুচ্ছ করে দেখলে চলবে না। প্রত্যেকবার মিলনের শুরু থেকে শেষ অবধি কন্ডোমের ব্যবহার প্রয়োজন।
- পার্টনারের যদি র্যাশ, সোর বা ডিসচার্জের মতো সমস্যা থাকে তা হলে কখনই কোনওরকম শারীরিক সম্পর্কে জড়াবে না।
- কারও সঙ্গে অন্তর্বাস শেয়ার করা চলবে
- ইন্টারকোর্সের আগে এবং পরে গোপনাঙ্গ এবং তার আশপাশ ওয়াশ করে নেবে।
- নিজের এবং পার্টনারের একটা HIV টেস্ট অবশ্যই করে নেওয়া দরকার।
কয়েকটা জরুরি প্রশ্নের উত্তর…
ওরাল কনট্রাসেপটিভ’ খেলে কি যৌনসংক্রমণ আটকানো সম্ভব?
না, এই দাওয়াই শুধু প্রেগন্যান্সি আটকাতে সক্ষম। এক্ষেত্রে ‘ওরাল কনট্রাসেপশন’-এর দক্ষতা নেই।
পার্টনারের সংক্রমণ থাকলে ‘ওরাল সেক্স’-এর উপরেও কি বিধি নিষেধ আরোপ হবে?
পার্টনারের সংক্রমণ থাকলে ওরাল সেক্স-এর মাধ্যমেও তা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তাই তা এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।
সংক্রমণের কোনও লক্ষণ না থাকলেও কি ডাক্তারখানায় এর টেস্ট করানো যায়?
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে রুটিন চেকআপ করিয়ে নেওয়া সুঅভ্যেসের মধ্যেই পড়ে। ক্লিনিকে গিয়ে এর পরীক্ষা করাতেই পার। এইসব টেস্টের ক্ষেত্রে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়।
ইন্টারকোর্স ছাড়াও কি HIV ছড়ানোর কোনও উপায় আছে?
আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, ভ্যাজাইনাল ফ্লুয়িড কিংবা সিমেন, ব্রেস্ট মিল্ক ইত্যাদি কারও শরীরে প্রবেশ করলে ভয় থাকে। তবে ঘাম, চোখের জল বা ইউরিনের মাধ্যমে HIV ছড়ায় না।
হাত বাড়ালেই বন্ধু
যদি তোমার মধ্যে ইনফেকশনের কোনও লক্ষণ দেখা দিয়েছে বলে মনে হয়, তা হলেও কিন্তু ঘাবড়ানোর কোনও কারণ নেই। ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন এই সময়। সঙ্গে-সঙ্গে কোনও অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নাও। মেয়েরা গাইনোকলজিস্টের সঙ্গে দেখা করো। চিকিৎসক যদি কোনও টেস্ট দেন সেগুলো নিয়ম মতো করালে এবং ঠিকঠাক ওষুধপত্র খেলে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সঙ্গে যথাযথ সেফটি মেনটেন করার কথাটি ভুলে গেলেও মুশকিল। তাই সেদিকেও তাই নজর এবং জোর দুই-ই দেওয়া প্রয়োজন।