হার্ট হচ্ছে আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হার্টের স্পন্দন থেমে যাওয়া মানে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমরা যে অসচেতনতার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করি, তাতে আমাদের হার্টের অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অথচ স্বাস্থ্যকর এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করলে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্টের অন্যান্য অসুখ থেকে অনেক দূরে থাকা যায়। তাই আসুন, জেনে নেই হার্টের বিভিন্ন সমস্যার কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়সমূহ।
হার্টের বিভিন্ন সমস্যার কারণসমূহঃ
- অধিকাংশ মানুষের হার্টের সমস্যার সুপষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ব্লাডের কোলেস্টেলর, সুগার, রক্তচাপ পরীক্ষা নিয়মিত চেক না করলে অনেকে নিজের সমস্যা সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে ।
- জেনেটিক বা বংশগত কারণ।
- গবেষণায় দেখে গেছে হার্টের সমস্যা (ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট, অ্যাটরিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট) থাকলে দাঁত সার্জারীর সময় হার্টের অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে ।
- দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহন থেকে বিরত থাকা (বিশেষ করে মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য)।
- হাঁটাচলা তথা কায়িক পরিশ্রমের অভাব।
- খাদ্যাভ্যাস (ফাস্ট ফুড, এনার্জি ড্রিংক গ্রহন, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার গ্রহন)
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- একাকীত্ব
- ধূমপান করা
প্রতিরোধের উপায়সমূহঃ
- কারও বাবা, দাদা বা তারও পূর্বের কেউ হার্টের রোগে আক্রান্ত থাকলে রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে, সেকারণে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে জ্ঞাত থাকা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।
- নিয়মিত দাঁত ব্রাশ হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।
- নিয়মিত বাদাম খান কারণ বাদাম রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ।
- এনার্জি ড্রিংক পরিহার করুন, এটা রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়। তৃষ্ণা নিবারণ এবং শক্তি জোগাতে প্রচুর পানি, লেবুর সরবত অথবা আখের রস গ্রহন করুন।
- অনিয়মিত ঘুম ও ঘুমের অভাবে রক্তচাপ বাড়ে, নিয়মিত ঘুমাতে হবে ছয়- আট ঘণ্টা।
- অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন, এলকোহল রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায় ফলে হার্টফেল এবং লিভার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে অল্প পরিমাণ মদ্যপান রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা ঠিক রাখতে পারে।
- সপ্তাহে নিয়ম করে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন (সাঁতার কাটা, জগিং) বা হাঁটার অভ্যাস করুন।
- হার্টের ঝুঁকি কমাতে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে ইয়োগা, ধ্যান করুন, বন্ধুবান্দবের সাথে আড্ডা দিন, ছুটিতে বেড়িয়ে আসুন দূরে কোথাও।
- সঠিকসময়ে হার্টের অসুখ আছে কিনা তা জানতে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন। বিশ বছর বয়সীরা প্রতি পাঁচ বছরে ‘ব্লাড কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন, অন্তত প্রতি দুই বছরে রক্তচাপ পরিমাপ করুন। ৪৫ বছর বয়সীরা প্রতি তিন বছরে ব্লাডের গ্লুকোজ পরিমাপের পরীক্ষা করুন।
- পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন আঁশযুক্ত খাবার (পাস্তা, ছাতু, ডাল, শাক), কলা, আলু, টমেটো, আপেল, নাশপাতি, শসা এবং ফুলকপি গ্রহন করুন। এসব আমাদের রক্তচাপ কমায় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
- ধুমপান এড়িয়ে চলুন।
২০৫০ সাল নাগাদ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও হার্টের রোগী এত বাড়বে যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের হার্টের সমস্যা থাকবে। সুতরাং সবাই সচেতন হোন এবং হার্টের অসুখ থেকে দূরে থাকুন।