নারী ও পুরুষের যৌথ উদ্যোগেই স্থাপিত হয়েছে মানব সমাজের ভিত্তি। সমাজ গঠনে এ দুটি অংশই একটি অপরটির অনিবার্য পরিপূরক। শুধু পুরুষকে দিয়ে যেমন কোনো মানবীয় সমাজের কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি শুধু নারীকে দিয়েও পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় না কোনো মানবীয় সমাজের। নারী ও পুরুষের মিলনের মাধ্যমেই গঠিত হয় সমাজ জীবনের ভিত্তি। সেই সাথে এ কথাটিও সত্য যে, মানব সমাজে উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক যতক্ষণ না সঠিক ভিত্তির উপর স্থাপিত হবে এবং পরস্পরের সঠিক মর্যাদা ও অধিকার তারা প্রাপ্ত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমাজ ব্যবস্থাই দুনিয়ার বুকে সুন্দর ও কল্যাণকর রূপে গড়ে উঠতে পারে না।
বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অহরহ ঘটে চলেছে নারী প্রতি অমানুষিক নির্যাতন। অথচ ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান। মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যার পরিচয়ে সংরক্ষণ করেছে সব অধিকার। ইসলামে নারী নির্যাতন অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এর প্রতিকারের উপযুক্ত বিধান রয়েছে।
আমাদের সমাজে নারী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হলেও শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি বেশি প্রকাশ পায়। তা ছাড়া শারীরিক নির্যাতন ধারাবাহিক নির্যাতনের শেষ পর্যায়ে এসে আরম্ভ হয় অথবা একাধিক নির্যাতন একই সঙ্গে চলে কোনো কোনো নারীর জীবনে। প্রথম পর্যায়ে চলে তির্যক কথা, তারপর ঠিকমতো খেতে না দেওয়া, পরিধানের কাপড় না দেওয়া, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, অতঃপর শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানোÑএমনটিই হয়ে থাকে। শারীরিক নির্যাতনের ধরন আবার বিভিন্ন। কেউ চুলের মুঠি ধরে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, লাথি মেরে স্ত্রীদের নির্যাতন করে। আবার কেউ লাঠি দিয়ে প্রহার করে। নারীদের ওপর যেসব কারণে নির্যাতন করা হয়, সেগুলো কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। যেমন যৌতুকের দাবি না মেটানো, স্বামীর মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের সেবায় ত্রæটি করা, তরকারিতে লবণ বা তেল কম-বেশি হওয়া ইত্যাদি। শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারীদের জন্য এ ধরনের কার্যকলাপ মুসলিম পরিচয়ের অযোগ্যতা প্রমাণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলো সে, যে তার স্ত্রীর কাছে অধিক উত্তম। আমি আমার স্ত্রীর কাছে সবার চেয়ে বেশি উত্তম।’ (তিরমিজি)
ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা। নারীরা একে অপরের সাহায্যকারী বন্ধু হওয়া, সৎকর্মশীল হওয়া, অসৎকাজ থেকে বিরত থাকা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা, বার্ষিক হজ পালন, যাকাত প্রদানসহ ইত্যাদি সামাজিক কর্মকাÐই পুরুষের মতো নারীদের ওপরও বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে তারা তাদের মধ্যে নৈতিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে পারে এবং খোদামুখী আধ্যাত্মিক চেতনা গড়ে তুলতে পারে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)
একটি হাদিসে এসেছে, রাসূলের ওফাতকালীন সময় মসজিদে নববীর হুজরায় সকলেই রাসূল (সা.)-এর মুুমূর্ষু অবস্থা দেখে কাঁদছেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমা (রা.)কে ডেকে কানে কানে কি যেন বললেন। সাথে সাথে ফাতেমা (রা.) এর কান্না থেমে গেল। আয়শা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন মা, তোমাকে কি বললেন আল্লাহ রাসূল তা আমাদেরকে বলবে? তখন ফাতেমা (রা.) বললেন, তিনি আমাকে বলেছেন, ‘মা সবাই কাঁদে কাঁদুক তুমি কেঁদো না, তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না।’ প্রিয় পাঠক ইসলামের নবী আল্লাহর নবী ও রাসূল মানবতার মহান শিক্ষক, মানবতার মুক্তির দূত যে ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন, আজ যদি সে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমরা আমাদের জীবন পরিচালনা করি তবেই সমাজে এবং পরিবারে শান্তি আসতে বাধ্য। যারা আজ পারিবারিক প্রথা আর নৈতিক শিক্ষার গণ্ডির বাইরে অবস্থান করতে চায় তাদের দ্বারাই সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়, তাদের দ্বারাই নির্যাতিত হয় নারী সমাজ। বন্ধ হোক নারীদের উপর নির্যাতনের চিত্র এবং নারী ও পুরুষের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত হোক একটি নতুন ও সুন্দর মানবসমাজের ভিত্তি।