জিকির এর প্রকারভেদ

আল্লাহ তায়ালার স্মরণই হচ্ছে জিকির । তা হতে পারে নামাজ আদায়, তাসবিহ-তাহলিল, দান খয়রাত ইত্যাদির মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালাকে যে যেভাবে স্মরণ করবে আল্লাহ তাআলাও তাঁর বান্দাকে সেভাবে স্মরণ করবেন। কুরআন ও হাদিসে জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তোমাদের প্রভু বলেন, আমাকে ডাকো, আমার কাছে চাও; আমিও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো, তোমাদের চাওয়া-পাওয়া কবুল করবো।’ (সুরা গাফেরঃ ৬০)

আল্লাহর জিকির করতে হবে সর্বাবস্থায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে), হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব (মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টি) নিরর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা আল-ইমরানঃ ১৯১) কুরআনে জিকিরের এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেই প্রিয়নবি (সা.) তাঁর উম্মতকে বেশি বেশি জিকিরের নসিহত পেশ করেছেন। জিকির থেকে বিমুখ ব্যক্তিকে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুকে জিকির (স্মরণ) করে, আর যে ব্যক্তি তার রবকে জিকির বা স্মরণ করে না; তাদের দৃষ্টান্ত হলো- জীবিত ও মৃতের ন্যায়।’ (বুখারি : ৬৪৫৬)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করবে তেমনি আমাকে পাবে। আমাকে যখন সে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে তাহলে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোনো জনগোষ্ঠির নিকট স্মরণ করে তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জনগোষ্ঠির নিকটে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে অর্ধ হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। আর যদি সে এক হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে হস্তদ্বয় প্রসারিত পরিমাণ এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি তার দিকে দ্রুত হেঁটে আসি।’ (বুখারি : ৬২৬৩)

অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের উত্তম আমলের কথা জানাবো না, যা তোমাদের প্রভুর কাছে অত্যন্ত পবিত্র, তোমাদের জন্য অধিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, (আল্লাহর পথে) স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয় থেকেও উত্তম এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা এবং তারা তোমাদেরকে হত্যা করার চেয়েও অধিক শ্রেয়?

সাহাবাগণ (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ’ প্রিয়নবি (সা.) বললেন, ‘(তা হলো) আল্লাহ তায়ালার জিকির।’ (তিরমিজি : ৫৪৩৬) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামের বিধি-বিধান আমার জন্য বেশি হয়ে গেছে। কাজেই আপনি আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন, যা আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরবো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ তোমার জিহ্বা যেন সর্বক্ষণ আল্লাহর জিকিরে সিক্ত (রত) থাকে।’ (ইবনে মাজাহ : ৫৬৫৪)