প্রচলিত দুটি জাল হাদিস

আমাদের সমাজে অনেক ভুল কথা ও প্রথার প্রচলন আছে। সমাজের কিছু প্রচলন ও উক্তিকে অনেক সময় ধর্ম বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা যুগ যুগ ধরেই হয়ে এসেছে।

অনেকে এটিকে ষড়যন্ত্রমূলক চালিয়ে দিয়েছেন কেউ ভুল ধারণা থেকে করেছেন। সময়ের প্রবাহে এসব মানুষের মনে বিশ্বাসযোগ্য জায়গাও করে নিয়েছে। বিশেষভাবে মানুষের মুখে-মুখে এমন কিছু কথা প্রচলিত আছে, যা অনেকেই হাদিস বা রাসূল (সা.) এর কথা হিসেবে জানেন। অথচ প্রচলিত এই কথাগুলোর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বাণীর আদৌ সম্পর্ক নেই। এগুলোকে বলে, জাল হাদিস।

এসবের ভিত্তি পবিত্র কোরআন হাদীসের কোথাও নেই। ওলামায়ে কেরাম এসবের কোনো প্রমাণ পাননি। জাল হাদিসের মতো এমন ঘটনা কেবল আমাদের সময়ে ঘটেছে, আগে ঘটেনি তা কিন্তু নয়। আগের যুগেই এ ঘটনার উৎপত্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে ৩৬ হিজরিতে এর সূচনা। তা প্রতিরোধের জন্য উম্মতের অতন্দ্র প্রহরী প্রখর ধী-শক্তিমান মুহাদ্দিসবৃন্দ নিরন্তর সাধনা করে রাসূল (সা.) হাদিস সংরক্ষণের জন্য এক নতুন শাস্ত্র তৈরি করেছেন। যাকে বলা হয় রিজাল শাস্ত্র বা সূত্রের ধারাবাহিকতা।

এই শুদ্ধিকরণ মানদণ্ডে যেটা উত্তীর্ণ হবে কেবল সেটাই হাদিস বলে বিবেচিত হবে। এই নিখুত ছাঁকনির বদৌলতে আজ আমরা রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের সঠিক দিক-নির্দেশনাগুলো পেয়েছি। তবে এসব বাদেও কিছু জাল হাদিস আমাদের সমাজে চালু রয়ে গেছে। আজ দুটি জাল হাদিস তুলে ধরা হলো।

আপনি না হলে আসমান মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতাম না

লোকমুখে এটি হাদিসে কুদসি হিসেবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। অথচ হাদিস বিশারদগণ একমত যে, এটি অবান্তর, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বর্ণনা। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা সাগানি (রহ.), মোল্লা আলি কারি ও আবদুল হাই লাখনবিসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ একবাক্যে একে জাল বলেছেন। হাদিসের সঙ্গে আপনি না হলে আসমান মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতাম না-এর কোনো সম্পর্ক নেই। (সূত্র : আল্লামা সাগানি, আল-মাউজুয়াত: পৃ. ৫২ ; মোল্লা আলি কারি, আল-আসরার, পৃ ১৯৪ ; আল-মাসনু, পৃ. ১১৬ ; আল-আজলুনি, কাশফুল খাফা ২/২১৪)

জ্ঞান অন্বেষণের জন্য সুদূর চীন দেশে যাও

বাক্যটি আমাদের দেশে হাদিস হিসেবে খুব প্রসিদ্ধ। অথচ তা হাদিস নয়, বরং আরবি ভাষার প্রবাদ। অধিকাংশ মুহাদ্দিস একে জাল বলেছেন। তবে কথাটির বক্তব্য পুরোপুরি ঠিক আছে। জ্ঞানার্জনের জন্য দূরত্ব যতই হোক, সামর্থ থাকলে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু আলোচ্য বাক্যটি হাদিস নয়। এ বাক্যটির বর্ণনার সনদে আবু আতিবা তরিফ ইবনে সুলায়মান নামে একজন বর্ণনাকারী আছে, যে হাদিস শাস্ত্রের ইমামদের কাছে অগ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃত। (সূত্র : উকায়লি, আফাউল কাবির ২/২৩০; ইবনে হিব্বান, কিতাবুল মাজরহিন ১/৩৮২।)