কুরআন শরীফ মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী। মানব জাতির কল্যাণের জন্য যা তিনি পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেন। যে কালামে পাক লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিল। কুরআনুল কারীমে এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, যদি আমি এ ‘কুরআন’ পর্বতের উপর নাজিল করতাম, তবে তুমি নিশ্চয় দেখতে, তা নত হয়ে বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছে (সুরা হাসর ২১)
অন্যত্র তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত (কোরআন) অর্পন করতে চেয়েছিলাম, অতঃপর তারা ভয়ে তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং শংকিত হল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল। (সুরা আহযাব, ৭২)
পবিত্র কুরআন শরীফ নাজিল হবার প্রথম দিন থেকেই হিফজ পদ্ধতি শুরু হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা দীর্ঘ তেইশ বছরে হযরত জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে প্রয়োজন অনুসারে তাঁর হাবীব (সা.) এর উপর সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাজিল করেছেন। নাজিলের এ পদ্ধতিকে ওহী বলে। জিবরাইল (আ.) যখনই ওহী নিয়ে আসতেন রাসুল করীম (সা.) সাথে সাথে তা মুখস্ত বা হিফজ করে নিতেন। উপস্থিত সাহাবীগণকেও মুখস্ত করতে বলতেন।
আমাদের পূর্বেকার নবীগণের অনুসারীরা তাদের হীন স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের কাছে বিদ্যমান আসমানি কিতাব সমুহের অনেকাংশে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে ফেলেছে। কিন্তু একমাত্র কুরআন শরীফ কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় থাকবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন: আমি নিজেই এ উপদেশ গ্রন্থ (কুরআন) নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই তার সংরক্ষক। (সুরা হিজর ৯)
কুরআন শরীফ সংরক্ষণ কিভাবে করবেন, তার একটি পদ্ধতি হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে মনোনীত করেন তাদের বক্ষে কুরআন মজিদ আমানত রাখেন, ওদেরকে হাফেজে কুরআন বলে। মহান আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে বলেন, যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের অন্তরে এটা (কুরআন) তো স্পষ্ট আয়াত, বেইনসাফরাই আমার আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে। (সুরা আনকাবুত ৪৯)
আসমানি কিতাব সমূহের মধ্যে একমাত্র কুরআন শরিফ ব্যতিত তাওরাত, ইঞ্জিল ও যবুরের কোন হাফেজ ছিলেন না। আমাদের একটি গৌরবের বিষয় হচ্ছে অদ্বিতীয়, অতুলনীয়, কুরআন শরীফের হাফেজ প্রতি যুগে এতো অধিক পরিমাণ ছিলেন যাহা গণনা করা সম্ভব নহে। খোলাফায়ে রাশিদিনসহ প্রায় দশ হাজার সাহাবি হাফেজ ছিলেন।
কালামে পাকের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার কারণে হাফেজে কুরআনগণও মানব সমাজে এক বিরল সম্মানের অধিকারী। ইহকাল থেকে পরকালে তাদের মর্যাদা শতগুণে বৃদ্ধি পাবে। যেমন: হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে কুরআন শরীফ পড়েছে এবং তা মুখস্ত রেখেছে, এরপর কুরআনের হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম জেনেছে; তাকে আল্লাহ তায়ালা বেহেশতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশজন ব্যক্তির জন্য তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের প্রত্যেকের উপর জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছিল। (তিরমিজি)
হাফেজে কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে উক্ববা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুল (সা.) থেকে শুনেছি কুরআন যদি চামড়ায় রেখে আগুনে ফেলা হয় তবে তা জ্বলবে না। এখানে চামড়া বলতে মানুষ এবং আগুন বলতে জাহান্নামের আগুনকে বুঝানো হয়েছে। এটা চিরসত্য যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরআন শরীফ মুখস্ত করবে তাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, হাফেজে কুরআনকে কিয়ামতের দিন বলা হবে- পড়ো এবং উপরের দিকে উঠতে থাকো, যেভাবে তোমরা দুনিয়াতে তারতিলের সাথে পড়তে, তোমাদের স্থান শেষ আয়াতের নিকটে। (তিরমিজি) অর্থাৎ ছয়হাজার ছয়শত ছেষট্টি তলা ভবন তাদের জন্য নির্ধারিত। সুবহানাল্লাহ!