ভালোবাসার শক্তি সীমাহীন, প্রবল। ভালোবাসার জন্য ও ভালোবাসার মানুষের জন্য মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। মুসলমানদের কাছে মহানবী (সা.) ভালোবাসার সর্বশ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত। মুসলমানরা সব সময় হৃদয়ের ক্যাম্পাসে ভালোবাসার তুলিতে মহানবী (সা.)-এর ছবি আঁকে। স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনের চেয়েও একজন মুসলমান মহানবী (সা.)-কে বেশি ভালোবাসেন। এমন ভালোবাসা না থাকলে কেউ মুসলিম হতে পারে না। এ বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য এমন : ‘বলে দাও, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের পরিবার-পরিজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য—যার মন্দায় পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাড়িঘর, যা তোমরা পছন্দ করো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর (আজাবের) নির্দেশ আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেন না।’ (সুরা : তওবা, আয়াত : ২৪)
তাফসির : আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, অর্থ-সম্পদ, মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ঈমানদারের অন্যতম মূলধন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত কখন হবে? জবাবে আল্লাহর রাসুল পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি নিয়েছ? লোকটি বলল, এর জন্য আমি তেমন কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি; তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি যাঁকে ভালোবাসো কিয়ামত দিবসে তুমি তাঁর সঙ্গেই থাকবে।’ (বুখারি : ২/৯১১)
প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে নবীপ্রেম থাকা ঈমানের দাবি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।’ (বুখারি : হাদিস : ১৪)
তবে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে মহান আল্লাহকে। আর আল্লাহকে ভালোবাসা ও তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য আল্লাহ নিজেই একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া ভালোবাসার দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা পোষণের জন্য মহানবী (সা.) এর ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণকে শর্ত করা হয়েছে। সুতরাং মহানবী (সা.) এর ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা যথেষ্ট নয়। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা।
নবীপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরামের জীবন। মহানবী (সা.) -এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম মহানবী (সা.)-এর প্রতি যে ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা শুধু বিস্ময়করই নয়, নজিরবিহীনও বটে। তাঁর একটু সান্নিধ্য-পরশ পাওয়ার জন্য তাঁরা সর্বদা অধীর আগ্রহী ও ব্যাকুল হয়ে থাকতেন। তাঁর ইশারায় তাঁরা মুহূর্তেই প্রাণ উৎসর্গে সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন। আমাদের উচিত সাহাবায়ে কেরামের মতো মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা।