৩১ অক্টোবর। বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির কল্যাণে মিতব্যয় এবং সঞ্চয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর পালন করা হয় ‘বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস’।
ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাই হলো মিতব্যয়িতা। ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে সম্পদ উপার্জন ও খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়িতার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেননা ইসলাম হচ্ছে ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যম পন্থার জীবন-দর্শন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যমপন্থি সম্প্রদায়ে পরিণত করেছি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৩)
ইসলামে অপচয় ও কৃপণতা উভয়ই নিষিদ্ধ। সম্পদকে ব্যক্তিমালিকানায় কুক্ষিগত করে রাখা যেমন অন্যায়, তেমনি তা বেহুদা খরচ করাও পাপ। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আহার করো ও পান করো কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
মিতব্যয়িতা বলতে ইসলাম কখনোই কার্পণ্যকে বোঝায় না; বরং অপচয় ইসলামে যেভাবে নিন্দিত, কৃপণতা ঠিক তেমনি ঘৃণিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে সুরা বনি ইসরাঈলের ২৯ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হইও না এবং একেবারে মুক্তহস্তও হইও না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’
পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় আল্লাহপাক অপচয়ের ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করেছেন এবং অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলে অভিহিত করেছেন। অথচ এখন তা আমাদের সমাজের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমোদ-প্রমোদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা জৌলুস প্রদর্শনের নামে অপচয় করা আজ একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার (অপব্যয়) করার ক্ষমতা মানুষের আছে বটে; কিন্তু নৈতিক অধিকার নেই। কেননা ধনীদের এই বিশাল অর্থসম্পদে হক রয়েছে সমাজের নিচু শ্রেণির মানুষের। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের সম্পদে অধিকার রয়েছে প্রার্থী ও বাঞ্ছিতদের।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ লাখ কোটি টাকা। অথচ বিশ্বে প্রতিদিন ১৭ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়। সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ অপচয় করে কোটি কোটি টাকার খাবার, আর এর মাশুল দিতে হয় পথের পাশের মানুষগুলোকে।
বৈষম্যের এ ভয়াল থাবা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন মিতব্যয়িতার শিক্ষা। আমাদের সমাজে যদি এই একটি মূলনীতি যথাযথ অনুসরণ করা হতো, তাহলে আর কোথাও শোনা যেত না ক্ষুধার্তদের আহাজারি, সমাজের চিত্র হয়ে উঠত আরো সুন্দর-সমৃদ্ধ। কারো ভোগের পেয়ালা উপচে পড়ত না, শূন্য থাকত না অন্যের ভোগের হাঁড়ি।
ফলে একদিকে যেমন আমরা অপচয়ের অভিশাপ থেকে রেহাই পেতাম, পাশাপাশি হতে পারতাম আল্লাহপাকের প্রিয় বান্দা। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয় করে না আবার কৃপণতাও করে না। বরং তাদের পন্থা হয় উভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৭)
লেখিকা : শিক্ষার্থী, বিএ (অনার্স), ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়