কেন গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল?

ভালো বক্তব্য দিতে পারা কিংবা নেটওয়ার্কিং করতে পারা- একটি মানুষের এধরনের নন-টেকনিক্যাল স্কিলগুলোকেই বলা হয় সফট স্কিল। ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে টেকনিক্যাল স্কিলের পাশাপাশি নন-টেকনিক্যাল স্কিলগুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে,চাকরিতে পদোন্নতি দেওয়া, সকল ক্ষেত্রেই সফট স্কিলেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় অনেক। একবিংশ শতাব্দীতে ক্যারিয়ারে প্রয়োজনীয় সফট স্কিল নিয়ে আমাদের এই আর্টিকেলটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ক্যারিয়ারে সফলতা লাভ করতে হলে কী কী সফট স্কিল থাকা উচিত।

কমিউনিকেশন স্কিল :
কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা মানে এই নয় যে, জোরালো বক্তব্য দিতে পারতে হবে। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে যার সাথে কথা বলা হবে, তার কথা বলার ভঙ্গিমা কিংবা ধরনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে কোন কিছু বোঝাতে পারার সক্ষমতা। যেকোন বিষয় সহকর্মী কিংবা ক্রেতা সবার কাছেই সহজভাবে বোঝাতে পারা। এছাড়া নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রেও সবার আগে এই গুণটির দরকার হয়।

নেটওয়ার্কিং : বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়তে আমাদের যে দক্ষতাটির প্রয়োজন সেটিই হচ্ছে নেটওয়ার্কিং। নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য মানুষদের সাথে যুক্ত থাকতে পারার সুফল অনেক। চাকরি পাওয়া,পদোন্নতি কিংবা কোন দরকারে সাহায্য পাওয়া- নেটওয়ার্কিং সবকিছুই করে দেয় অনেক সহজ।

রাইটিং স্কিল: মনে মনে যা ভাবি আমরা,সেটি নিজের লেখার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা কিন্তু বড় একটি দক্ষতা। সহকর্মী কিংবা বসের কোন একটি কাজে কিন্তু প্রয়োজন হতেই পারে এই দক্ষতাটির। লেখনীতে বানান কিংবা ব্যাকরণ- সব ঠিক রেখে মনোভাব সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতাটি কিন্তু তাই আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

সঠিক উচ্চারণ ও ভঙ্গিতে শুদ্ধভাবে কথা বলা: যেকোন জায়গাতেই সঠিক ভঙ্গিতে ও উচ্চারণে গুছিয়ে কথা বলা খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি কথাকে অনেক বেশি শ্রুতিমধুর করে এবং গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। কর্মক্ষেত্র কিংবা যেকোনো ক্ষেত্রেই তাই এই বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখা উচিত। কথা যেন খুব বেশী জটিল না হয়ে সহজেই বোধগম্য হয় মানুষের, সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।

লিসেনিং স্কিল:
গুছিয়ে কথা বলতে পারা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনিভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারাও সমান গুরুত্ব বহন করে। মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারার দক্ষতা থাকলে অফিসে অনেক সফলতা আসে। কারণ, যেকোন বিষয়ে দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়। এটি যেমনভাবে আপনাকে বসের সুনজরে আনে, তেমনিভাবে সহকর্মীদের সাথে গড়ে তোলে সুসম্পর্ক। তাই বোঝাই যাচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে শোনাটা কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পেশাদারিত্ব: কর্মক্ষেত্রে যে বিষয়টি নিজের গুরুত্ব অনেক বেশী বাড়িয়ে দেয়,তা হচ্ছে পেশাদারিত্ব। কারণ, যকোন দায়িত্ব দিয়ে এই গুণসম্পন্ন ব্যক্তির উপরই তখন ভরসা করা যেতে পারে এবং এই নির্ভরতা ঐ ব্যক্তির ক্যারিয়ারে সফলতা নিশ্চিত করে। সময়মতো অফিসে উপস্থিত থাকা, যে কোন কাজ সময়মতো করে দেওয়া কিংবা সঠিক জায়গায় সঠিক পোশাক পরা, নিজের কোন কাজের ব্যর্থতা নিজে নিতে শেখা, অন্যকে দোষারোপ না করা- এসবই পেশাদারিত্ব বা প্রফেশনালিজ্ম এর অন্তর্গত।

দলগত থাকার মানসিকতা: দলের সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করার মানসিকতা ও সক্ষমতা থাকা উভয়ই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, নিজের মতামত ঠিকভাবে দিতে পারা এবং দলনেতার নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা এসবকিছুই কর্মজীবনে সফলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া: অনেক ক্ষেত্রে সময়সীমা পূরণ করার চাপ কিংবা নানা ধরনের প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করে যেতে হয়। এরকম পরিস্থিতে মানিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে কাজ করার সক্ষমতা আপনাকে ব্যতিক্রমী করে তুলবে।

চিন্তন দক্ষতা: কঠিন সময়ে যিনি চিন্তা করে সহজ সমাধান বের করতে পারেন, দিনশেষে তিনিই সফলতা অর্জন করেন। সবসময় অন্যের কথা অনুসরণ না করে, নিজেরও চিন্তাভাবনা করা উচিত। প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকরির বাজারে যে নিজেকে যতটা বেশী সৃষ্টিশীল হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন, কর্মক্ষেত্রে তার সফলতার পরিমাণ তত বৃদ্ধি পাবে।

দ্রুত শিখতে পারার সক্ষমতা: কর্মক্ষেত্রের বিস্তৃতির সাথে সাথে কাজের ধরণও দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এ কাজগুলো সহজে আয়ত্তে আনতে না পারলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন- দ্রুত শিখে নেয়ার ক্ষমতা। কর্মক্ষেত্রে যত দ্রুত কোন নতুন প্রয়োজনীয় বিষয় আয়ত্তে এনে তার প্রয়োগ করা সম্ভব হয়, সফলতা তত দ্রুত হাতে ধরা দিবে।