চাকরির ভাইবার প্রশ্ন ও উত্তর | চাকরির ভাইবায় যে প্রশ্ন আসে

চাকরির ভাইবায় জড়তার কারণে কিংবা প্রস্তুতির অভাবে চাকরির সুযোগ হারিয়ে বসে অনেকে। চাকরির ভাইভার জন্যও থাকা চাই প্রস্তুতি। চলুন জেনে নিই কিছু চাকরির ভাইবার প্রশ্ন ও উত্তর । লিখেছেন সানজিদা নূর

ভাইভার সময় প্রার্থীকে অবশ্যই কিছু কিছু বিষয়ে সতর্ক হতে হয়। চাকরির ভাইবার কিছু কমন প্রশ্ন থাকে যেগুলো প্রায় সব ভাইভাতেই করা হয়।

তাই এর জন্য প্রস্তুতি নিতেই হবে। তবেই আপনি চাকরির ভাইভায় ভালো করে সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরির উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন।

চাকরির ভাইভায় কিছু কমন প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ প্রার্থীই এসব প্রশ্ন আগে থেকে না জানার কারণে প্রশ্নকর্তার সামনে অপ্রস্তত হয়ে পড়েন তাই আগে থেকে জেনে নেয়া যাক চাকরির ভাইবার প্রশ্ন ও উত্তর এর সম্ভাব্য ধরন।

 

নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।

ভাইভা বোর্ডে প্রায়ই এই প্রশ্নটি করা হয়। প্রশ্নকর্তা মূলত এই প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থীর জড়তা দূর করতে চান। বেশিরভাগ প্রার্থীই এই প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে বলতে পারেন না। আবার অনেকে উত্তর দিতে গিয়ে খুব সংক্ষেপ করে ফেলেন।

এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা কিন্তু আপনার জন্ম, শৈশব, শখ, বাবা-মা, বন্ধু এসব জানতে চান না।

তাই উত্তরের ধরনটা হবে এমন—  আমি গত ৫ বছর ধরে এই এই কাজ করছি। এর বাইরে, আমি এটা এটা করেছি। আমি ওখান থেকে এ বিষয়ে পাস করে এ কাজে জড়িত ছিলাম। আর আমার এই এই বিষয়ে দক্ষতা আছে। চাকরির পাশাপাশি আমি কম্পিউটারের এটা-ওটাও জানি।  

 

কেন এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান?

ভাইবার এ প্রশ্নে অনেকেই উত্তর দেন চাকরিটা তার খুব দরকার। কিন্তু উত্তরটি ভুল। প্রশ্নকর্তারা মূলত জানতে চান যে, আপনাকে কাজটি দেওয়া হলে আপনি তা কতটা সুচারুভাবে করবেন। তাই দায়িত্ব সম্পর্কে আপনার আগ্রহটাই তুলে ধরুন।

এক্ষেত্রে বলতে পারেন, আমি সুযোগ পেলে কাজটি এভাবে সম্পন্ন করবো বা প্রতিষ্ঠানকে এভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আপনি কতটা ভালোভাবে নির্দিষ্ট কাজটা করতে পারবেন সেটাই গুছিয়ে বলুন ভাইবার এ প্রশ্নে।

 

আপনাকে নিয়োগ দেবো কেন?

চাকরির ভাইবায় এ প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যাবেন না। এটাও একটা ট্রিক প্রশ্ন। উত্তরটি তিনটি ধাপে দিতে পারেন। প্রথমত, আপনি প্রতিষ্ঠানটির সব নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত কিনা, এবং তা দক্ষতার সাথে পালন করতে পারবেন কি না সেটার উত্তর দিন।

দ্বিতীয়ত, আপনি কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে পারবেন সে বিষয়েও জানান।

তৃতীয়ত, আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা এই কোম্পানি বা ওই পদের সঙ্গে কী করে মানিয়ে যায় সেটাও বলুন। তারপর বলুন আপনি আপনার সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিয়ে কাজটি করতে পারবেন এবং আপনি আত্মবিশ্বাসী।

 

আপনার শক্তি বা দক্ষতা কী কী?

এই প্রশ্নের মাধ্যমে ভাইভা বোর্ডের প্রশ্নকর্তা জানতে চান আপনি কেন অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য অধিকতর যোগ্য। এক্ষেত্রে আপনি আপনার গুণাবলী উপস্থাপন করতে পারেন।

এটা হতে পারে সব পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা, আপনার সততা এবং যেকোন কাজের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব এবং টিমে কাজ করার মানসিকতা।

দক্ষতার তালিকায় থাকতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, কম্পিউটার স্কিল, টেকনিক্যাল স্কিল, লাঞ্জুয়েজ স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল ইত্যাদি।

 

আপনার দুর্বলতাগুলো কী কী?

প্রশ্নটি ভাইভা বোর্ডে যাওয়া অধিকাংশ প্রার্থীরই অপছন্দের একটা প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি করার কারণ হচ্ছে আপনার নিজের সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন আছে কিনা সেটা জানা।

‘আমার কোনও দুর্বলতা নেই’ এটা যেমন বোকামি তেমনি আবার ‘আমি সময়জ্ঞান ভালো না’ বলাটাও বোকামি। এই দুর্বলতা বলতে গিয়ে মূলত আপনাকে কৌশলে নিজের কিছু বাড়তি যোগ্যতা বলে দিতে হবে।

যেমন, আমি অন্যকে একটু বেশি বিশ্বাস করি, আমি কাউকে না বলতে পারি না, আমি ছোটখাট কাজকেও বেশি সিরিয়াসলি নিই ইত্যাদি বলতে পারেন।

 

৫ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

এ প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকর্তা আপনার কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আছে কিনা এবং থাকলে সেটা কেমন ধরনের পরিকল্পনা সে সম্পর্কে জানতে চান।

এ প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও কাজের ভূমিকার ওপর। এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনি আগামী পাচঁ বছরের মধ্যে নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না মোটেও। আপনি বলতে পারেন, আমি আমার এই খাতের ডিসিশন মেকার হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই, বা এমন এক পদে দেখতে চাই যেখানে এই প্রতিষ্ঠান আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে।

 

আপনি কেন বর্তমান চাকরি ছাড়ছেন?

প্রশ্নটির উত্তর দেবার সময় ভাইভা বোর্ডের প্রশ্নকর্তাদের সামনে আপনার আগের কাজের জায়গা বা কাজ নিয়ে কোন বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। তাহলে আপনার প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা হবে নিয়োগকর্তার। তারা মনে করতে পারেন, আপনি পরে অন্য কোথাও গেলেও তাদের বদনাম করবেন।

এক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন যে, আপনি আপনার যোগ্যতা প্রদর্শনে আরও বড় কোনও সুযোগ খুঁজছেন। বা আপনি নতুন বা আরও কার্যকর কিছু শিখতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সুযোগ পেলে আগের প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করুন।

 

আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কী জানেন?

এটা খুব কমন একটা প্রশ্ন। ভাইভা বোর্ডে যেকোন সময় আপনি এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন। তাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।

কোম্পানি কী কাজ করে, কী সেবা দেয় বা কী পণ্য তৈরি করে, কোম্পানির শাখা অফিস, হেড অফিস এবং কোম্পানির মালিকের সম্পর্কে জেনে রাখুন। কোম্পানির বিশেষ অর্জন আছে কিনা সেটাও জানুন। এতেও নিয়োগকর্তা বুঝবে আপনি আপনার কাজের বিষয়ে কতটা সিরিয়াস হবেন।

 

কেন আপনি এই চাকরিতে নিজেকে যোগ্য মনে করেন?

ভাইভা ইন্টারভিউ বোর্ডে শেষ মুহূর্তে এই প্রশ্নটা করা হতে পারে। যদি প্রশ্নটি করা হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। তাই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ভেবে চিন্তে। অন্য প্রার্থীদের তুলনায় আপনি কোম্পানির প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধ থাকতে পারবেন সেটা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করুন। নিজের বিশেষ কোনও যোগ্যতা থাকলে সেটাকে আবার নতুনভাবে উপস্থাপন করুন।

 

কেমন বেতন আশা করেন?

ভাইবায় বেতন নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই পারে। তারমানে এ প্রতিষ্ঠানে বেতন কাঠামো সুনির্দিষ্ট নয়। এক্ষেত্রে উত্তর দিতে হবে কৌশলে।

মনে রাখবেন, এই প্রশ্নটি তখনই করা হয়, যখন ভাইভা বোর্ডে থাকা সকলে আপনাকে এই চাকরির জন্য মনোনীত করেন। কাজের কোনও অভিজ্ঞতা নেই বা চাকরিজীবনের এটাই আপনার শুরু হলে সরাসরি টাকার অঙ্ক বলবেন না।

অভিজ্ঞতা থাকা অবস্থায় বেতনের কথা বলতে না চাইলে বলবেন যে, কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী আপনার যা প্রাপ্য তাতে আপনি খুশি।

আপনি আগে কোন চাকরি করে থাকলে আগের চাকরির বেতন ও সুযোগ সুবিধার কথা বলতে পারেন যাতে নিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।

এই প্রশ্নগুলোই সাধারণত চাকরির ভাইভায় করা হয়ে থাকে। এর বাইরে সাধারণ জ্ঞানেরও টুকটাক প্রশ্ন করা হতে পারে। সেটার উত্তর নির্ভর করছে আপনার পড়াশোনা ও জানাশোনার ওপর।

চাকরির ভাইবায় কী কী জিজ্ঞেস করে

চাকরির ভাইবায় কী জানতে চায়

চাকরির ভাইবার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে

ইতিবাচক যে ভাবনাগুলো বদলে দিতে পারে আপনার জীবন

 

চাকরিচাকরির পরীক্ষাভাইবা