অতিপ্রাকৃতিক সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার গল্প : দ্বিত

অতিপ্রাকৃতিক সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার গল্প : দ্বিত : লেখক: ধ্রুব নীল

আমি আবদুস সামাদের কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, মেটামরফসিস। আবদুস সামাদ প্রথমবার বুঝতে পারেনি। আমি আবার বললাম। আবদুস সামাদ বিব্রত হল। দ্বিতীয়বার শব্দটা ভেঙে ভেঙে বললাম। আবদুস সামাদ চোখ বুঁজে ফেলল। এক দুই তিন। দশ হাত পেছনে বিপরীত দিকে মুখ করে থাকা নুরুল আলম চিৎকার করে বলে উঠলো, মেটাফসফরাস! আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ঝট করে পেছনে দুই পা পেছালে বোধহয় সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সহসা পা চলতে চাইল না। বিস্ময়ে এদিক ওদিক তাকালাম। দর্শকরা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার বিস্ময়ে মজা পেয়েছে খুব। কয়েক সেকেন্ড কিংবা বড়জোর এক মিনিট, কথা বললাম না। বিস্ময়টাকে পরাজয়ের মতো লাগলো। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। জাদু এমন হতে পারে না! লোকটা প্রতারণা করছে না তো? সে তো খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে! কানের আশপাশে কোনো গোপন মাইক্রোফোনও লুকানো নেই। কাঠি দিয়ে নিজের হাতে খুঁচিয়ে পরীক্ষা করেছি। নেই!

অফিসে যাওয়া আসার রাস্তাটার মতো আমার পেশাটাও একঘেয়ে। একই মানুষেরা একই পথে একই সময়ে হেঁটে চলেছে। সন্ধার পর পর ওভারব্রিজ থেকে নামলেই গতানুগতিক ফুটপাতটা হাজার পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মানুষ আর মানুষের যত প্রয়োজন সেসব দেখি। এক প্রয়োজন আরেক প্রয়োজনকে গিলতে থাকে সাপের মতো। এরপর হকারদের আসর। মাঝে মাঝে টুকটাক জাদু দেখা যায় লোকগুলো। আমি জাদু দেখতে দাঁড়াই। আসলে বিস্মিত হবার লোভটা সামলাতে পারি না। সাদা কাগজ মুহূর্তে এক হাজার টাকার নোট হয়ে যাচ্ছে। বাক্সের ভেতরে কবুতর খরগোশ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেন তড়িঘড়ি বিবর্তন। আজ জাদুকর একজন নন, দুজন। বয়স ভিন্ন তবে চোখের দৃষ্টি এক, বহুদূর পর্যন্ত, যেন কোথাও স্থির হয়নি। দর্শকের প্রতি দুজনই সমান উদাসীন। কেউ তাদের জাদু দেখছে কিনা বা কেউ দেখার আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কিনা সেদিকে খেয়াল নেই।

রক্তবন্দি

জাদুটা আপাতদৃষ্টে অতি সাধারণ। আবদুস সামাদ, যার বয়স ত্রিশের মতো হবে, সে একদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। নুরুল আলমের বয়স চল্লিশের ঘরে। সে দশ হাত ব্যবধানে তাকিয়ে থাকবে বিপরীতদিকে মুখ করে। এরপর একজন দর্শক আবদুস সামাদ বা নুরুল আলমের কানে কানে একটা কিছু বলবে। সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকা অন্যজন বলে দেবে, কী ছিল সেই কথাটা। দর্শকদের কেউ একজন বলল, হালায় পুরাই ভণ্ডামি। গায়ের মইদ্যে মাইক্রোফোন গুঁইজা রাখসে আরকি। আর না হয় মুবাইলে হুইনা লয়। এর কথা হেই কানে যাওন তো কোনো ঘটনা না। এ কথা শুনে আবদুস সামাদের কপালে চিন্তার ছাপ আমার চোখে পড়ে। আমি এগিয়ে আসি। আবদুস সামাদের কান আর পরনের ময়লা শার্টটা পরীক্ষা করি। আবদুস সামাদ আর নুরুল আলম দুজনেই এরপর শার্ট খুলে ফেলে। একজনের পেটা শরীর, আরেকজনের হাড় জিরজিরে বুক স্পষ্ট হয়ে যায় দর্শকের সামনে। তাদের কারো শরীরে কোনো মাইক্রোফোন কিংবা মোবাইল চোখে পড়ে না। আরো দুজন দর্শক আগ্রহী হয়। তারা একে একে তাদের নাম কিংবা তাদের বউদের নাম আবদুস সামাদের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে। দুই সেকেন্ড বাদে নুরুল আলম চিৎকার করে সে নামগুলো বলে দেয়। কোনো না কোনোভাবে আবদুস সামাদের কানে কানে বলা কথাটা নুরুল আলমের জানা হয়ে যায়। আমার মনে হলো দর্শকরা জাদুকরের নিজস্ব লোকজন। তারা হয়তো শেখানো শব্দগুলোই বলছে আবদুস সামাদের কানে কানে। সন্দেহ মুক্ত হতে আমি আবদুস সামাদের কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, মেটামরফসিস। আবদুস সামাদ প্রথমবার বুঝতে পারেনি। আমি আবার বললাম।

আমার বিস্ময় যতটা সম্ভব বুঝতে দিলাম না। দাঁড়িয়েই রইলাম। এরপর আরো কয়েকজন একে একে বলে গেল তাদের মনে মনে বাছাই করা শব্দ। চা, বিড়ি, গুলিস্তান বা কোনো গালি। নুরুল আলম ও আবদুস সামাদ ঠিকঠাক বলে গেল সব। জাদুটা দেখতে লাগলাম। একঘেয়ে লাগলো না। অনেকক্ষণ দেখা হল। দুই জাদুকরের ক্লান্তি নেই। তবে আবদুস সামাদ যখন বলল, স্যারের তো অনেক্ষণ হইল, কিছু পয়সাপাতি দিবেন? নাকি হুদাই খাড়ায়া রইলেন। আমি আবারো অতিরিক্ত বিস্ময় গোপন করার স্বার্থে পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ ও ভাঙতি দশ টাকার দুটো নোট এগিয়ে দিলাম। আবদুস সামাদ টাকাটা পকেটে ভরে রাখলো। আমার নিজেকে খানিকটা পাগলের মতো মনে হলো। নুরুল আলমের দিকে ছুটে গেলাম। ফুটপাতে বসে বসে সিগারেট টানছিল। নুরুল আলম আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, স্যার বুঝছি কী কইবেন। আপনি আবদুস সামাদরে সত্তুরটা ট্যাকা দিসেন। ম্যাজিক শেষ। এখন যান। বাড়িত যান, জিরান।

পনের মিনিট ধরে আমি একটা পিলারের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। আশপাশে গা মাড়িয়ে মানুষজন হেঁটে যাচ্ছে। খেয়াল করার সময় নেই। আবদুস সামাদ আর নুরুল আলম পাশাপাশি বসে সিগারেট টানছে। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। ঝাড়া মিনিট পাঁচেক তাকিয়ে রইলাম। নাহ, কারো মুখে টুঁ শব্দটাও নেই। যেন কেউ কাউকে চেনেই না। নিছক অপরিচিতর মতো আলগোছে বসে বসে ভাবছে, সিগারেটে দুয়েক টান দিচ্ছে। আরো বড় বিস্ময়কর ব্যাপারটা হলো, পয়সা ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার পর দুজন দুদিকে হাঁটতে শুরু করে দিল। নুরুল আলম যাচ্ছে মিরপুর রোড বরাবর। আবদুস সামাদ ধরেছে মোহাম্মদপুরের পথ। আমার বাসা আবদুস সামাদের পথে পড়ায় তার পিছু নিলাম। আমার মস্তিষ্ক তার পরবর্তী কাজ ঠিক করে ফেলেছে, ঠিক যেভাবে চকোলেট হাতে পাওয়ার পর একটা বাচ্চার পরবর্তী কাজ হয়ে যায় সেটার মোড়ক খোলা। পার্থক্য হলো, আমি জানি না মোড়কের ভেতর কী আছে।

আবদুস সামাদ বাস বা রিকশায় চড়েনি। আমার পা ধরে এলেও রিকশা নিলাম না। পাছে আবার হারিয়ে ফেলি লোকটাকে। ত্রিশ চল্লিশ হাত দূর থেকে ফলো করছি। সে বুঝতে পারলেও কিছু যায় আসে না। কেন তাকে অনুসরণ করছি, সেটা পরিষ্কার নয়। এমন হতে পারে আড়াল থেকে তার জাদুর রহস্য বের হবে।

কয়েকটা অলিগলি পেরিয়ে চারপাশে বিল্ডিংয়ে ঘেরা একটা খোলা জায়গায় বানানো ঝুপড়ি ঘরের ভেতর ঢুকলো আবদুস সামাদ। সম্ভবত এই জায়গাটার কেয়ারটেকার সে। ঘরে ইলেকট্রিসিটি নেই। একটা হারিকেন জ্বালাতে দেখলাম। মোড়ের পানের দোকান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে আবদুস সামাদের হারিকেন। হারিকেনের আলোয় তার মুখ জুড়ে খোঁচা খোঁচা দাড়ির বিশ্রীরকম ছায়া পড়েছে। সুঠাম শরীর। পরপর তিনটে সিগারেট পোড়ানোর পরও তাকে জাদুকরী কিছু করতে দেখলাম না। তরকারি কাটাছেঁড়া, চাল ধোয়া নয়তো বসে বসে পয়সা গোনা। তবে সত্যি সত্যি তার কান বা শরীর থেকে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বের করতে দেখলাম না। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনই নেই সম্ভবত। এগিয়ে গেলাম। চোখে চোখ পড়তেই আমি মূর্তির মতো হয়ে গেলাম। আবার সেই বহুদূরে ফেলে রাখা শীতল দৃষ্টি। হারিকেনের আলোয় খোঁচা দাড়ির ছায়ায় পাথরের মতো হয়ে গেছে মুখ।

‘কী চান?’

‘আপনার জাদু নিয়ে..।’
‘জাদু তো শেষ। এখন আর দেখাইতে পারুম না। আপনি জান গা।’
‘আমি যাব না। তুমি জাদুর কাহিনী বলবে আমাকে। তা না হলে পুলিশে দেব।’
আবদুস সামাদের দৃষ্টি আবারো দূরে নিবদ্ধ। আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, আসেন, ভেতরে আসেন। শুনে মনে হলো পুলিশের কথা শুনে ভয় পায়নি, বরং আমার প্রতি খানিকটা অবজ্ঞা করেই সে ভেতরে আসতে বলল। জাদুর বিস্ময়ের কারণে তার অবজ্ঞা আমি গায়ে মাখলাম না আপাতত।
আবদুস সামাদের চোখের মতোই তার ঘরটা স্থির। ময়লা বালিশ তোষক আর এদিক ওদিক দুয়েকটা হাঁড়ি পাতিল নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে। একটা প্লেটে ভাত বেড়ে রেখেছিল। আমাকে ইশারা করতেই বিছানার ওপর বসে পড়লাম। আবদুস সামাদ আমার পাশে বসলো। আমি যতই ভ্রূ কুঁচকে তাকাই না কেন, আবদুস সামাদ সরাসরি আমার চোখে চোখ রাখছে না। চোখের দিকে তাকালেই যেন জাদুটা ফাঁস হয়ে যাবে।

‘আপনে স্যার ধরেন গিয়া একজন মানুষ।’
‘হ্যাঁ, আমি একজন মানুষ।’ মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। যেকোনো মুহূর্তে ফাঁস হবে জাদুর রহস্য। আমি পলক ফেলা ভুলে গিয়ে আবদুস সামাদের কালো চোখের মণির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি তার কথা শুনে শুনে কী বললাম সেটা ভাবার প্রয়োজন বোধ করলাম না।
‘আপনে স্যার বুঝবার পারবেন না। এইটে আসলে কোনো জাদু না। আমি জাদুকর না।’
‘কিন্তু কী করে সম্ভব!’
আবদুস সামাদের চেহারায় ঘনিয়ে ওঠা দুশ্চিন্তার কোনো মানে বের করতে পারলাম না। সে কেন দুশ্চিন্তায় পড়বে? জাদুকরের কাছে তো জাদু কোনো রহস্য হতে পারে না। নাকি আবদুস সামাদ…।
‘স্যার, ধরেন, এইটাই হয়। মানে আমার কানে যা কয় তা আমি বুইঝা যায়। মানে নুরুল আলম বুইজা যায়। ধরেন এইটা এমনি এমনিই হয়।’
‘না! মোটেই না! এইটা এমনি এমনি কখনও হবে না। জীবনেও না।’
‘আপনিতো ধরেন স্যার, আপনে যা জানেন সেইটা থেকে বলতেসেন। আপনি ধরেন জানেন না বিষয়ডা।’
‘বিষয়টা জানতেই এসেছি।’ আমি এবার আবদুস সামাদকে পেয়ে বসলাম। ছাড়বো না বাপধনকে আজ। কিছুতেই না।
‘আমিতো কইতেসি, বিষয়ডার মইদ্যে জাদু নাই। বিষয়ডা একেবারে কিছুই না।’
‘তুমি বলবেই! আমি না জেনে নড়ছি না।’
আবদুস সামাদ এ প্রথমবার আমার চোখে চোখ রাখলো। নাকি দ্বিতীয়বার রাখলো, মনে পড়লো না। তবে এ দৃষ্টি আর দূরে নিবদ্ধ হতে দেখলাম না। এ দৃষ্টি সরাসরি আমাকে দেখছে। আমার একেবারে ভেতরে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে প্রশ্ন। যেন জানতে চাচ্ছে, আমি কেন সহজ বিষয়টা ধরতে পারছি না।
‘আপনি যা ধরবার পারবেন না, সেইডাই জাদু?’
‘আমি আমার উত্তর চাই।’
‘আর আমি যদি কই, এইডার কোনো উত্তরই নাই। এইডা কোনো প্রশ্নই না।’
‘তুমি না বলতে চাইলে বলো না। তুমি আরেকজন, কি যেন নাম বললে, সেই নুরুল আলমের ঠিকানা দাও। তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো।’
‘লাভ নাই। আমি যা জানি, সেও তা জানে। স্যার, আফনে ভাববেন আমার মাতা নষ্ট।’
‘আমি এরইমধ্যে তা ভাবতে শুরু করেছি। অথবা সবই আমার চোখের আর কানে শোনার ভুল।’
‘স্যার মনে করেন, আপনি একটা কিছু জানেন। ঠিকাছে? এরপর যদি আমি জিগাই, আপনি যে জানেন, কেমনে জানেন? মানে আপনি যে জানেন, এইডা সত্য তো? আপনি তখন কী বলবেন? আপনে বুজাইবেন কেমতে? আমি আসলে বলবার লাগসি যে আপনি একটা কিছু জাইনা ফালাইলে সেই কতা তো আপনিই জানবেন, আর কারোর তো জানার কতা না। আমিও ওমনে জানি আরকি।
আবদুস সামাদ আরো কয়েকবার আমাকে এলোমেলো বাক্যে একটা কিছু বুঝাবার চেষ্টা করলো। পরে হাল ছেড়ে দিল। আমি তার ঘর ছেড়ে যখন বের হয়ে আসবো এমন সময় সে বলল, স্যার আমারে এক সপ্তাহ টাইম দেন। আর এই লন ঠিকানা। আপনি আমি নুরুল আলমরে পাইবেন এইখানে। তখন বুজাইয়া দিমু সব।

এক সপ্তাহ শেষে আমি ঠিকানা অনুযায়ী হাজির। এই এক সপ্তাহ কতটা উদ্বেগ আর মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হয়েছে তা আর বলছি না। নুরুল আলমের ঘর বেশ পরিপাটি। বউ আছে, বাচ্চা আছে। ছোট একতলা দুই রুমের খুপরি ঘরে সংসার। ঘরের সামনে বারান্দার মতো খোলা জায়গা। সেখানেই একটা চেয়ারে বসে আছি। আবদুস সামাদও আছে। সে বারান্দার এক কোণে চুপচাপ বসে আছে। আমার সামনে ফ্লোরে পা গুটিয়ে বসে সিগারেট টানছে নুরুল আলম। বাসায় ঢুকতেই ঠিক আবদুস সামাদের মতো আমার ভেতরটা একপাক দেখে নিয়েছিল নুরুল আলম। এরপর আবার সেই একই দূরে ছুড়ে ফেলে রাখা পাথুরে দৃষ্টি। নুরুল আলম বড় করে টান দিল সিগারেটে। এরপর দীর্ঘ এক সপ্তাহে গুছিয়ে আনা কথাগুলো খুব আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলো।

‘আমি প্রথমে হই ১৯৭২ সনে। প্রথমে হই মানে ধরেন নুরুল আলম হিসেবে আমার জন্ম আর কি। বাপে ধরেন মইরা গেছে যখন এই এইটুন ছিলাম আরকি। এরপর মায়ের কোলত বড় হইলাম।’
থামলো নুরুল আলম। আমার চোখে আবার সেই ভীতিকর চাহনি রেখে বলল-
‘বছর দশেক পর আমি আবার হই। মানে আমার আবার জন্ম হয় স্যার। নরসিংদীতে। তখন ধরেন গিয়া আমার নাম রাখা হয় আবদুস সামাদ। বয়স চাইর পাঁচ বৎসর হওনের পর ঘটনাটা ধরবার পারলাম। আমি নুরুল আলম, আমিই আবদুস সামাদ। কাউরে এ কথা কইলে আমারে পাগল কয়। আমি তো আর বুজাইতে পারি না। নিজেরে লইয়া পড়ছি বিপদে। নিজেরে মানে, আবদুস সামাদ আর নুরুল আলমরে লইয়া আর কি। পরে দেইখলাম, আসলে ঘটনা খারাপ না। দুইটা থাকন বালা। একখানের খবর আরেকখানে পাইয়া যাই। তাও দেখি কেউ কিসু কয় না। হ¹লে কয় মাতা নষ্ট। এটা হুনতে হুনতে মাতা আমার আসলেই নষ্ট হইয়া গেলগা। আমি বুইজতে পারলাম না মানুষ একটা ক্যান। হ¹লে আমার মতো দুইটা কইরা অইলে তো বুজতো। তারপর ধরেন আমি আবদুস সামাদ পরিবার ছাইড়া চইলা আসলাম ঢাকায়। উঠলাম এক গ্যারেজে। ততদিনে আমি আবদুস সামাদের বয়স দাঁড়াইল বিশ আর আমি নুরুল আলমের ত্রিশ। আমি নুরুল আলম বিয়া কইরা ফালাই জোছনা বেগমরে। সংসার করনের পর চাইলাম আমি আবদুস সামাদ আমি নুরুল আলমের লগে থাকি। কিন্তু বউ দিল না। হেও কইল আমি পাগল। দুনিয়াতে মানুষ যা বুজবার পারে না, হেইটারে পাগল কয় ক্যালা? আমার মেজাজ খারাপ হইল। আমি আবদুস সামাদ চইলা আইলাম মোহাম্মদপুরে, কেয়ারটেকারগিরি শুরু করলাম। আর আমি নুরুল আলম সংসার কইরবার লাগলাম জোছনা বেগমের লগে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায়। তখন আমি নুরুল আলম রিকশা চালাইয়া কামাই করতাম ভালই। কিন্তু আমি আবদুস সামাদের ইনকাম কম। আমি নুরুল আলম গিয়া গিয়া আবদুস সামাদরে ট্যাকা দিতাম মাজে মইদ্যে। পরে ধরেন একবার মোহাম্মদপুরে আমি আবদুস সামাদ দেইখা ফালাইলাম এক বিরাট ঘটনা। একটা বিল্ডিং ধুড়ুম কইরা আছড়াইয়া পড়লো। আমি নুরুল আলম বউরে কইলাম ঘটনাটা। বউ টিভিতে দেখল, আরে ঘটনা হাঁছাইতো! বউ আমারে তখন বুদ্ধিটা দিল। তুমি জাদু দেখাও না ক্যালা! হেরপর থেইকা জাদু শুরু। আমি আবদুস সামাদের কানে কানে যা কয়, হে কথা তো অটোমেটিক আমি নুরুল আলম জাইনা ফালাই। ঘটনা আসলে তেমন কিসু না।’

প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছি কিনা বুঝতে পারলাম না। আবদুস সামাদের দিকে তাকালাম। তার পুরনো কথাগুলো মনে পড়লো, ‘স্যার মনে করেন, আপনি একটা কিছু জানেন। ঠিকাছে? এরপর যদি আমি জিগাই, আপনি যে জানেন, কেমনে জানেন?’ আবদুস সামাদ আর নুরুল আলম যদি একই লোক হয়, তবে একজনের কথা আরেকজন কী করে জানবে, এমন প্রশ্নের জন্মই তো হয় না। আমি কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। আবদুস সামাদ মাথা তুলে আমাকে বলল, আপনারে কেউ একটা কতা কইলে আপনে তো সেইটা বুজবেন, এইর মইদ্যে তো জাদু নাই?
আমি আমার একান্ত নিজের মাথাটা কয়েকবার এদিক ওদিক নেড়ে বললাম, না নেই।

 

To send Donation for the Green Guerrilla project :

01976-324725 (Bkash)

storiesগল্পধ্রুব নীল