Site icon Mati News

সায়েন্স ফিকশন গল্প টিম্ভুত

ধ্রুব নীলের সায়েন্স ফিকশন গল্প টিম্ভুত

 


‘ওই যে দেখতাসো। সামনের দাঁত নাইওয়ালা লোকটা। খবরদার ওর সামনে যাইবা না!’
‘টেকো মাথা? চা খাচ্ছেন যিনি কপাল কুঁচকে?’
‘হ। ও কিন্তুক মানুষ না, ওইটা একটা ভূত। দিশাভূত।’
‘দিশা ভূত কী জিনিস? দিয়া ভূত টাইপের?’
‘ওই একই কথা। দিয়া ভূতের বাপ! যারে ধরে সে দিশহারা হয়। পুরা ভ্যাবলা হইয়া ঘুরতে থাকে। আমারে অবশ্য এহনও ধরে নাই।’
এসেছিলাম মটুয়া গ্রামে বেড়াতে। বিকেলটা ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম এদিক ওদিক। গ্রামটা বেশ মায়াময়। যেতে ইচ্ছে করে না। আমার স্কুল বন্ধুদের অনেকের বাড়ি এখানে। চাকরিজীবনে ঢোকার পর অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তবে অনেক দিন পর ইদ্রিস কাকার দেখা পেলাম। তিনিই আমাকে সতর্ক করলেন লোকটার ব্যাপারে। আগাগোড়া যাকে মানুষই মনে হচ্ছে। তবে অদ্ভুত একটা ব্যাপার তো আছেই। চোখে ঠিকমতো ধরা পড়ছে না এখনও। স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে লোকটাকে ভাল করে দেখলাম। চোখে কেমন যেন হাসি লেগে আছে। তারচেয়েও বড় কথা তাকে আমি কোথায় যেন দেখেছি। অনেক অনেক দিন আগে।

কিন্তু অনেক অনেক দিন আগে যাকে দেখেছি ইনি যদি তিনি হন, তবে আরো বুড়ো হয়ে যাওয়ার কথা। গ্রামের রাস্তার মোড়ে একটা চায়ের দোকানে চুপচাপ বসে চা খাচ্ছে। গায়ে পরিষ্কার ফতুয়া ও ঢিলেঢালা প্যান্ট। আশপাশের লোকজনও তাকে এড়িয়ে চলছে। এক তরুণ দোকানে এসে ইতস্তত করতে করতেই কিছু না নিয়ে চলে গেলে।

স্পষ্ট বোঝা গেল লোকটাকে দেখে সে ভয় পেয়েছে। আমি ইদ্রিস কাকার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাব ঠিক করলাম। তখুনি লোকটা দূর থেকে সরাসরি আমার দিকে তাকাল। ফোকলা দাঁত বের করে হাসি দিল। গা শিউরে উঠলো আমার। আমাকে হাত ইশারায় ডাকছে লোকটা!

‘জ্বি আমাকে ডেকেছেন?’
‘কেমন আছেন ফয়সল সাব?’
‘জ্বি ভাল। আপনি?’
‘চা খাইবেন?’
‘না খাব না। কিছু খাব না। আপনি খান। আপনার নাম?’
‘ভূতের আবার নাম কিসের! হেহেহে।’
লোকটার তালে তালে আমিও হাসার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার হাসি আর থামে না। এতক্ষণ হাসার মানে হয় না। দোকানদার বিড়বিড় করে কী যেন বলছে। সম্ভবত কোনো সুরা পড়ছে। একটু পর পর লোকটার দিকে তাকিয়ে ফুঁ দিচ্ছে। সেই ফুঁ এসে আমার গায়েও লাগছে। আচমকা হাসি থামল লোকটার। ঘাবড়ে গেল দোকানি। ছু ছু করে কী যেন তাড়ানোর চেষ্টা করছে।
‘চলেন যাই। আপনের লগে একটু কথাটথা বলি।’
‘আপনাকে আমি কোথায় যেন দেখেছি।’
‘কী জানি বাপু। নাম আমার নিশিকান্ত। লোকে বলে দিশাভূত। কেউ বলে দিয়াভ‚ত। তা ফয়সল সাব আপনার পরিবারের কথা বলেন। বাসায় কে কে আছে?’
‘জ্বি, স্ত্রী, এক মেয়ে, বয়স দুই বছর। আর মা। আপনার?’
‘আমার কেউ নাইক্কা। আমি আসলেই একটা ভূত।’
‘জ্বি, তা ঠিক বলেছেন। থাকেন কোথায়?’
‘আমি এখানে থাকি না। মাঝে মাঝে থাকি। আবার মাঝে মাঝে গায়েব। তা আপনি কতক্ষণ হইলো এখানে ঘুরতাসেন। ঢাকা থেইকা কখন আসছেন মটুয়া গেরামে?’
হাঁটতে হাঁটতে একটা বড় তালগাছের গোড়ায় এসে দাঁড়ালাম আমরা। হুট করে মনে করতে পারলাম না আমি কখন এসেছি। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। ঢাকা থেকে বাসে করে এসেছি। কিন্তু কটার বাস ছিল? আজ কি আমার অফিস ছুটি? আজ কী বার? ধুর! কিছুই মনে পড়ছে না।
‘বেশি টেনশন লইয়েন না। আপনারে ভূতে ধরে নাই। আপনি আইজ দুপুরে গাড়ি থেকে আসছেন। আইজ শনিবার। আইজকা আপনার অফিস ছুটি।’
‘জ্বি জ্বি। তা আপনার নাম কী বললেন?’
‘নিশিকান্ত।’
লোকটার নাম শুনে নয়, অন্য আরেকটা বিষয় ধরতে পেরে প্রচণ্ড ভয় পেলাম। অন্যরকম ভয়। লোকটা আমার নাম জানলো কী করে! টেকো মাথার লোকটা তার গোলগাল মুখখানা বাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ডরাইসেন?’


চোখ মেলে তাকালাম। চোখ খুলতে খুব কষ্ট। ইসস এত রোদ কেন! চোখে লাগে! ধুর! সূর্যটা বেশি বেশি। আরেকটু ঘুমাতে পারলে! ‘অ্যাঁ! আমি কোথায়!’ ঝট করে উঠে দেখি একটা গ্রাম। আমার মাথার কাছে একটা তালগাছের চারা আর স্কুল ব্যাগ। আমি কিনা ঘুম! ছি! ছি! তাড়াতাড়ি দেখলাম আশপাশে। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি! সাদা শার্টে ময়লাও লেগেছে। লাগুক। আজ তো স্কুল ছুটি। রাতে ধুয়ে দিলেই হবে। শার্টের ময়লা দেখলে আবার কামাল স্যারের বেত পড়বে। আমার বন্ধু সালাউদ্দিনের বাড়ি মটুয়া গ্রামে। ক্লাস শেষে ওর সঙ্গে গল্প করতে করতে চলে এসেছিলাম। যাওয়ার সময় সম্ভবত একটু বসে পড়েছিলাম রাস্তার ধারে, ছায়া দেখে। আর বসতে না বসতেই কিনা ঘুম! আজ আমার খবরই আছে। সন্ধ্যা হয়ে গেল। ভাবনা চিন্তা পরে, আগে বাসায় যাই। মা বকবে।
পরদিন স্কুল। রেডি হয়েই দৌড়। বাইরে দিপু দাঁড়িয়ে। সরকারি কোয়ার্টারের সীমানা পেরিয়ে ধুলোবালির রাস্তা মাড়িয়ে সোজা স্কুলের মাঠে। পিটি ক্লাস হবে একটু পর। মোটকু জনি আর রিয়াদ কী নিয়ে যেন লেগেছে। একজন আরেকজনকে শাসাচ্ছে। তবে দুজন বেশ দোস্তও। ‘ওই লম্বু জিকো, আমাকে একটু তুলে ধর। আকাশ থেকে একটা পাখি পাড়ি।’ জিকোর হাসিটা বেশ মিষ্টি। বেশি লম্বা বলে খানিকটা কুঁজো হয়ে হাঁটার চেষ্টা করে। ‘তার আগে আমাকে একটা আইসক্রিম খাওয়া।’ ইশারায় আইসক্রিমওয়ালাকে দেখালো জিকো। আহা নিশিকান্ত আইসক্রিম ভ্যান! আমাদের প্রিয় মুখ। চকচকে টেকো মাথার নিশিকান্ত যখনই টিংটিং আইসক্রিম বলে গান ধরে, মনে হয় আশপাশটা এমনিতেই ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আজ নিশিকান্ত আমাকে ডাকছে। আগে যাকে ডাকে, তার জন্য ফ্রি আইসক্রিম!
‘কাকা! দিন দিন, আগে আমার ফ্রিটা দিন। তারপর ওই লম্বুকে একটা কুলফি দিন।’
‘খোকা তুমি কেমুন আছো? ভাল? এই নাও। তা তুমি ভাল আছো ফয়সল?’
‘কী ব্যাপার কাকা এক প্রশ্ন এতবার করছেন কেন?’
নিশিকান্ত কাকার কথাবার্তা আর চাউনি কেমন যেন অন্যরকম লাগছে আজ। অন্য কোনো আইসক্রিমওয়ালা হলে নির্ঘাৎ ছেলেধরা হতো। কিন্তু উনাকে তো আমরা অনেক দিন ধরে চিনি।
‘বাবা, বইলছিলাম কি, তুমি ভাল আছ কিনা। মানে তোমার সব কিছু ঠিকঠাক মনে আছে কিনা। আইচ্ছা, কও তো আজকে কী বার?’
‘আজকে কী বার হবে! শনিবার!’
‘হুম। সকালে কী দিয়া নাস্তা করসিলা মনে আছে?’
‘রুটি আর ভাজি। কেন?’
‘না তাইলে ঠিক আছে।’
সন্দেহ হচ্ছে আমার। নিশিকান্ত আইসক্রিমওয়ালার ছদ্মবেশ ধরে নেই তো? হতেও পারে! আমি হলাম গোয়েন্দা কিশোর পাশা। আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না বাছা। দাঁড়াও আজ তোমাকে ফলো করা হবে। ও, না। আজ তো আবার শেষে নেপাল স্যারের ক্লাস। ওটা ফাঁকি দেওয়া যাবে না।
‘অ্যাই ফয়সল, ক্লাস শুরু! জলদি আয়।’
রানার ডাক শুনে আপাতত গোয়েন্দাগিরি বন্ধ। কিন্তু রানা এলো কোথা থেকে? ওর না পেট খারাপ! আরে আবদুল আলিম ক্লাসের বাইরে কী করে! ও তো সিরিয়াস ছাত্র। ওমা! ক্লাসের ফার্স্টবয় সাক্ষর রায় দুটো কেন? ওর তো যমজ ভাই নেই! কুলফিতে কিছু মিশিয়ে দেয়নি তো নিশিকান্ত? কিন্তু স্কুলের মাঠে সবার সামনে তো আর…।


খোলা মাঠে কতক্ষণ শুয়ে থাকা যায়! হাত-পা ঝেড়ে উঠে বসলাম। কোমরের ব্যথাটা বেড়েছে। বিকেলে খোলা মাঠে শুয়ে নীল আকাশের দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকলে অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। চলি­শ পেরুনোর পর থেকে এই ধরনের অনুভূতি বেশ টানে আমাকে। এমন সময় বেসুরো রিংটোন।
‘হ্যালো’
‘ফয়সল সাহেব, আপনি তো আমাকে পাণ্ডুলিপিটা মেইল করলেন না।’
‘ওহ। ভুলে গিয়েছি। মনে থাকে না আজকাল।’
‘এখন তো ঝামেলায় পড়ে যাব।  প্রুফ হবে, তারপর প্রেসে পাঠাব। তারমধ্যে আবার আর্টিস্ট নাকি অসুস্থ। মহাবিপদে আছি ভাই।’
‘আচ্ছা আমি মোবাইল থেকে ফাইলটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনার ইমেইল এড্রেসটা যেন কী, বারবার ভুলে যাই।’
‘জ্বি খুব সহজ। নিশিকান্ত বি এট জিমেইল। নিশিকান্ত.. এন আই এস এইচ..।’
‘থাক, ও বলতে হবে না। ওটা আমার জানা।’
‘আপনি ভাই তারকা লেখক। ইমেইল ভুলে যাওয়ার কথা। আমি তারপরও এসএমএস করে দিচ্ছি।’
আমি আবার সটান শুয়ে প্রকাশক নিশিকান্তের এসএমএস-এর অপেক্ষা করতে থাকলাম। আকাশের ছুটে যাওয়া দানবীয় মেঘগুলো দেখতে দেখতে এক সময় ভয় ধরে। মনে হয় আমি এত ছোট! আবার পরক্ষণেই মনে হবে আমি অনেক বড়! আকাশের মতো! নিশিকান্তের কথা ভাবলাম। লোকটাকে দেখলেই মনে হয় আস্ত একটা রহস্যোপন্যাস। চোখ দুটো হাসি লেগে থাকে। তার দিকে তাকালেই মনে হয় কোথায় যেন দেখেছি। অবশ্য তাকে আমি গত পাঁচ বছর ধরেই দেখছি। একটা উপলক্ষ পেলেই বাসায় হাজির। অনেকক্ষণ বক বক করার পর পাণ্ডুলিপি চাই বলে জেঁকে ধরবে।
আকাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যথারীতি আমাকে আবার অপার্থিব ভয়টা চেপে ধরলো। মনে হচ্ছে যেন আমি উপরে উঠে যাচ্ছি। এখুনি ধপাস করে পড়বো। না না, আকাশটাই ধপাস করে আমার ওপর পড়বে। বড় বড় মেঘগুলোকে দেখতে ভয়ানক লাগছে। এত বড়! এত বড়! ওরা আরো বড় হচ্ছে! আকাশটা আরো গভীরে চলে যাচ্ছে। আর আমি উঠছি তো উঠছি!


আশপাশে যন্ত্রপাতির পিঁ পিঁ শব্দ যেন সেই আদিকাল থেকে শুনছি। থামছেই না। মাথা ধরিয়ে ছাড়ল আমার। চোখ মেলে তাকাতেই শুধু সাদা। চোখে আলো সয়ে আসতেই দেখি আমার মেয়ে, নুহা। ও সহজে কাঁদে টাঁদে না। শক্ত মেয়ে। এখন দেখি চোখ মুছছে। আমাকে চোখ মেলতে দেখে আবার হাসলো। আমি হাত ওঠানোর চেষ্টা করলাম। পারলাম না। বয়সের সব ভার যেন হাতে এসে ঠেকেছে।
‘নুহা.. ও নুহা.. তোর মা কইরে। এত কাঁদলে তো দেশে টিসুর আকাল পড়ে যাবে।’
‘মার শরীর ভাল না। বাসায় আছে। পরে আসবে। আর আমি এসব কান্নাকাটির মধ্যে নাই। অনেক কাজ বাকি। তুমি ঘুমাও।’
‘আর কত ঘুমাবো। এত ঘুম তো আমি ক্লাস ফাঁকি দিয়েও ঘুমাইনি। তা বড়ুয়া কই গেল। ওকে ডাক, জরুরি কথা আছে।’
‘উনি একটু বাইরে। আমাকে বলল তোমার সঙ্গে যেন একটু কথাটথা বলি। কিন্তু আব্বা এসব কথাটথা বাদ। তুমি তাড়াতাড়ি ভাল হও। আমার নতুন সিনেমায় তোমার একটা রোল করতে হবে।’
‘আবার সেই দাদার রোল? বয়স না হয় সত্তর হয়েছে। তাই বলে একটু নায়ক টায়ক হতে পারবো না?’
‘ঠিকাছে। মাথায় থাকলো। কিন্তু নায়িকা জোগাড় করতে পারব না কিন্তু। মা শুনলে তোমার মাথা ফাটাবে।’
‘হেহেহে। টিম্ভুতটাকে একটু ফোন দে। জরুরি।’
ফোন হাতে নুহা উঠে যেতেই আমি সিলিংয়ের দিকে তাকালাম। বিজ্ঞানী বড়ুয়া আমার অনেক দিনের বন্ধু। আমি তাকে ডাকি টিইম্ভুত নামে। তার সঙ্গে আমার একটা গোপন মিশন আছে। সিরিয়াস মিশন। হাতে সময়ও বেশি নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমার যা অবস্থা যেকোনো সময় মারাটারা যেতে পারি। তার আগে একটু ঘুরে আসতে চাই। অনেক দিনের জন্য। ওহে বিজ্ঞানী বড়ুয়া তুমি দেরি করছো কেন এত!
‘হুম। এসে গেছি। এবার বলুন তো মশাই, শেষমেষ কী সিদ্ধান্ত নিলেন? আমাকে আবার আজ রাতেই লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে হবে।’
ঘরে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকতেই কথাটা বলল বড়ুয়া। আমি সিলিং থেকে চোখ না সরিয়েই বললাম, ‘ওহে টিম্ভুত। আমার মনে হয় একটা স্টেবল টাইমলাইন পেয়েছি। ১৯৯৫ কিংবা ১৯৯৬। ওতে খুব একটা নড়চড় হবে না। হলেও সামলে নিতে পারব। সেখানেই যাব।’
‘আপনি শিওর? সব অবশ্য আগের মতোই ঘটবে। চিন্তা নেই।’
‘তুমি থাকতে আমার আবার চিন্তা করা লাগে নাকি। সময় নিয়ে তোমার কাজ কারবার। সাধে কি আর তোমাকে টিম্ভুত বলি। টিম্ভুত মানে হলো টাইম ভূত। বুঝলে?
‘হেহেহে। জানি জানি। চলুন ঘুরে আসা যাক। আবার ধরুন গিয়ে পঞ্চাশ বছর পর আমাদের দেখা হবে। গুডবাই।’
আমি হাত নেড়ে টাটা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তার আগেই বিজ্ঞানী বড়ুয়া ওরফে টিম্ভুত তার হাতে থাকা ছোট্ট যন্ত্রের সুইচটা চেপে দিল। ঘুমের অতলে হারিয়ে যাচ্ছি। কিছু কিছু টেরও পাচ্ছি। বড়–য়ার মোবাইলে রিং বাজছে। ফোন রিসিভ করলো। ‘হ্যালো বিজ্ঞানী এন বড়ুয়া স্পিকিং। ইয়েস ইয়েস.. এন ফর নিশিকান্ত.. নিশিকান্ত বড়ুয়া। ইয়েস.. ফ্লাইট কনফার্ম করুন।’ চোখের সামনে থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল টেকো মাথার গোলগাল চেহারার লোকটা।


খোকনের গলা শুনলাম সবার আগে। ‘অ্যাই! অ্যাই! দেখ, ফয়সল চোখ খুলেছে!’। সবুজ বলল, ‘ওর মাথায় পানি দে। আজকে যে গরম, আমার নিজের মাথাই ঘুরায়।’
‘আরে না না, ওরে দিয়া ভূতে ধরসে! হেহেহে।’ সবকিছুতেই মজা করে রাশেদ। কথাটা সে-ই বলেছে।
‘অ্যাই তোরা সর! দেখি তো! এই যে ফয়সল, বাবা তোর কেমন লাগছে এখন?’ নেপাল স্যারের বাজখাঁই গলা শুনে ভেতরটা শুকিয়ে গেল। ভাবছি আরো কিছুক্ষণ বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকবো নাকি। নাহ, লজ্জার বিষয়। পরে খেপাবে ছেলেপেলে। যা হবার হবে। চট করে উঠে বসলাম। নেপাল স্যার মাথায় হাত রাখলেন। ‘উঁহু, এই রকম চিংড়ি মাছের মতো লাফ দিলে তো হবে না বাছা। এদিকে আয়। ওই বেঞ্চে আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাক।’
‘না স্যার, ইয়ে এখন ঠিক আছে।’
‘তো ঠিক থাকলে সোজা বাসায় যা। তোর ছুটি। এই যে লাটবাহাদুর সঞ্জয় চক্রবর্তী, তুই ওকে বাসায় দিয়ে আসবি, বুঝলি!’
পেছন থেকে চিৎকার দিয়ে উঠলো রাজন- ‘স্যার ফয়সলের বাসা আমার বাসার কাছে। আমি সঙ্গে যাই?’ আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেঁচিয়ে উঠলো পপেলও। ছাড় দিতে রাজি নয় মোরশেদ, সাফায়েতসহ আরো অনেকে। আমি জানি। এতে খুশি হওয়ার অত কারণ নেই। ওরা ক্লাস ফাঁসি দেওয়ার জন্য এমন করছে। আমি হলাম গোয়েন্দা। এসব বুঝতে পারা আমার এক সেকেন্ডের কাজ।

Exit mobile version