রোমান্টিক কমেডি নাটকের চিত্রনাট্য : নীল চকোলেট (স্ক্রিপ্ট)

ধরন: কমেডি

রচনা: ধ্রুব নীল

চরিত্র

  • সাত্তার—বয়স ৪৫/৫০
  • সাত্তারের কর্মচারী মিজান—৩০-৩৫
  • তান্ত্রিক—৬০-৬৫+
  • তান্ত্রিকের ছেলে—১৮-২৫
  • তান্ত্রিকের স্ত্রী—৪৫/৫০
  • পিউর মা—৪৫/৪৮
  • পিউ—২২-২৫
  • সাত্তারের বাবা—৭০+
  • সাত্তারের মা—৭০

দৃশ্য সংখ্যা: ২১টি

[নাটকটির চিত্রনাট্য পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো। এ নাটকের নাট্যকার জনপ্রিয় লেখক ধ্রুব নীল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সরাসরি মেসেজ করতে পারবেন বা ফোন করতে পারবেন 01976324725 নম্বরে। তবে কিছুতেই তার অনুমতি ছাড়া এই নাটকের কোনো অংশ চিত্রায়ন করা যাবে না।]

কাহিনি সংক্ষেপ | রোমান্টিক কমেডি নাটকের স্ক্রিপ্ট : নীল চকোলেট

মফস্বল শহর। সাত্তারের বয়স পঞ্চাশের ঘরে। এখনও প্রেম হয় নাই, বিয়ে তো দূরের কথা। এলাকাবাসী এ নিয়ে তাকে বেশ বিদ্রুপ করেও। এলাকার তরুণী পিউকে খুব ভালো লাগে সাত্তারের। কিন্তু সাত্তারকে দেখলেই হাসে, আংকেল ডাকে।

সাত্তারকে এক তান্ত্রিকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয় তার দোকানের কর্মচারী মিজান। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তান্ত্রিক সাত্তারকে একটা নীল ক্যান্ডি দেয়। সেটা পিউকে গছিয়ে দেয় সাত্তার। পিউ ক্যান্ডিটা ঘরে রাখে। সেটা আবার নিজের কাছে রেখে দেয় তার মা। পিউর বাবা নেই। মায়ের বয়স সাত্তারের কাছাকাছি। তার মনেও প্রেমের ফাগুন। নীল চকলেটের সাইড এফেক্ট দেখতে সাত্তার হাজির হয় পিউদের বাসায়। সাত্তারকে দেখে পিউর মা’র মনে প্রেমের ফাগুন শুরু হয়ে যায়। পিউর মা সাবিলা সাত্তারের প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সাত্তার। সে জানতে পারে চকলেটটা খেয়ে ফেলেছে পিউর মা। কিন্তু তন্ত্রমন্ত্রের প্রেম সাত্তারের ভালো লাগে না। সে সাবিলার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। সাবিলা সাত্তারের বাড়িতে এসে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। সাত্তারের বৃদ্ধ বাবা-মা মহাখুশি। সাত্তার সাবিলাকে শেষে সরাসরি ‘না’ বলে দেয়। এদিকে সমাধানের জন্য আবার তান্ত্রিকের কাছে গিয়ে দেখে, ভন্ডামির দায়ে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সাত্তার ঘর থেকে বের হয় না। পিউ সাত্তারকে বলে সে তার মায়ের জন্য বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। পাত্র প্রবাসী। সাত্তারের মন খারাপ হয়। এরপর…

দৃশ্য-১

[আউটডোর। পিউর পিছু নিয়েছে সাত্তার]

সাত্তার: আরে, তুমি পিউ না?

পিউ: প্রতিদিন দেখেন। তাও নামটা মনে রাখতে পারেন না আংকেল। আপনার নাম তো আমি জানি। আপনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় সাত্তার আংকেল।

সাত্তার: সবার প্রিয় হওয়ার কী দরকার। তোমাদের কয়েকজনের প্রিয় হলেই হলো। ভার্সিটিতে যাচ্ছো?

পিউ: না, আজ বান্ধবীর সঙ্গে সিনেমা দেখবো। বাংলা সিনেমা। রাকিব খানের নতুন সিনেমাটা আছে না, কেয়ামতের তুফান। ওটা দেখবো আর চেঁচাব। হলে সিনেমা দেখছি চিৎকার চেঁচামেচি করতে।

সাত্তার: ও, বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নিয়ে দেখার দরকার নাই। বান্ধবী নিয়া যাওয়া ভালো।

পিউ: জি চাচাজি, আমার বয়ফ্রেন্ড সিনেমা দেখে না। ও একটা ননীর পুতুল। সারাদিন পড়ে। বড় হয়ে ডাক্তার হবে তো, তাই।

সাত্তার: [কাশি দিল] ইয়ে। সব ইয়ার্কি কিন্তু ভালো না। এই চাচাজি কাকাজি আবার কী!

পিউ: তাহলে মামা ডাকি?

সাত্তার: তোমার জন্য রিকশা ঠিক করে দিব কিনা সেটা বলো।

পিউ: না মামা, আমার তো রিকশা নেই। আর আপনি রিকশা ঠিক করবেন কেন? আপনি রিকশার মেকানিক? রাইড শেয়ারিংয়ে কল দিব। মোটরসাইকেল এসে নিয়ে যাবে।

সাত্তার: আমাকে বললেই হয়, বাইকটা নিয়া আসি।

পিউ: জি নিয়ে আসুন।

সাত্তার চলে যেতেই চলে গেল পিউ। তারপর আরেকটা মোটরসাইকেলে উঠে গেল।

দৃশ্য-২

[সাত্তারের দোকান। সঙ্গে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট মিজান]

মিজান: সাত্তার ভাই। এবার ঘোষণাটা দিয়ে দেন।

সাত্তার: না। আর একটা বছর দেখিরে।

মিজান: দেখতে দেখতে পঞ্চাশের ঘরে। পাড়ায় কথা চালাচালি হইতেসে। আপনার অপমান মানে আমার অপমান।

সাত্তার: এখনও তো যা একটু চান্স টান্স আছে। চিরকুমার থাকার ঘোষণা দিলে তো পরে সম্ভাবনা জিরো।

মিজান: ঘরে বউ না থাক। আপনার একটা নাম থাকব এলাকায়। আপনি হইবেন চিরকুমার সংঘের সভাপতি। আমি সাধারণ সম্পাদক। পদের একটা দাম আছে। তাছাড়া, তখন পাবলিক আর আপনারে নিয়া উল্টাসিধা কিছু বলবে না।

সাত্তার: উল্টাসিধা কী কয়?

মিজান: এই যে.. মেয়ের বয়সী মাইয়াদের পিছে পিছে ঘোরেন, দোকান বন্ধ রাইখা চইলা যান। খুবই অপমানজনক। খুব।

সাত্তার: আমি কী করবো। একটা চান্স তো নিতে হইব নাকি! এক বার না পারিলে…।

মিজান: এই লাইনে শতবার চেষ্টা করতে গেলে ধোলাই খাইবেন। লোকে কইব আপনি বিশ্ববেহায়া।

সাত্তার: [নিজের চুল টেনে] তাইলে আমার কী হবি! ক কী হবি! এই সুন্দর বাবরি চুল রাইখা কী করমু ক। পাঁচচল্লিশ হাজার টাকা দিয়া গ্রাফটিং করা চুল আমার।

মিজান: আমারে কইসিলাম হাজার পাঁচেক ধার দেন, সেইটা দিলেন না। এই চুলফুল..।

সাত্তার: ভালো হয়ে যা মিজান! ভালো হয়ে যা।

[শান্ত হলো সাত্তার]

সাত্তার: [কবিতার সুরে] তেত্রিশটা বসন্তু যখন কাইটা গেছে তখন কেউ কথা রাখে নাই। এরপর আরও সতেরটা বসন্ত কাইটা গেছে। তারপরও কারও খবর নাই। গুষ্টি কিলাই বসন্তের।

মিজান: [মোবাইল স্ক্রলিং করতে করতে] পাইসি!

সাত্তার: কী।

মিজান: মনের আশা পূরণ, অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করা, বিয়া-শাদি আটকে আছে, বাণ মারা, মনের মানুষকে কাছে পাওয়া.. কাজের পরে টাকা।

সাত্তার: দেখি দেখি। আরে দুর, এসব তাবিজ-তুমারে আমি বিশ্বাস করি না। ধান্দাবাজির সোয়াসের।

মিজান: আপনি পত্রিকা পড়েন না। মাঝে মাঝে কিছু খবর দেখবেন, প্রেমিকের বাড়ির সামনে প্রেমিকার অনশন। এসব এমনে এমনে ঘটে মনে করসেন? সবই তন্ত্র মন্ত্রের খেলা ভাই।

মিজান: [ফোন স্ক্রল করে পড়ছে] তান্ত্রিক রাউটার সরকারের দরবারে আসিবার পূর্বে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে যোগাযোগ করিবেন।

[সাত্তার উঁকি মেরে ফোন নাম্বারটা দেখে নিল]

মিজান: যাইবেন?

সাত্তার: আরে দুর।

দৃশ্য-৩

[পিউর বাসা। পিউ ও তার মা সাবিলা। সাবিলা বারান্দায় ল্যাপটপে গান শুনছে ইউটিউবে]

[গান: আর কতকাল একা থাকবো…]

[পিউ বিরক্ত হয়ে বসলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। মা উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে বাইরে।]

পিউ: মা এসব কী শুনছো! ছি! আজ তোমার অফিস নেই?

সাবিলা: তোকে শুনতে বলেছি? নিজে তো সারাদিন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঢেং ঢেং করে ঘুরে বেড়াস। আমি একা একা থাকি সেটা চোখে পড়ে না?

পিউ: তোমার বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করো, ঘুরতে যাও। অফিসের কাজ করো। কত কিছু করার আছে। ইয়োগা প্র্যাকটিস করো।

সাবিলা: জ্ঞান দিবি না! খবরদার! তোর বয়স পার করে এসেছি, তা না হলে দেখতি আমার পিছে কয়টাকে নাচাতাম! অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। আজ আমার মন ভালো নেই।

পিউ: বাবার কথা মনে পড়ে না?

সাবিলা: অ্যাঁ..! গত পনের বছর ধরে মনে রাখতে রাখতে আমি হাউড়া হয়ে গেছি। বেঁচে থাকতে তোর বাপ আমার কয়বার ভাবতো শুনি! সারাক্ষণ বিজনেস বিজনেস করে পরে ঠুস করে হার্ট অ্যাটাক করে মরেই গেল।

পিউ: ভলিউমটা একটু কমাও। পাশের বাসায় শুনবে!

সাবিলা: যাহ! যা সামনে থেকে! দূর হ! আমার গান আমি শুনবো। চৌদ্দগুষ্টিকে শোনাব।

পিউ: যাচ্ছি! বাই দ্য ওয়ে, মা হাউড়া মানে কী?

সাবিলা: কী?

পিউ: তুমি যে বললে, তুমি হাউড়া হয়ে গেছো। এর মানে কী?

সাবিলা: জানি না! মাথায় আসছে বলসি। বেশি বকবক করলে তোর বিয়াশাদি বন্ধ। সারাজীবন টেশকা হয়ে থাকবি।

পিউ: টেশকা?

[সাবিলা গান চেঞ্জ করে দিলো। এবার বাজতে শুরু করলো, একা একা আর ভালো লাগে না।]

পিউ বিরক্ত হয়ে উঠে গেল।

দৃশ্য-৪

[সাত্তারের বাড়ি। সাত্তার ও তার বৃদ্ধ বাবা-মা]

[বাবা ফুটবল খেলা দেখছেন। ধারাভাষ্যকারের সঙ্গে উত্তেজনায় তিনি গোল গোল বলে চেঁচাতে গিয়ে কাশতে শুরু করেছেন।]

বাবা: দেখলি! দেখলি! কুকুরেলার পাস দেখলি! বাপের ব্যাটা স্পেন। চারটা! চারটা ইউরো জিতেছি বুঝলে সাত্তারের মা।

সাত্তারের মা: খেলা দেখে এতো উত্তেজিত হও, একটা দিন তো হার্ট অ্যাটাক করতে দেখলাম না!

সাত্তারের বাবা: সাত্তার!

সাত্তার: জি আব্বা।

বাবা: কীসের দোয়ায় জানি গরু মরে না?

সাত্তার: ইয়ে আব্বা এত উত্তেজিত হবেন না। আপনার বয়স হয়েছে।

মা: তো, তুমি যে গরু সেটা স্বীকার করলা?

বাবা: আমি হলাম ভিভা এসপানা! এত সহজে মরার পাত্র না। বাই দ্য ওয়ে, বাবা সাত্তার, বয়স আমার হয়েছে নাকি তোমার?

সাত্তার: জি আব্বা দুইজনেরই।

বাবা: তা ঘর সংসার তো কপালে নেই। বেঁচে গেছো। তাই বলে জীবনটা ওই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই কাটিয়ে দেবে ঠিক করেছো নাকি? দেশ জাতির জন্য একটা কিছু করো।

সাত্তার: না আব্বা। দেশ-জাতির জন্য আমারে দিয়ে কিছু হবে না। আমি বিয়ে করতে চাই। কয়দিন পর পর বন্ধুর ছেলেমেয়েদের বিয়ের দাওয়াতে যেতে হয়। একা একা যেতে খুবই শরম করে।

বাবা: তুমি আমার সামনে থেকে বিদেয় হও। যাও। আউট!

সাত্তার: আম্মা, রেহানা আপনাকে আর ফোন করে নাই?

মা: কেন? সে কেন ফোন করবে?

সাত্তার: ওই যে, আমার ইয়ের ব্যাপারে। সে নাকি কাকে দেখেছে।

মা: ওই মেয়ে একটা আস্ত বেয়াদপ। আমার এইটুকুন ছেলে, বলে কিনা তার বয়স বেশি।

সাত্তার: তুমি একটু কমিয়ে টমিয়ে বলতে পারলা না?

বাবা: এক কাজ করো। কিছু পয়সাপাতি খরচ করে নতুন একটা বার্থ সার্টিফিকেট বানাও।

সাত্তার: সেটাও করতাম, এখন আবার সব অনলাইন হয়ে গেছে আব্বা।

বাবা: গাধা!

দৃশ্য-৫

[সাত্তার তার দোকানে বসে নিজে নিজে বক বক করছে।]

সাত্তার: একান্নটা বসন্ত কেটে যাওয়ার আগেই একটা কিছু করতে হবে। তোমাকে দিয়েই হবে সাত্তার মন্ডল, তোমাকে দিয়েই হবে।

সাত্তার: এই যে আমার এত সুন্দর একটা মন, এই মন আমি কাকে দিই। কে নেবে আমার এই মন। আল্লাহর দুনিয়ায় কেউ কি নাই?

[এক নারী ভিক্ষুক আসবে। উসকোখুসকো চুল]

ভিক্ষুক: ভাইজান কিছু দিবেন?

[সাত্তার পাথরের মতো তার দিকে কিছুক্ষণ তাকাল। এরপর পকেট থেকে বিশ টাকা দিল।]

ভিক্ষুক: স্যার, দোয়া করি, আপনার পোলা-মাইয়া বিসিএস অফিসার হইব।

[ভিক্ষুক চলে যেতে ধরবে। সাত্তার তাকে ফেরাবে]

সাত্তার: এই শোনো। এই নাও আরও বিশ টাকা। এবার বলো, স্যার আপনার যেন জলদি জলদি বিয়ে হয়।

[ভিক্ষুক টাকাটা নিলো]

ভিক্ষুক: স্যার, দোয়া করি আপনার পোলা-মাইয়ার যেন জলদি জলদি…।

সাত্তার: দুর! ছাতার মাথা! যাও! যাও কইতাসি!

সাত্তার: [ফোন বের করে সার্চ করতে করতে বলছে] যাব? চান্স নিয়ে দেখবো? সত্যিই যদি কাজ হয়? কবি তো বলেছেনই, যেখানে দেখিব ছাই, সেখানেই যেন তারে পাই।

দৃশ্য

[তান্ত্রিকের বাসার কলিং বেল দেবে সাত্তার। তান্ত্রিক দরজা খুলে ঘুরে দাঁড়াবে। সাত্তারের দিকে না তাকিয়েই বলবে]

তান্ত্রিক: আসুন। আসুন। সাত্তার সাহেব।

সাত্তার: বাহ। আপনি আমার নাম জানেন।

তান্ত্রিক: ট্রুকলারের নাম শোনেন নাই?

সাত্তার: বাহ বাহ। আপনি তো বেশ আধুনিক।

[তান্ত্রিকের বাসা বেশ আধুনিক, পরিচ্ছন্ন। সাত্তার দেখে অবাক]

তান্ত্রিক: কী ভেবেছেন? একটা গুহার ভেতর মুরগির হাড়গোড় আর আগুন জ্বালিয়ে নেংটি পরে বসে থাকবো? একটু পর পর আগুনের মধ্যে ধূপকাঠি ফেলবো আর হুম হাম করে মন্ত্র পড়বো?

[বিব্রত সাত্তার উপরনিচ মাথা নাড়ল]

তান্ত্রিক: আমার নাম হারাধন সরকার। ইচ্ছে করে নাম বদলে রেখেছি রাউটার সরকার। শুনে যেন মনে হয় আমি কিছুটা আধুনিক।

সাত্তার: আপনার তো ভাই অনেক বুদ্ধি!

তান্ত্রিক: তা সমস্যা কী আপনার? সন্তানের বিদেশ গমন হচ্ছে না? নাকি স্ত্রী কারও সঙ্গে পালিয়ে গেছে?

সাত্তার: আরে কী যে বলেন। বিয়েই হয়নি, আবার সন্তান।

তান্ত্রিক: ও বুঝতে পেরেছি। তা বশিকরণ নাকি বিবাহ? কোন সমাধান চাও? স্যরি তুমি করে বললাম। তোমার বয়স খুব বেশি মনে হচ্ছে না। চুল টুল পাকেনি তো।

সাত্তার: [খুশিতে গদগদ] কী যে বলেন… হে হে। আমাকে তুই তুই করে বললেও সমস্যা নাই। তা সমস্যা দুইটাই। মানে ওই যাকে বিবাহ করতে চাই, তাকে বশে না আনলে বিবাহ করা মুশকিল।

তান্ত্রিক: মেয়ের বয়স কম?

সাত্তার: তা বলতে পারেন। বয়স সমস্যা না। সমস্যা হইল সে আবার অন্য একজনকে পছন্দ টছন্দ করে।

তান্ত্রিক: আমি আবার কাজের আগে টাকা পয়সা নেই না। তবে তোমার কেইস আলাদা। কাজ করার জন্য কিছু জিনিসপাতির দরকার হবে। সেগুলো নিয়ে আসতে হবে।

সাত্তার: তা পারবো। আমার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে। সবই পাওয়া যায়। কী লাগবে?

[তান্ত্রিক বলা মাত্রই সাত্তার পকেট থেকে কলম বের করে হাতে লিখতে শুরু করবে]

তান্ত্রিক: এই দুই কেজি ডিটারজেন্ট পাউডার, দুটো মুরগির পা, ব্রয়লার হলে হবে না, দেশি মুরগি।

সাত্তার: জি আস্ত মুরগি নিয়ে আসবো।

তান্ত্রিক: মেয়ের একটা ছবি।

সাত্তার: মোবাইলে আছে। এই যে।

তান্ত্রিক: হুম। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, তাই না? তাহলে এক কেজি করে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, কিছু গরম মশলা, ডিশ ওয়াশিং সাবান, গুঁড়া দুধ; আপাতত এ কটা হলেই হবে। আর কাজের পর ক্যাশ দশ হাজার।

সাত্তার: জি, লিস্ট হয়ে গেছে।

তান্ত্রিক: হুমম। তা আমার উপর বিশ্বাস আছে তো? বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে ঘোড়ার ডিম।

সাত্তার: তা সত্যি বলতে কি বিশ্বাসে কিছুটা কমতি আছে। মানে, এই প্রথমবার তো। জীবনে এসব সমস্যায় পড়ি নাই।

তান্ত্রিক: বশিকরণের প্রমাণ দেখতে চাও? একেবারে হাতে নাতে দেখাই?

সাত্তার: জি, স্যারের যদি আজ্ঞা হয়।

তান্ত্রিক: এক মিনিট! কই গো! এদিকে আসো।

[তান্ত্রিকের বউ এলো হন্তদন্ত হয়ে। তার চোখে মুখে বিনয় উপচে পড়ছে।]

স্ত্রী: হে প্রাণপ্রিয় স্বামী, আমাকে ডেকেছেন? বলুন কী সেবা করতে পারি? চা খাবেন? নাকি মাথা টিপে দিব?

তান্ত্রিক: না না। টিপাটিপির দরকার নাই। আমার পিঠটা একটু চুলকাইয়া দিয়া যাও।

[তান্ত্রিকের স্ত্রী তড়িঘড়ি করে তান্ত্রিকের পিঠ চুলকাতে শুরু করলো]

তান্ত্রিক: একটু উপরে, আরেকটু উপরে হ্যাঁ, ঠিক আছে। আর শোনো একটু পর আমাদের চা-বিস্কিট দিবা। আমারটা চিনি ছাড়া।

স্ত্রী: জি স্বামী।

তান্ত্রিক: আর শোনো। আগামী দুই মাস তোমার জামাকাপড় কেনা বন্ধ, কোথাও যাওয়াও বন্ধ। ঘরে বসে বসে আমার সেবা করবা। ঠিক আছে?

স্ত্রী: জি অবশ্যই। আপনি যা বলবেন, অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।

তান্ত্রিক: যাও, চা নিয়া আসো আর রতনকে আসতে বলো। বুঝলে সাত্তার। রতন আমার একমাত্র ছেলে। আগে একদমই কথা শুনতো না। বিরক্ত হয়ে দিলাম বশিকরণ তাবিজ। এখন একদম সোজা।

রতন: বাবা ডেকেছেন?

তান্ত্রিক: হ্যাঁরে। তোকে যে মেয়েটা পছন্দ করে, তাকে না করে দিয়েছিস তো?

রতন: জি বাবা। তাকে বলেছি, জীবনেও আমার সঙ্গে কথা না বলতে। কথা বললে তার ব্যাগে আমি রাসেল ভাইপার সাপ রেখে দিব।

তান্ত্রিক: সাপখোপ রাখা লাগবে না। পরে আবার মামলা হবে। দেশে গণ্ডগোল, বাইরে যাবি না একদম।

রতন: জি বাবা, আপনি আদেশ দিলে আমি খাটের নিচে ঢুকে বসে থাকব। তবে এমনি এমনি থাকব না, সঙ্গে ক্যালকুলাস আর কম্পিউটার সায়েন্সর সব বই নিয়ে ঢুকবো। এরপর দিনরাত শুধু পড়বো আর পড়বো।

[সাত্তার মুগ্ধ হয়ে দেখছে]

তান্ত্রিক: ঠিক আছে যা।

রতন: বাবা, যাওয়ার আগে আপনার পা টা একটু টিপে দিয়ে যাই।

তান্ত্রিক: দিবি? দে।

সাত্তার: স্যার, আমি কাজের পরে না স্যার। আগেই দিব! যা যা লাগে আপনি সব কিনে নেন। এই নিন স্যার, নগদ দশ হাজার আছে।

[তান্ত্রিক টাকাটা গুনে পকেটে ঢোকাল]

তান্ত্রিক: রেডিমেড মন্ত্র নেবে? বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট তোমার মতো এই সমস্যা নিয়েই আসে। তাই আমি অ্যাডভান্স তৈরি করে রাখি।

সাত্তার: আপনি যা দেবেন তা-ই নিব।

তান্ত্রিক: রতন যা তো, বাকশোটা নিয়ে আয়।

[রতন একদৌড়ে বাক্স নিয়ে আসলো। তান্ত্রিক সেখান থেকে একটা নীল কাগজে মোড়ানো ক্যান্ডি দিল সাত্তারকে]

তান্ত্রিক: এই নাও।

সাত্তার: বাহ, নীল চকলেট? খাবো?

তান্ত্রিক: আরে নাহ। তুমি খাবে কেন। যারে মনে ধরসে তারে খাওয়াইবা। খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে অ্যাকশন। দেখবা সুর সুর করে হাজির।

[সাত্তার চকলেটটা অতি যত্নে বুকপকেটে নিয়ে চলে গেল]

[দরজা লাগানোর পরই চেহারা বদলে যাবে রতনের।]

রতন: কই বাবা। হাজারখানেক দাও। বাইকে তেল নাই।

তান্ত্রিক: পাঁচশ নে।

রতন: উনাকে ডাক দিব? এ ভাই!

তান্ত্রিক: ফাজিল ছেলে! এই নে ধর!

[স্ত্রী এসে দাঁড়াল সামনে। তান্ত্রিক বেজার মুখে গুনে গুনে প্রথমে দুই হাজার টাকা দিল। স্ত্রী সামনে থেকে সরলো না। পরে আরও দুই হাজার দিল।]

দৃশ্য-৭

[সাত্তার ও পিউ। সাত্তার আজ খোশ মেজাজে।]

সাত্তার: আরে পিউ। তোমারে কতদিন দেখি না।

পিউ: কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন।

সাত্তার: কেন সিনেমা শুরু হয়ে যাইতেসে নাকি। কী সিনেমা দেখবা?

পিউ: আজ দেখবো খুনি বাতাসা। সিনেমার নায়িকা খুন করে বেড়ায়। তার খুন করার রোগ আছে। ব্যাগে একটা খুর নিয়ে ঘোরে। এই যে এই রকম।

[পিউ ব্যাগ থেকে ক্ষুর বের করে দেখাল।

সাত্তার: আরে কী ডেঞ্জারাস! মাথা ঠান্ডা করো। এই নাও চকলেট খাও। খুর টুর নিয়ে তুমি ঘুরবা কেন। তুমি তো নাপিত না।

পিউ: ভাবছি কাউকে ধরে তার চুল কেটে দেব। তারপর সেটা ভিডিও করে রিল বানিয়ে বলবো, উত্যক্ত করার সাজা। ভাইরাল হওয়ার দরকার, বুঝলেন।

সাত্তার: আহা। কী সব উল্টা সিধা চিন্তাভাবনা। এই তোমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের.. মানে.. ইয়ে না মানে.. এই আমার চেয়ে যারা একটু অল্পবয়সী আর কি.. তোমরা আরেকটু ধীরস্থির চিন্তা করতে পারো না? এই লও চকলেট খাও। চকলেট খাইতে খাইতে যাও।

পিউ: এইটাকে চকলেট বলে আংকেল? এটা হলো ক্যান্ডি। কোন কোম্পানির এটা? নামধামও লেখা নাই। আর চকলেট হলো ওই বড় চারকোনা যেটা সেটা। আপনার দোকানে আছে। ওটা দেবেন।

সাত্তার: ওহ। আচ্ছা। ওটা কালকে দিব। আজকে এইটা নাও। আর এই লও আমার ফোন নাম্বার।

পিউ: আপনার নাম্বার দিয়ে কী করবো।

সাত্তার: এমনি রাখো। বিপদে আপদে পড়লে কল টল দিবা।

পিউ: আমি কেন বিপদে পড়ব। বিপদে পড়বেন আপনি। এখনও একটা আন্টি ম্যানেজ করতে পারেন নাই। বুড়া বয়সে একা একা থাকবেন।

সাত্তার: দুর। মেজাজ গরম করে দিতাসো। যাও যাও। সিনেমা দেখো গিয়া।

[পিউ হাঁটা দিল]

সাত্তার: মনে কইরা চকলেটটা খাইও।

দৃশ্য-৮

[পিউ তার ব্যাগ আর চকলেট রাখল টেবিলে। মা সাবিলার রুমে ঢুকতেই তিনি ঝট করে ল্যাপটপের ডালা নামিয়ে দিলেন। পিউ থমকে দাঁড়ায়। চোখ কুঁচকে তাকায়। তারপর কী যেন ভাবে। তারপর মাথা নাড়ে।]

সাবিলা: আমার বান্ধবী মিলার সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওই যে কানাডা থাকে যে।

পিউ: তোমার সব বান্ধবীকে আমি চিনি মা!

সাবিলা: নাহ। একে চিনিস না। একে কখনও দেখিসইনি।

পিউ: যা খুশি করো! যার সঙ্গে খুশি কথা বলো! খবরদার কাউকে তোমার ফোন নম্বর বা বাসার ঠিকানা দেবে না।

সাবিলা: এসব কী বলছিস! ছিহ। ছিহ পিউ।

পিউ: [ভেংচি কেটে] ছি! পিউ ছি! এভাবে ছি ছি করলে লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যাবে মা।

সাবিলা: আজ আমি একা বলে তোর যা তা কথা আমাকে শুনতে হচ্ছে।

পিউ: খবরদার! ডায়ালগ দেবে না। এখানে ক্যামেরা ট্যামেরা নেই। আর তুমি অভিনয় ভালো পারো না।

সাবিলা: আমি অভিনয় পারি না! হুহ! একবার যদি শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতাম না তো দেখতি। অবশ্য আমার সঙ্গে মানাবে এমন নায়ক আছে নাকি এখন। এখন তো সব চ্যাংড়া ছেলেপেলেরা কাজ করছে।

পিউ: চেষ্টা করলে ওদের মা-খালার রোল অবশ্যই পাবে।

[সাবিলা রাগ করে উঠে গিয়ে দেখবে টেবিলে ক্যান্ডি রাখা। সেটা হাতে নিল। তবে খেলো না।]

দৃশ্য-৯

[সাত্তার স্বপ্ন দেখছে। পিউ ও সে বসে আছে ঘাসের ওপর।]

পিউ: সাত্তার ভাই আপনি কেমন আছেন?

সাত্তার: আমি ভালো আছি পিউ।

পিউ: আপনি এত হ্যান্ডসাম, সিনেমা করেন না কেন?

সাত্তার: আমি সিনেমা করলে রাকিব খানরা কী করবে? ওরা তো না খেয়ে মরবে।

পিউ: হা হা হা [হাসিতে চুল উড়ছে]

সাত্তার: মনে করো আমরা সিনেমা করতেসি। এখন তুমি একটা গান ধরো।

পিউ: ঠিক আছে। কিন্তু লোকটা কী চায়?

সাত্তার: কোন লোক?

[টাক মাথার পেটমোটা এক বয়স্ক লোক মুখ ভার করে বসে আছে সাত্তার ও পিউর সামনে]

লোক: ভাই, আড়াই গ্রাম ইসবগুলের ভুসি দেন। খুব জরুরি।

সাত্তার: ভাই, দেখছেন না ব্যস্ত আছি।

লোক: ভাই, আড়াই গ্রাম ইসবগুলের ভুসি দেন। খুব জরুরি।

সাত্তার: আপনারে দেখি কলসেন্টার রোগে ধরেছে। একই কথা বারবার বলছেন। আর আমি তো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের ডাক্তার না।

লোক: ভাই, আড়াই গ্রাম ইসবগুলের ভুসি দেন। খুব জরুরি।

লোক: ভাই, আড়াই গ্রাম ইসবগুলের ভুসি দেন। খুব জরুরি।

[সাত্তার চোখ মেলে তাকাল। দোকানে ঘুমিয়ে পড়েছিল]

লোক: ভাই, আড়াই গ্রাম ইসবগুলের ভুসি দেন। খুব জরুরি।

সাত্তার: দিলেন তো স্বপ্নটার তেরটা বাজাইয়া! যান! ভুসি টুসি নাই। কাছা টাইট দিয়া বইসা থাকেন। পেট খালি করার দরকার নাই। দিনকাল ভালো না। পেট যত ভরা থাকবে, তত মঙ্গল।

[লোক তড়িঘড়ি করে চলে গেল]

সাত্তার: [ফোন দেখল] কল আসে না কেন। কল আসে না কেন।

সাত্তার: [মনে মনে] চকলেটটা খেলো কিনা সেটাই তো জানি না। সরাসরি গিয়ে দেখে আসবো নাকি।

[দোকান বন্ধ করে সাত্তার বাইকে উঠল]

দৃশ্য-১০

[সাত্তার পিউদের বাসার সামনে। তার পকেটে একটা ক্যাডবেরি চকলেট। দরজা খুলল পিউর মা সাবিলা। খুলেই তার চোখ আটকে গেল।]

সাবিলা: আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি।

সাত্তার: জি সাত্তার জেনারেল স্টোরে। পিউ কি বাসায় আছে?

সাবিলা: না তো। মনে হয় স্বপ্নে দেখেছি আপনাকে। নাহ, তা হবে কেন। আপনাকে কেন স্বপ্নে দেখবো। হাহ। কী সব বলছি।

সাত্তারের: পিউ আছে? ও ভালো আছে? সব ঠিকঠাক?

সাবিলা: ও তো বাসায় নেই। তা আপনি..।

সাত্তার: জি আমিই সাত্তার। আপনি পিউর কে হন?

সাবিলা: আমি ওর মা। যদিও দেখে মনে হয় না হে হে।

সাত্তার: ওহ। আচ্ছা। আন্টি ভালো আছেন?

[সাবিলার মুখ কঠিন হয়ে গেলেও সামলে নিল]

সাবিলা: কী চাই?

সাত্তার: ও চকলেট কিনতে চেয়েছিল। এই যে নিয়ে এসেছি। আমি আবার আপনজনদের হোম ডেলিভারি দেই। আন্টি আপনার যা লাগবে…।

সাবিলা: এক মিনিট এক মিনিট। তোমার এসএসসি কবে জানতে পারি।

সাত্তার: তা ইয়ে মানে, এই আটাশি, উননব্বই হবে আর কি।

সাবিলা: বাহ! আমারও তো তাই। আমরা তো ক্লাসমেট! কী দারুণ। আমাকে তুমি করে বলবে। আমার নাম সাবিলা। তারপর সাত্তার কী খবর তোমার। ভেতরে আসো, চা-কফি খেয়ে যাও।

সাত্তার: ইয়ে। ইয়ে। আচ্ছা। পিউ..।

সাবিলা: পিউ বাসায় নেই। কোনো সমস্যা নেই। আসো আসো। আরে আমরা তো সেইম ব্যাচের। কতদিন পর কারও সঙ্গে দেখা হলো। তা ছাড়া তুমি তো এখনও বেশ হ্যান্ডসাম আছো।

সাত্তার: কী যে বলেন আন…আনন.. আপা।

সাবিলা: হাহাহা। জোকস করছো না। ভালো। ভালো। সেন্স অব হিউমার যাদের ভালো, তাদের আমার খুব ভালো লাগে।

সাত্তার: আপনি মুরুব্বি মানুষ। আপনার কেন জোকস ভালো লাগবে?

সাবিলা: তুমি দেখি এখনও আপনি আপনি করছো। আচ্ছা.. আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোমাকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি।

সাত্তার: প্রশ্নই আসে না। হে হে। আমি যাই আজ?

সাবিলা: এত কষ্ট করে এসেছো। তা সেদিনের চকলেটটাও কি তুমি দিয়েছো?

সাত্তার: তা একটা দিয়েছিলাম। ওটা আমি মাঝে মাঝেই দেই।

সাবিলা: ওহ চকলেটটা যা মজার ছিল! একদম তোমার মতো ইশপিটিশপি।

সাত্তার: [মনে মনে] সেরের ওপর সোয়া সের! খাইসে আমারে।

সাবিলা: কী বললে?

সাত্তার: না না। ওই চকলেট আপনি খেয়েছেন? পুরোটা?

সাবিলা: হুমমম। এখন তুমি কী খাবে বলো, চা কফি, নাকি জুস।

সাত্তার: আমি বিষ খাব। ইয়ে মানে, আমার ডায়াবেটিস আছে। এসব খাই না। লিভারেও সমস্যা। ডাক্তার বলেছে হার্টের পরীক্ষা করাতে, হার্টে সম্ভবত অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে।

সাবিলা: আহারে, তোমার যত্ন নেওয়ার কেউ নেই বুঝি। বিয়ে তো নিশ্চয়ই করোনি। দেখেই মনে হচ্ছে। বিয়ে করলে এমন ঢোলা প্যান্ট পরে ঘুরতে না। একটু বসো, তোমার জন্য একটা প্যান্ট নিয়ে আসছি। পিউর বাবার প্যান্ট তোমার ঠিক মানিয়ে যাবে।

[সাবিলা উঠে যেতেই সাত্তার দৌড়ে পালালো।]

দৃশ্য-১১

রাস্তায় সাত্তার। গটগট করে হাঁটছে। পথে পিউর দেখা।

পিউ: আংকেল হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

সাত্তার: বনবাসে যাচ্ছিরে মা।

পিউ: অ্যাঁ, মা?! কী হয়েছে আপনার! শরীর ভালো?

সাত্তার: আমারে মাফ করে দিস মা। বাড়ি ঘর দোকান ছেড়ে পালাবো, সেই উপায়ও নাই। বিরাট ভুল করে ফেলেছি। এখন যে কী করি।

পিউ: কী ভুল করেছেন? সেটা শুনি, তারপর মাফ টাফ করা যায় কিনা।

সাত্তার: তোর জন্য চকলেট নিয়ে গিয়েছিলাম। তোর মা সেটা খেয়ে ফেলেছে।

পিউ: ও। এতে আপসেট হওয়ার কী আছে। আপনার দোকানে তো আরও চকলেট আছে। আবার নিয়ে আসবেন।

সাত্তার: কেমনে বুঝাই। কেমনে বুঝাই। দুর। ছাতার মাথার চকলেট। ওইটা ছিল পড়া চকলেট।

পিউ: পড়া মানে? চকলেট আবার পড়াশোনা করে নাকি।

সাত্তার: এই জেনারেশনরে এসব কেমনে বুঝাই।

[পিউ কিছু না বলে অবাক। সাত্তার গটগট করে হাঁটা দিল। একটু পর আবার ফিরে তাকাল]

সাত্তার: [নিজে নিজে] খাইসে আমারে। মোটরসাইকেল তো রেখে আসছি। এখন আবার যাব?

সাত্তার: পিউ! ও পিউ! আংকেল একটু কথা শোনো। একটা হেল্প দরকার। তোমার বয়ফ্রেন্ডকে ফোন করে বলো, ও যেন আমার মোটরসাইকেলটা একটু আমার বাসায় দিয়ে যায়।

পিউ: ও তো বাইক চালাতে পারে না। আমার মা পারে। মাকে বলবো দিয়ে আসতে।

সাত্তার: না না! আমি নিয়ে আসবো পরে। তোমার মা যখন অফিসে যাবে আমাকে ফোন দিও, আমি নিয়ে আসবো।

পিউ: ইয়ে, আচ্ছা ওকে।

দৃশ্য-১২

[পিউ ও সাবিলা। পিউর বাসা। সাবিলা পুরনো দিনের প্রেমের গান শুনছে।]

পিউ: কী হলো আবার! বিরহ বাদ দিয়ে এখন মনে প্রেমের তুফান লেগেছে নাকি?

সাবিলা: তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার, জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।

পিউ: থাক! গান শুনছো, সেটাই শুনো। এসব ল্যাচকাল্যাচকি প্রেমের কবিতা শোনাবে না। উফফ। তোমার রোগে আমাকেও ধরেছে। ল্যাচকাল্যাচকি! হোয়াট দ্য হেল। এসব আমি কী বলছি!

সাবিলা: আমার মনে ইশটি লেগেছেরে!

পিউ: কী লেগেছে? ওহ। বুঝছি। এটাকে ইশটি বলে না। এটাকে বলে ভীমরতি।

সাবিলা: আচ্ছা, কাউকে খুব ভালো লাগলে কী করিস তোরা? তাকে বলতেও পারছিস না, আবার সইতেও পারছিস না। এমন হয়?

পিউ: তুমি আবার না বলে থাকবা, এটা তো বিশ্বাস হয় না। ঘটনা কী সেটা বলো।

সাবিলা: নারে, আমি ঝনঝনা টাইপের মেয়ে না। আমারও একটু লাজশরম আছে।

পিউ: মা, তোমাকে নতুন কোনো ভাইরাসে ধরেনি তো? নাকি এটা করোনার সাইড এফেক্ট? জ্বর আছে? দেখিতো?

সাবিলা: [ওভার অ্যাকটিং করে] তুই আমাকে একটুও বুঝতে পারিস না! সবসময় মনে করিস আমি একটা টেশকা। আমারও একটা মন আছে বুঝলি!

পিউ: আচ্ছা ঠিক আছে। ঠিক আছে। কান্নাকাটি বন্ধ করো। এখন বলো ছেলে কোথাকার কী করে.. ছেলে বলবো নাকি আব্বা বলবো.. আচ্ছা থাক.. আগে বলো, যাকে পছন্দ করেছো তার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলবো কিনা। ঠিকানা দাও।

সাবিলা: [হাসি মুখ] আমি থাকতে তোর কষ্ট করতে হবে কেন। আমিই যাব কথা বলতে।

পিউ: আজই যাও না।

সাবিলা: নাহ। আজ আবার পার্লার বন্ধ হয়ে গেছে তো।

পিউ: মা! ইউ আর.. আন..আন…পসিবল!

সাবিলা: আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান। আমি জেনে শুনে…।

দৃশ্য-১৩

[সাত্তার বিমর্ষ মুখে দোকানে। এমন সময় সাবিলা আসলো।]

সাবিলা: কেমন আছো সাত্তার?

[সাত্তার চমকে উঠবে]

সাত্তার: আ আমি ভালো নাই। আ আ আমার পেট খারাপ। মিজান আছে দোকানে। আমি এখন বাসায় যাব।

সাবিলা: আহা। এ জন্যই তো কাঁচকলার ভর্তা আর ভাত নিয়ে এসেছি। সারাদিন দোকানে বসে থেকে কী না কী খাও।

মিজান: আমার জন্য আনসেন খালাম্মা?

সাবিলা: এই ছেলে কান ধরো! সাত্তার ওকে কান ধরতে বলো। খালাম্মা! খালাম্মার লাবাঙ্গা খাওয়াবো তোকে!

[সাত্তার ইশারায় ধরতে বলল। মিজান বড়ই বিরক্ত হয়ে কান ধরল।]

সাবিলা: এবার দশবার বলো, আপনি আমার আপা।

মিজান: আপনি আমার বইন। আপন মায়ের পেটের বড় বইন।

সাবিলা: খাবারটা নাও সাত্তার। দুপুরে খাবে। আর কাল আমি একটু তোমাদের বাসায় যাব। আংকেল আন্টির সঙ্গে কথা বলে আসবো। তুমিও থাকবে।

সাত্তার: ইন্নালিল্লাহ। আম্মা আব্বারে আবার কী বলবেন।

[সাবিলা খাবারের টিফিন ক্যারিয়ার রেখে চলে গেল]

সাত্তার: মিজান!

মিজান: কান ছাড়মু?

সাত্তার: না ধরে রাখ। মানুষ খাল কেটে কুমির আনে। আমি কুমির আনতে গিয়ে খাল এনে ফেলেছি। এখন খালে ডুবে মরতে হবে। সব দোষ তোর।

মিজান: জি, অবশ্যই আমিই দোষী। আমি হইলাম বিরোধী দল। সব দোষ আমার।

দৃশ্য-১৪

[সাবিলা সাজগোজ করে বসে আছে সাত্তারের বাবা-মার সামনে। সাত্তারের বাবা-মা বেশ হাসিখুশি। সাবিলা এরইমধ্যে সাত্তারকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে]

মা: নাও, মা। সেমাইটা খাও। চিনি বেশি দেইনি।

সাবিলা: চিনিতে কোনো সমস্যা নেই আম্মা। আমার ডায়াবেটিস আছে। আর ডায়াবেটিস থাকলে তো নিয়ম আছে, একদিন চিনি বেশি খাওয়াই যায়।

বাবা: ঠিক! রাইট! ইউ আর অ্যাবসলুটলি রাইট। এটাই আমি সাত্তারকে বোঝাতে পারি না।

মা: কিন্তু মা, তুমি যা বলছো, আমার নিজের কানকে এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। ঘটনা কি সত্য?

সাবিলা: নিজের কানকে বিশ্বাস করবেন কেন আম্মা! নিজের কানকে কখনও বিশ্বাস করবেন না। আগে পরীক্ষা তারপর বিশ্বাস। আপনার একমাত্র ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে, এটা শুনেই তো আর আমার হাতে তাকে তুলে দেবেন না, তাই না? আগে আমি কী করি না করি, কত বেতন পাই সব খবর নেবেন।

মা: হ্যাঁ গো মা..। তুমি কী…।

সাবিলা: অবশ্য.. আপনাদের হাতে তো আর কোনো বিকল্পও নেই। ও নিশ্চয়ই আপনাদের ঘাড়ের ওপর ভূতের মতো বসে আছে, তাই না?

বাবা: রাইট, রাইট। তোমাকে আমার অলরেডি পছন্দ হয়েছে মা। এই নাও, আরেকটা মালাই চপ।

সাবিলা: বাবা, নিন আপনি আরেকটা চমচম খান।

সাত্তার: [ঘরের ভেতর থেকে মিষ্টি খাওয়ার প্রতিবাদ জানাল] আব্বা! একটা অলরেডি খাইসেন।

সাবিলা: ও আপনাদের পুত্র তাহলে ঘরে? সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছে? বেশ বেশ লজ্জা আজকাল ছেলেদেরও ভূষণ।

বাবা: আরে না, খাচ্ছি না। [সাবিলাকে ইশারায় বলল, জলদি দাও। সাবিলা মুখে তুলে খাইয়ে দিল]

সাবিলা: আমার মা-বাবা বেঁচে নেই তো, তাই নিজের গরজে চলে এসেছি। তাছাড়া বিয়েশাদির আলাপ করার মতো যথেষ্ট বয়সও হয়েছে। কদিন পর মেয়ের বিয়েও দিতে হবে। হে হে হে।

মা: না না। কী যে বলো। তুমি এখনও কত ইয়াং। তোমার মেয়ে আমাদের নাতনি, সে মেনে নেবে তো?

সাবিলা: মেনে নেবে না মানে, আমার গায়ে এখনও অনেক শক্তি আছে। উল্টোপাল্টা কিছু বললে একদম পিটিয়ে কুক্কা বানিয়ে দেব।

মা: বাহ… বেশ বেশ। তা তুমি বললে একটা কোম্পানিতে চাকরি করো।

সাবিলা: টমসন টায়ার কোম্পানিতে এইচআর ম্যানেজার। মাসে দুই লাখ টাকা বেতন। ঢাকায় নিজের ফ্ল্যাট এখনও হয়নি। তবে কিনে ফেলবো শিগগিরই।

বাবা: তুমি আরেক কাপ চা খাও মা। সাত্তার চা দিয়ে যা তো।

সাত্তার: [ভেতর থেকে] সাত্তার বাসায় নাই। সাত্তার মারা গেছে। উনাকে কুলখানির দাওয়াতে আসতে বলেন।

মা: শুভলগ্নে কী সব অলক্ষুণে কথা।

সাবিলা: আমি যাই বাবা, চা বানিয়ে নিয়ে আসি।

সাত্তার: [ভেতর থেকে] থাক থাক। আমি নিয়া আসছি। উনার ভেতরে আসার দরকার নাই।

 মা: তা, মা তুমি অফিসে যাও কী করে? তোমাকে যদি আমরা একটা স্কুটি কিনে দিই, তাহলে কি সুবিধা হয়?

সাবিলা: জি খুব ভালো হয়! মাঝে মাঝে আপনাদের পেছনে বসিয়ে ঘুরতে বের হবো।

বাবা: চাইলাম চ্যাম্পিয়নস লিগ, আর রীতিমতো বিশ্বকাপ এসে হাজির! তা মা, দিনতারিখ ঠিক করেছো?

সাবিলা: ওটা সাত্তারের সঙ্গে কথা বলে.. নাহ.. ওর সঙ্গে আবার কী কথা বলবো। ওটা আমি ঠিকঠাক করে আপনাদের জানাবো। বিয়ের বন্দোবস্ত নিয়ে ভাববেন না। সব ব্যবস্থা করে ফেলবো। কদিন আগে পিউর এক বান্ধবীর বিয়ের শাড়ি গয়না সব আমি কিনে দিয়েছি।

মা: পিউ যেন কে?

সাত্তার: [চায়ের ট্রে হাতে এলো] আম্মা। পিউ হইল এই ভদ্রমহিলার কন্যা। ভার্সিটিতে পড়ে।

সাত্তার: [সাবিলাকে] নিন চা নিন। আমি ভাত, ডাল, ছোট মাছের চচ্চড়ি সব রান্না করতে জানি। ঘর ঝাড়ু আর বাসন ধুতেও পারি। ওয়াশিং মেশিন থাকলে কাপড়ও ধুতে পারি, ভালো না?

সাবিলা: ভালো তো! আর দোকান যেহেতু আছে, বাজার টাজার নিয়েও আমার চিন্তা নেই। তাই না?

[সাত্তার বিড় বিড় করে রাগ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। যাওয়ার আগে ফিরে এসে একটা বিস্কিট নেবে আর সাবিলাকে বিড় বিড় করে বলবে]

সাত্তার: এই বয়সে চকলেট খাওয়াটা ঠিক হইল আপনার?

সাবিলা: চকলেট?

[সাত্তার বিস্কিটে কামড় দিয়ে উঠে দাঁড়াল]

সাত্তার: [অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে] মা আমি এই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

মা: তা তো যেতেই হবে। আর কদিন পরই তো..।

[সাত্তার মুখ ঝামটা মেরে বেরিয়ে গেল]

দৃশ্য-১৫

[মিজান ও সাত্তার। চায়ের দোকান বা তাদের নিজেদের দোকান]

মিজান: অবস্থা তো বিদিক।

সাত্তার: এখন সমাধান কী সেইটা বল।

মিজান: ঘটনা ঘটল কেমনে।

সাত্তার: সেটা সিক্রেট। বলা যাইব না।

মিজান: না কইলে সমাধান দিবো কেমনে। রোগের ওষুধের জন্য আগে রোগের কারণ জানা দরকার। লক্ষণে অর্ধেক আরোগ্য।
সাত্তার: আমি গেছিলাম।

মিজান: কোথায়।

সাত্তার: ওই যে কবিরাজ নাকি দরবেশ। ধানমণ্ডিতে থাকে।

মিজান: [চা ছলকে পড়বে] এতগুলা টেকা খরচা করসেন ওই বেডির জন্য?

সাত্তার: আরে। এইটা একটা অ্যাকসিডেন্ট।

মিজান: তয় আপনার সঙ্গে কিন্তু মানাইসে ভাই।

সাত্তার: ভালো হয়ে যাও মিজান! আরেকবার উল্টাসিধা করলে চাকরি নট। শেষে ওই ফেসবুকের রিল বানাইয়া খাইতে হইব।

মিজান: এখন এটা যদি বড় সমস্যা মনে করেন। তাহলে সমাধানও তো আছে।

সাত্তার: [উত্তেজিত] জলদি বল। আইডিয়া হইল পাউরুটির মতো। ফুটুস করে এক্সপায়ার ডেট পার হয়ে যাবে।

মিজান: ওই তান্ত্রিকের কাছেই যাইতে হবে। আমার জানা মতে, তান্ত্রিকের কাছেই অ্যান্টিভাইরাস পাওয়া যাইব।

সাত্তার: তুই দোকানে যা। আমি গেলাম।

দৃশ্য-১৬

[পিউর সঙ্গে রাস্তায় দেখা]

পিউ: আংকেল! দাঁড়ান। আপনার সঙ্গে কথা আছে।

সাত্তার: আমি যাব আর আসবো। এরপর সব সমস্যার সমাধান।

পিউ: কোথায় পালাচ্ছেন আপনি! আপনার সঙ্গে আমার বোঝাপড়া আছে।

সাত্তার: পড়াশোনা কালকা হইব। আইজকা আমার তাড়া আছে।

পিউ: আপনাকে তো এত সহজে ছাড়ছি না। আগে বলুন, কী মেশানো ছিল ওই চকলেটে।

সাত্তার: কিছু না কিছু না। চকলেটে আবার কী মেশানো থাকবে।

পিউ: আপনি কয়েকবার বলেছেন ওটার কথা। আর মা ওটা খাওয়ার পর থেকেই..।

সাত্তার: কী হইসে আবার।

পিউ: ওটা খাওয়ার পর থেকে কার প্রেমে যেন হাবুডুবু খাচ্ছে। ওই ব্যাটাকে পেলে আমি চাইনিজ চাপাতি দিয়ে সাইজ করবো। আমার ব্যাগে এটাও সবসময় থাকে। দেখবেন?

সাত্তার: কসম লাগে। আমারে ছাইড়া দাও। আমি অ্যান্টিবায়োটিক আনতে যাইতেসি।

পিউ: আমিও যাব আপনার সঙ্গে।

সাত্তার: জ্বালার ওপর সোয়া জ্বালা! ছিলাম সম্বন্ধি হইলাম শালা।

[পিউ বাইকে উঠে বসবে।]

দৃশ্য-১৭

[তান্ত্রিকের বাসার সামনে। তান্ত্রিককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। পেছনে তার বউ মুখ গোমড়া করে আছে। ছেলে ফোন টিপছে]

সাত্তার: পুলিশ ভাই পুলিশ ভাই। এক মিনিট! কই নিয়া যান।

পুলিশ: এই লোক একটা আগাগোড়া ভন্ড তান্ত্রিক। মানুষকে ভুয়া তাবিজ তুমার দিয়ে ঠকিয়ে টাকা নিত। আপনার সঙ্গে তার কী কানেকশন?

সাত্তার: নাহ। কীসের কানেকশন। আ.. আ.. আ.. আমি।

পিউ: আমার আংকেল উনার কাছে টাকা পায়। ওই বেটা এক লাখ টাকা নিয়েছিল আমাকে বিদেশ যাওয়ার তাবিজ দেবে বলে।

পুলিশ: টাকা পয়সার খবর তো এখন পাব না। থানায় যান। মামলা করেন। তারপর দেখা যাবে।

বউ: সাত্তার ভাই, চিন্তা কইরেন না। উনি এমন থানায় যায় আর আসে। কদিন পর আবার ছাড়া পাইব। তবে এই বাসা আর থাকব না। নতুন এড্রেস আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে দেওয়া হবে।

সাত্তার: ও.. বুঝতে পারছি।

[সাত্তার তান্ত্রিকের কাছে গেল। কানে কানে বলল]

সাত্তার: ভাই, ঘটনা কিন্তু ঘইটা গেছে। এখন ঘটনা ফেরানোর মন্ত্র নেন। আমার একটা উল্টা চকলেট দরকার। বিবাহ ভাঙানির চকলেট।

তান্ত্রিক: ভাই, আমি আসলেই ভন্ড। মহা ভন্ড। পাপ করে টাকা আয় করেছি। এখন পাপের প্রায়শ্চিত্য হবে। আপনার টাকাটা ফেরত দিতে পারব না। ওটা দিয়ে ছেলের সেমিস্টার ফি দিয়েছি।

পিউ: আংকেল। চলেন। টাকা দিতে হবে না। পুলিশ ভাই, উনাকে থানায় নিয়ে যান। এবার যেন আর সহজে বের হতে না পারে।

পুলিশ: কেউ একজন মামলা করলে ভালো হতো। তা না হলে অভিযোগ তো হবে না।

সাত্তার: না থাক। কীসের অভিযোগ। সব আমার কপাল। পিউ, চলো।

[বাইকে চলে যাবে দুজন]

দৃশ্য-১৮

[পিউদের বাসার সামনে নামল সাত্তার। সাত্তারের দিকে কড়া চোখে তাকাল পিউ। সাত্তার বাইক থেকে নামলো। মাথা নিচু করা]

পিউ: আপনার মাথায় ঘিলু মারাত্মক কম। আপনার মাথায় ইসিজি করালে ডাক্তাররা টাশকি খাবে। বলবে, এই লোকের ঘিলু নাই, দোকানদারি করে কেমনে।

সাত্তার: দোকানদারি করতে বুদ্ধিশুদ্ধি লাগে না। যার নাই দিকদারি, সে করে দোকানদারি।

পিউ: মাকে কি সত্যিই বিয়ে করবেন? বিয়ের পর আপনাকে আমার কী ডাকতে হবে?

সাত্তার: তোমার যা ইচ্ছা। তবে আমি বিয়া করুম না। আমারে বাঁচাও।

পিউ: তাহলে মাকে পটালেন কেন?

সাত্তার: [কানে চিমটি কাটল] কসম। আমি এসবের মধ্যে নাই। তোমার আম্মারে বুঝাও। নইলে আমি গলায় দড়ি দেব।

পিউ: গলায় দড়ি দিতে জানেন? বাজারে গিয়ে বলবেন, ছাগল বাঁধার দড়ি দেন এক গাছি।

সাত্তার: ওইটা তো খসখসা।

পিউ: আম্মার মনে ধরেছে আপনাকে। এখন আর কী করার আছে আমার। পছন্দ বলে কথা। পছন্দের ওপর তো আর কথা নাই।

সাত্তার: তাইলে আমার কী হবে।

পিউ: আপনার তো গার্লফ্রেন্ডও নাই যে তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবেন। যান বাসায় গিয়ে গলায় দড়ি দেন। যে ওজন সিলিং ফ্যানসহ না আবার দুম করে নিচে পড়ে যান।

[পিউর মা সাবিলা আসল]

সাবিলা: আরে সাত্তার! পিউ! তোরা। বাহ। বাপ বেটি মিলে কীসের গুলান্তি হচ্ছে এখানে?

সাত্তার: আ আ আমারে বলে কিনা ফাঁস নিতে। বলে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যেতে।

সাবিলা: তুই মেয়ে হয়ে আমার এতবড় সর্বনাশ করতে পারবি! তুই একটা.. তুই একটা হাবুডাস্টিং।

পিউ: বাসায় যাও! যাও! নইলে একদম ছ্যাকরা করে দেব সব।

[সাবিলা গট গট করে বাসায় ঢুকলো]

পিউ: আর আপনি একটা ভটভটি। আপনিও যান। মাথা ধরে গেছে আমার।

সাত্তার: ইয়ে, এই হাবুডাস্টিং মানে কী?

[পিউ তাকাতেই সাত্তার বাইক স্টার্ট দিল]

দৃশ্য-১৯

[পার্কে সাত্তার ও পিউর মা সাবিলা]

সাবিলা: তুমি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও না।

সাত্তার: জি না।

সাবিলা: তুমি আমাকে ভালোবাসো না?

[সাত্তার এদিক ওদিক মাথা নাড়ল]

সাবিলা: আমি তো বাসি। একজন বাসলে হবে না?

সাত্তার: আপনিও বাসেন না।

সাবিলা: আমি তোমাকে ভালোবাসি না এটা জানলে কী করে?

সাত্তার: আমি জানি। সব তন্ত্রমন্ত্রের খেলা। ওই নীল চকলেট হইল সব নষ্টের গোড়া।

সাবিলা: তাহলে আমি চলে যাব? আর হবে না দেখা?

সাত্তার: জি। আপনার মন চাইলে থাকেন। আমি চলে যাব। দেখা হবে না কেন? পাড়ায় দোকানদারি করি, উঠতে বসতে দেখা হবে।

[সাত্তার উঠে চলে গেল।]

দৃশ্য-২০

[৫ দিন পর]

[সাত্তার উদভ্রান্তের মতো। নিজের রুমে বসে বসে ভাবছে]

সাত্তার: শেষ পর্যন্ত এই ছিল কপালে। এমন তাবিজ করা প্রেম তো আমি চাই নাই। এই প্রেম তো ভুয়া। ভুয়া ভালোবাসা নিয়া বাকি জীবন কাটাইতে হবে আমার? তারচেয়ে আজীবন কুমার থাকাই ভালো।

[ফোন এসেছে]

পিউ: হ্যালো, সাত্তার আংকেল।

সাত্তার: [মুখ ভার করে] পিউ। কেমন আছো?

পিউ: ভালো আছেন?

সাত্তার: ভালো নাই, খারাপও নাই।

পিউ: আপনাকে আর খারাপ থাকতে হবে না। মাকে আমি বুঝিয়ে বলেছি। আপনি যে মন্ত্রপড়া চকলেট খাইয়েছেন সেটাও বলেছি।

সাত্তার: ওহ। বুঝতে পেরেছে? ভালো তো। তারপর?

পিউ: মা প্রথমে একটু কষ্ট পেয়েছেন। পরে ভুল বুঝতে পেরেছেন। এখন আর প্রেম-ট্রেম কিছু নাই।

সাত্তার: [মন কিছুটা ভার] ওহ। সুসংবাদ। তাহলে..।

পিউ: জি আপনি এখন নিশ্চিন্তে দোকানদারি করতে পারেন, অন্য কোনো মেয়েকে পটাতে পারেন। আপনার রাস্তা পরিষ্কার।

সাত্তার: ব্যাপারটা তা না। ব্যাপারটা হলো, আমি আসলে ভুল করেছি। এভাবে ভালোবাসা হয় না।

পিউ: শুনুন। মা প্রথমে খুব কেঁদেছেন। এখন একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার ঠিক হয়েছেন। এখন তার সঙ্গে আরেকজনের ভাব করিয়ে দিয়েছি আমি।

সাত্তার: ওহ। কার সঙ্গে?

পিউ: সেটা জেনে আপনার কোনো কাজ নেই। তবুও বলতে ইচ্ছে করছে। ভদ্রলোকের বউ মারা গেছে। কানাডায় থাকেন। মাইক্রোফিজিক্সের ওপর এমআরএফসি ডিগ্রি আছে তার। বিরাট ধনী। আমাদের সবাইকে নিয়ে কানাডা চলে যাবেন।

[সাত্তার চুপ]

পিউ: হ্যালো।

সাত্তার: হুম।

পিউ: আগামী রোববার মায়ের সঙ্গে উনার বিয়ে হবে। আপনাকে খবর দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি। দাওয়াত দিচ্ছি ভেবে আবার চলে আসবেন না যেন।

সাত্তার: আচ্ছা ঠিক আছে। আসবো না।

[সাত্তার বিছানায় ধপাস করে শুয়ে চোখ বুঁজলো।]

দৃশ্য-২১

[আরও ৫ দিন পর]

[সাত্তারের রুম। এ কয়দিন সে ঘর থেকে বের হয়নি।]

মা: সাত্তার। বাবা ওঠ। দোকানে যাবি না?

সাত্তার: আইজ আমার মন ভালো নাই।

মা: এভাবে শুয়ে শুয়ে আর কতদিন। উঠে একটু বাইরে যা। পাশের বাসার ছাদে ওই রুনা না সোমা কে যেন আছে না, সে আসছে আবার।

সাত্তার: [কড়া চোখে তাকালো] রুনা, সোমা, হাজেরা খাতুন যেই থাকুক, তাতে আমার কী!

মা: কেন, তুই তো ওই মেয়েটাকে রীতিমতো তাড়িয়ে দিলি।

সাত্তার: [কাঁদো স্বরে, কড়া গলায়] ঘটনা তোমরা কেউ বুঝবা না। কেউ না। [বালিশে মুখ গুঁজবে]

মা: তোর নামে একটা পার্সেল এসেছে। আমি আবার খুলে ফেলেছি।

সাত্তার: খুব ভালো করেছো। এখন যাও।

মা: ভিতরে দেখি একটা চকলেট। নীল রঙের চকলেট। তোর কাছে রাখ। তোর বাবা দেখলে আবার খেয়ে ফেলবে।

[সাত্তার চমকে উঠল। লাফিয়ে বসল। চকলেটটা কেড়ে নিল মায়ের হাত থেকে।]

সাত্তার: [মুখে আবেগঘন হাসির কারণে কথা ফুটছে না তার] চকলেট আম্মা। সে খায় নাই! সে খায় নাই! আমি জানতাম। আসলে জানতাম না। আমি একটা গরু আম্মা। আমি একটা গরু!

[সাত্তার ট্রাউজার পরা অবস্থায় ছুটে বের হতেই সাবিলার মুখোমুখি]

সাত্তার: [মাথা নিচু করে লাজুক টাইপের হাসি দিল] ইয়ে আপনি।

সাবিলা: চকলেটটা খাও।

সাত্তার: অ্যাঁ।

সাবিলা: খাও! নইলে পিটিয়ে একদম হারুঙ্গা বানিয়ে ফেলবো। খা বলছি!

সাত্তার: হারুঙ্গা আবার কী?

[সাবিলা তেড়ে আসতেই সাত্তার ক্যান্ডিটা মুখে দিল]

সাবিলা: [চওড়া মেকি হাসি দিয়ে] চকলেট কেমন লাগছে সাত্তার? আমাকে এখন ভালো লাগছে?

[সাত্তার উপর নিচ মাথা দোলালো।]

সাবিলা: বিয়ে করবে আমাকে?

[সাত্তার আবার উপর নিচ মাথা দোলালো]

সাবিলা: [ফোন কানে ধরে] পিউ। যা। কাজী ডেকে আন। আসার সময় একটা মালা নিয়ে আসিস। ওই যে গরুর গলায় পরায় যে গেন্দা ফুলের মালা। ওইটা।

[সাবিলা এগিয়ে এসে হাত ধরতেই সাত্তার লজ্জায় লাল হয়ে গেল]

—সমাপ্ত—

storiesচিত্রনাট্যধ্রুব নীলনাটকস্ক্রিপ্ট