ত্রিশাল উপজেলার বীররামপুর গ্রাম। ঝাড়তলা নামে একটি জায়গা আছে এ গ্রামে। সেখানে চলছে ভূতুড়ে সব কাণ্ড। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ঝাড়তলার সত্যিকারের ভূত এর ঘটনা জানাচ্ছেন মো. মাঈন উদ্দিন
নামাপাড়া বীররামপুর গ্রামের মোটামুটি বিচ্ছিন্ন একটি পাড়া। এই পাড়ায় তিন-চার হাজার মানুষের বাস। প্রায় আধা কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পার হয়ে পাকা সড়কে আসতে হয় তাদের।
কাঁচা রাস্তার এক জায়গায় আছে একটি বাড়ি। বাড়িটির নাম নয়াবাড়ি। নামে নয়া হলেও অনেক পুরনো। নয়াবাড়ির সারিবদ্ধ ঘরগুলো সব পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে বিরাট জঙ্গল। জঙ্গলের পশ্চিম পাশে—অর্থাৎ পেছন দিক দিয়ে একটা রাস্তা আছে। রাস্তার সঙ্গেই বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড় থেকেই ওই জায়গার নাম হয়েছে ঝাড়তলা।
দিনের বেলায় আবছা অন্ধকার। সন্ধ্যার পর আঁধার আরো ঘন হয়ে ওঠে এখানে। ওই সময় পারতপক্ষে কেউ এদিক দিয়ে একা আসা-যাওয়া করে না।
নামাপাড়ার পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাসিন্দা জাফর। তিনি জানান, ‘একদিন ত্রিশাল থেকে আসছিলাম। সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত। বাঁশতলায় আসার পর খেয়াল করলাম, অন্ধকার নেমে এসেছে। ভয়ে শরীরে এমনিতেই কাঁপুনি দিয়ে গেল। দুই কদম এগোতেই দেখি একটি বাঁশ রাস্তার ওপর পড়ে আছে। তাড়াহুড়া করছিলাম। বাঁশের ওপর দিয়ে আসতে চাইলাম। যেই পা উঠালাম, আমার পায়ে কাঁপন ধরল। আর এগোতে পারলাম না। কঞ্চির সঙ্গে লেগে মাটিতে পড়ে গেলাম। সেই থেকে আমি আর হাঁটতেই পারি না।’
আরেক বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘রাত আনুমানিক ৯টা হবে। ঝাড়তলায় আসার আগে ভয় পাচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কোনো সঙ্গী পেলাম না। তাই মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে হাঁটতে লাগলাম। ডানে-বাঁয়ে তাকাচ্ছিলাম না। সামনের দিকেই দৃষ্টি ছিল। ঝাড়তলায় আসতেই পায়ের সঙ্গে নরম কী যেন বেঁধে গেল! ভাবছি, কোনো বিড়ালছানা হবে। আঁতকে উঠলাম। শীতের রাতেও আমার কপালে ঘাম। বুঝতে পারলাম—এটা অশনিসংকেত। আর অপেক্ষা করলাম না। পেছনে ফিরেও তাকালাম না। বড় বড় কদমে চলে এলাম। বাড়ি এসে গরম পানি দিয়ে গোসল সেরে তবেই ঘরে ঢুকি।’
ঝাড়তলায় যে ভূতুড়ে কাণ্ডগুলো ঘটে, তার মধ্যে রাস্তার মধ্যে বাঁশ পড়ে থাকার ঘটনাই বেশি। করিম মোল্লা নামাপাড়ার একজন প্রবীণ লোক। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী। প্রায়ই রাতে বাড়ি ফিরি। একদিন রাত ৩টা। চাঁদের আলোয় চকচক করছিল চারপাশ। যেই ঝাড়তলায় এলাম, চাঁদের আলো মিলিয়ে গেল। ঘোর অন্ধকার! একরাশ ভয় ঘিরে ধরল। হঠাৎ রাস্তা আগলে দাঁড়াল ঘুটঘুটে কালো একটা ছায়া। মাটি থেকে আসমান পর্যন্ত। ভয়ে আমার চোখ বেরিয়ে আসার দশা। পকেটে দিয়াশলাই ছিল। আগুন জ্বালালাম। জানতাম, আগুন দেখলে এরা চলে যায়। কালো ছায়াটাও উধাও হয়ে গেল। সামনে দুই পা বাড়াতেই দেখলাম, বাঁশ পড়ে আছে। বুঝতে পারলাম, এটা ভূতুড়ে ব্যাপার। বাঁশ সরানোর জন্য যেই হাত দিলাম, তখনই আমার হাত কাঁপতে শুরু করল। পৃথিবীটা দুলে উঠল যেন। ঠাণ্ডা এক স্রোত নেমে গেল পিঠ বেয়ে। তাড়াতাড়ি বাঁশটা ছেড়ে দিলাম। অনেকটা ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়ি এসেছিলাম সেদিন। পরদিন ভোরে এসে আশ্চর্য হলাম। দেখি কোনো বাঁশ পড়ে নেই।’
গ্রামে কথিত আছে আরেকটা গল্প। গ্রামের সাহসী ব্যক্তি ছিলেন করিম বক্স। ভূতুড়ে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য একবার রাত ১২টার পর ঝাড়তলায় ঘাপটি মেরে বসে থাকবেন বলে ঠিক করেন তিনি। ঘোষণা দিলেন—সকালে অক্ষত ফিরবেন। কিন্তু রাত ৩টা বাজতেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন করিম বক্স। তাঁর চিৎকার শুনে নয়াবাড়ির লোকজন দৌড়ে আসে। তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন সকালবেলা তাঁর জামাকাপড় পাওয়া গিয়েছিল।