অ্যাপ হাতে স্মার্ট

স্মার্টফোন, অ্যাপ আর ইন্টারনেট—এ সবই যেন এখন জীবনের মৌলিক চাহিদা। কিন্তু এসবের যে উপকারিতা, তার কতটুকু আমরা আদায় করতে পেরেছি? অ্যাপ মানে শুধু গেম খেলে সময় নষ্ট? নাকি এটাও হতে পারে কাজের কাজি? জানাচ্ছেন সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

‘অ্যাপের আসল ব্যবহার কয়জন করতে পারে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমার গুগল ম্যাপ মাঝেমধ্যেই দরকার পড়ে। আবার জি-মেইল তো সব সময়ই লাগে। সুতরাং আমার কাছে অ্যাপ মানে সময় নষ্ট নয়।’ বলছিল চট্টগ্রামের খাস্তগীর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত তাজনীন।

রাজধানীর অষ্টম শ্রেণির নিঝুম প্রতিদিন ব্যবহার করে বই পড়ার অ্যাপ আলডিকো। অনেকটা বুকশেলফের মতো দেখতে অ্যাপটির তাকে সাজানো থাকে অনেক অনেক ই-বুক। সে জানাল, ‘আমি আমাজন কিনডলও ব্যবহার করি। বিশেষ কোনো প্রয়োজনে অ্যাপের ব্যবহার করতে পারার মধ্যেও এক ধরনের মজা আছে। যেমন জি ক্যামেরা একটা কাজের অ্যাপ। এ পর্যন্ত ১০ কোটি ডাউনলোড হয়েছে এটি। সেলফি থেকে শুরু করে ছবির কোলাজও বানানো যায় এতে। আবার কোন সানগ্লাসে নিজেকে কেমন দেখাবে সেটাও দেখা যাবে জি ক্যামেরা সানগ্লাস স্টিকার অ্যাপে।’

তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ফেসবুক, স্কাইপে, হোয়াটসঅ্যাপ, জি-মেইল, টুইটার, গাগা গুগু ও ইমোর মতো অ্যাপ আছে অনেক। এগুলোর কথা নতুন করে না-ই বা বললাম। তবে এর বাইরেও দেখা যাবে, চাহিদা অনুযায়ী সঠিক অ্যাপটি তুমি পাচ্ছ না। আবার কিছু অ্যাপ আছে, যা তোমার বহুদিনের কোনো একটা সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে মুহূর্তে।

খাদ্যরসিকদের খাবারদাবারের অ্যাপ, লাইফস্টাইল অ্যাপ—এমন আরো অনেক কিছু। প্রতিদিনের জীবনে আমাদের যা কিছু দরকার পড়ে, তার সবটাই অ্যাপে পাওয়া সম্ভব এখন। গ্রামীণফোনের ‘ওয়াওবক্স’ অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত দেবযানী মোদক বলেন—‘ওয়াওবক্স একটি লাইফস্টাইল অ্যাপ। প্রতিদিনের জীবনের নানা রকম দিক আমরা তুলে ধরি এখানে। এ ছাড়া আমি প্রতিদিন বাসা থেকে উবারে যাতায়াত করি। ব্যাপারটা এমন না যে এই অ্যাপ ছাড়া থাকা সম্ভব না। জিনিসটা অভ্যাসের ব্যাপার। এখন আমরা অ্যাপে অভ্যস্ত।’

 

পথের হদিস

রাস্তা চেনার জন্য আছে গুগল ম্যাপের মতো ভীষণ কাজের অ্যাপ। গুগল নেভিগেশন ব্যবহার করে কিন্তু আজকাল যানজটের হদিসও পাওয়া যাবে। ইসরাত জানাল, ‘আমি বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়িতে বসে আগেই বলে দিতে পারি, কোন জায়গায় কত মিনিটের জ্যাম আছে। আবার ঢাকার কোন রাস্তায় জ্যাম লেগেছে, সেটিও কিন্তু গুগল নেভিগেশনে ধরা পড়ে। আবার এই অ্যাপে ডিরেকশন দেখার সুবিধাও আছে, যা অনেকে জানে না। শুধু রাজধানী নয়, দেশের কোন জেলা থেকে কোন জেলার দূরত্ব কত কিলোমিটার ও গাড়িতে যেতে কত সময় লাগতে পারে, সেই ধারণাটাও দেয় গুগলের ম্যাপস অ্যাপটি। আবার আপনার পজিশনটাও স্ক্রিনে আপডেট হতে থাকবে। এর জন্য ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ আর জিপিএস অন থাকলেই হলো।’

 

স্বাস্থ্য রক্ষায়

শুধু পথের দিশা নয়, পথে কতটা সময়ে কত কদম হাঁটলে, সেই তথ্যও জানাবে স্টেপ ট্রেকার। ৫০ লাখেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে অ্যাপটি। এ ধরনের অ্যাপ ইনস্টল করলে জানতে পারবে, তুমি আজ কতটা হেঁটেছ এবং কতটা পথ হাঁটার দরকার ছিল। গোল সেটিং করতে পারো। মানে ঠিক করে নিতে পারবে যে আজ ১০ হাজার কদম হাঁটব। অ্যাপটির মধ্যে আবার অ্যাচিভমেন্ট স্কোরও আছে। টার্গেট পূরণ করতে পারলে অ্যাপটি তোমাকে কোনো না কোনো ডিজিটাল উপহার দেবে। যেমন টানা পাঁচ দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বের হলেই পাবে একটা অ্যাচিভমেন্ট স্কোর।

এ রকম খেলার ছলে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য হেবিট বুল, টনিক অ্যাপ, মাই ওয়াটার ইত্যাদির মতো অ্যাপ। প্রায় ১০০টি ভালো অভ্যাস তৈরির জন্য এই অ্যাপে রয়েছে অর্গানাইজার অ্যাপের যাবতীয় সুবিধা।

 

শেখার সমুদ্র

লার্নিং অ্যাপের অভাব নেই। গুগল প্লে স্টোরে সার্চ দিতেই হাজির হবে তোমার দরকারি অ্যাপ। ‘আমার একবার শখ হলো জাপানি ভাষা শেখার। প্লে স্টোরে সার্চ দিতেই হাজির লার্ন জাপানিজ। বেশ সহজ অ্যাপ। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেওয়া আছে দরকারি শব্দ ও বাক্যগুলো। প্রথমে ভাবলাম, কিছুদিন শিখে আন-ইনস্টল করে দেব। এখন এটা ভালো লেগে গেছে। পুরোটা শেষ না করে ছাড়ব না।’ জানাল মিরপুর বাঙলা কলেজের একাদশ শ্রেণির অরূপ।

পড়ুয়াদের জন্য আছে খান একাডেমির ফ্রি অ্যাপ। আছে ডুয়োলিংগো, লিন্ডা, ফটোম্যাথ, সলো লার্ন, ইউডা সিটি ইত্যাদি।

রান্না শেখার জনপ্রিয় অ্যাপ বিগ ওভেন। সাড়ে তিন লাখ রেসিপি আছে এতে। নির্দিষ্ট খাবারের নাম দিয়ে খুঁজতে আছে সার্চ অপশন। এমনকি যদি তোমার কাছে কিছু রান্নার উপকরণ থাকে, আর তুমি বুঝতে না পারো যে ঠিক কী রান্না করবে, তাহলে সেই উপকরণগুলোর নাম বিগ ওভেনের নির্দিষ্ট স্থানে লিখে দিলে অ্যাপ নিজেই বলে দেবে এগুলো দিয়ে কী কী রান্না করা যায়। আবার চাইলে তুমি তোমার নিজের রেসিপিও এখানে পোস্ট করতে পারবে।

গাছপালা ভালো লাগে? আছে প্লান্ট স্ন্যাপ নামের দারুণ একটা অ্যাপ। পথে চলতে চলতে কোনো বুনো ফুল বা অচেনা কোনো লতাপাতা চোখে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সেটির পরিচয় উদ্ধার করে দেবে অ্যাপটি। শুধু সুন্দর করে ছবিটা তুললেই হলো। একই ধরনের আরো কিছু অ্যাপ হলো লাইক দ্যাট গার্ডেন, ফ্লাওয়ার চেকার, লিফ স্ন্যাপ, নেচার গেইট, প্লান্টিফায়ার।

 

অ্যাপে সাবধান!

চারপাশে কতশত অ্যাপ। কিন্তু সেগুলোর সবই কি উপকারী? উঁহু! শুধু যে অনর্থক তা নয়, অনেক অ্যাপ আছে, যেগুলো তৈরি করা হয় ব্যবহারকারীর তথ্য চুরির উদ্দেশ্যে। তাই ‘অ্যাকসেপ্ট’ বাটনে টাচ করার আগে দেখেশুনে নাও অ্যাপটা আসলেই ভালো কি না।

যদি অ্যাপের ডেসক্রিপশনে প্রচুর ভুল বানান দেখো, তবে ডাউনলোড না করাই উত্তম।

একই নামের একাধিক অ্যাপ দেখতে পেলে ওই অ্যাপের অফিশিয়াল সাইটে গিয়ে সেটি ডাউনলোড করে নিতে পারো।

কতজন মানুষ আপটি ডাউনলোড করেছে, তাদের রিভিউ কী, কত রেটিং পেল, তাতেও একঝলক চোখ বুলিয়ে নাও।