প্লানেটরিয়াম দেশে দেশে

ভ্যালেন্সিয়া সিটি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স মিউজিয়াম, স্পেন
নাম শুনে আবার সাধারণ জাদুঘর ভেবে বসো না। তবে জাদু দেখিয়ে ছাড়ে। একে তো চোখধাঁধানো নকশা, অন্যদিকে শিল্পকলার সঙ্গে বিজ্ঞানের ছড়াছড়ি। স্পেনে গেলে এই মিউজিয়ামে ঢুঁ না মেরে উপায় নেই। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, স্বচ্ছ নীল পানির ওপর একটা চোখ আধবোজা হয়ে চুপচাপ তাকিয়ে আছে। সময়ে সময়ে সেই চোখ বন্ধও হয়! ইস্পাত আর কাচ বসিয়ে এমন বুজরুকি করা হয়েছে, যাতে প্লানেটারিয়ামটি বন্ধ করার দরকার হলে সত্যিকার চোখের মতোই বুজে ফেলা যায় দরজা। ভেতরে একবার ঢুকলে বেরোনোর কথা মনে থাকে না। ঢুকলেই মনে হবে, শহরের ভেতর আরেকটা শহরে চলে এসেছি। পানিতে বাস করে এমন ৫০০ প্রজাতির প্রাণীর পার্কও আছে এখানে।

মস্কো প্লানেটারিয়াম
১৭ হাজার বর্গমিটারের এই প্লানেটারিয়ামটি ১৭ বছর বন্ধ পড়ে ছিল! নতুন করে সাজিয়ে-গুছিয়ে চালু করামাত্রই এটা হয়ে গেল ইউরোপের সবচেয়ে বড় প্লানেটারিয়াম। পৃথিবীর টর্নেডো থেকে শুরু করে চাঁদের পরিষ্কার ছবি ও ব্ল্যাক হোল পর্যন্ত দেখানো হয় এতে। রয়েছে মহাবিশ্বের ইতিহাস নিয়ে একটি চতুর্মাত্রিক প্রামাণ্যচিত্র। এখানে মহাবিশ্বের ব্যাপারস্যাপার দেখানোর সময় দর্শকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বিশেষ এক নাশতা, যেটা মহাকাশে বসে খেয়ে থাকেন নভোচারীরা! খুব সহজ ভাষায় এখানে সব ব্যাখ্যা করা হয়, যাতে সহজে সবাই বুঝতে পারে সোজাসাপ্টা এই মহাবিশ্বকে।

প্লানেটারিয়াম ডি ভঁলে ভেঁলি, লিওঁ, ফ্রান্স
খুব বেশিদিন হয়নি মিডিয়ালন নামের গ্রহ-নত্র দেখানোর এই ভবনের বয়স। তাই আধুনিক সব প্রযুক্তি গোড়া থেকেই এতে জুড়ে দেওয়া গেছে। ১৯৯২ সালে তৈরি এ প্লানেটারিয়ামের পুরোটা নিয়ন্ত্রিত হয় সফটওয়্যারের সাহায্যে। ডেটাবেইসে আছে প্রায় ১০ লাখ নত্রের ছবি। আর একবারে সেখান থেকে ৯ হাজার নত্রের ত্রিমাত্রিক ছবি দেখানো যায় এর প্রজেক্টরে। চারপাশ থেকে শব্দ শোনানোর জন্য আধুনিক সব ব্যবস্থাই আছে। পুরোটা সফটওয়্যারের হাতে থাকায় খুব সহজে পূর্ণাঙ্গ একটি আবহ তৈরি করে ফেলা যায় এখানে।

লা প্লানেটারিয়াম ডি বুয়েনস এইরেস, আর্জেন্টিনা
প্লানেটারিয়ামটি আস্ত একটি প্লানেট তথা গ্রহের মতোই দেখতে। ২০ মিটার চওড়া একটি কুপোলা আছে এতে। কুপোলা হলো যেখানটায় গ্রহ-নত্রের শো দেখানো হয়। স্পটলাইট অর্থাৎ তির্যক আলো আর লেজার রশ্মি ফেলে ছবি দেখানো হয় এতে। গুনে গুনে আট হাজার ৯০০টি তারকা, তারকাপুঞ্জ ও নীহারিকা দেখানো যায় এখানে। ১৯৬৬ সালে লাতিন আমেরিকার নামকরা স্থপতি এনরিখ জেন এর নকশা করেন।

প্লানেটরিয়াম

পিটার হ্যারিসন
প্লানেটারিয়াম, লন্ডন
১২০ আসনের এই যন্তরমন্তর ঘরটি আছে লন্ডনের গ্রিনিচ পার্কে। চালু হয়েছে ২০০৭ সালে। নীল, লাল ও সবুজ রঙের লেজারের সাহায্যে ছবি তৈরি করে এটি। লেজার লাইটের খেলা যারা কাছ থেকে দেখেছ, তারা বুঝবে এর মজাটা কোথায়। একেবারে চোখের সামনে তৈরি হবে ছবি। হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যাবে তারা আর গ্রহগুলো। প্রতি সেকেন্ডে ৬০ বার লেজার আলো ফেলে স্থির করে রাখা হয় পর্দার ছবি।

প্লানেটরিয়াম

এইচ আর ম্যাকমিলান প্লানেটারিয়াম
ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা
একে একটু আলাদা বলতেই হবে। কেননা দূর থেকে একে ভিনগ্রহ থেকে আসা থিয়েটারই মনে হবে, যার ভেতর এলিয়েনরা বসে বসে নিশ্চয়ই সিনেমা দেখে। কানাডার শিল্পপতি আর উদ্যোক্তা ম্যাকমিলানের নামেই এর নাম। তবে নকশা করেছেন জর্জ হ্যামিল্টন, সেই ১৯৬৮ সালে।

ইন্দিরা গান্ধী প্লানেটারিয়াম, লখনৌ ভারত
বলয়গ্রহ শনির মতো করে বানানো এই প্লানেটারিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভারতের উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর সিং। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। এরপর কেটে যায় অনেক দিন। ২০০৩ সালে এসে এর উদ্বোধন করেন বর্তমান রাজ্যপ্রধান মায়াবতী। শনির মতো এই ভবনেরও আছে পাঁচটি উপগ্রহ। মূল অডিটরিয়াম খুব একটা বড় নয়, ব্যাস মাত্র ১৫ মিটার। তবে শুরু থেকেই চোখে পড়বে মহাকাশবিজ্ঞানে ভারতের নিজস্ব অর্জনের যাবতীয় ইতিহাস। বিভিন্ন সময় ভারতীয় স্যাটেলাইটে তোলা ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে লবির দেয়াল।