বাংলাদেশি পাসপোর্টে ১০০ দেশ ঘুরেছেন কাজী আজমেরি

‘আমি সারা পৃথিবীর সব দেশে আমার পায়ের চিহ্ন রাখতে চাই। এবং সেটা করতে চাই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েই।’

কথাগুলো বাংলাদেশি নারী বিশ্বপর্যটক কাজী আসমা আজমেরির। এ পর্যন্ত বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১০০-র বেশি দেশে ঘুরেছেন তিনি। তার পরিকল্পনা, পৃথিবীর সব দেশ সফরের।

কেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন তিনি?

এ প্রশ্ন করলে কাজী আজমেরি বলেন, আমি ২০১০ সালে ভিয়েতনাম গিয়েছিলাম, ইচ্ছে ছিল সেখান থেকে কম্বোডিয়া যাবো। কিন্তু ইমিগ্রেশনের লোকেরা আমার রিটার্ন টিকেট নেই এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে আমাকে সে অনুমতি দেয় নি।

‘সেদেশের ইমিগ্রেশন আমাকে ২৩ ঘন্টা জেলে বন্দী করে রাখে। আমি খুব কান্নাকাটি করেছিলাম।’

‘ওই ২৩ ঘন্টা জেলে থাকার সময়ই আমি চিন্তা করলাম, আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে বাইরের মানুষ বাংলাদেশের পাসপোর্টকে সম্মানের চোখে দেখবে, তাদের হয়রানি করবে না’- বলছিলেন কাজী আজমেরি। বাংলাদেশি পাসপোর্টের কারণে অনেক বিমানবন্দরে মানুষকে হয়রানি হতে দেখেছেন তিনি।

সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বভ্রমণের চিন্তা মাথায় আসে তার।

‘বাংলাদেশ আমার দেশ, আমি চাই এ দেশকে মানুষ চিনুক। আমরা বাংলাদেশীরা কোনো কোনো দেশে হয়তো যাই শ্রমিক হয়ে, কিন্তু আমরা ভ্রমণপিপাসু এবং পর্যটক হিসেবেও যে কোথাও যেতে পারি সেটা আমি দেখাতে চাই। গত অক্টোবরে আমি ১০০টি দেশ সফর পুরো করেছি, আমার চোখে এটা বাংলাদেশি পাসপোর্টের জয়।’

এ বছর তার পরিকল্পনা হচ্ছে, আইসল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে যাওয়া।

কিভাবে বিশ্বভ্রমণের পোকা মাথায় ঢুকলো তার?

‘ছোটবেলা থেকেই আমি খুব দুরন্ত ছিলাম। ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা আর আমার স্কুল জীবন কেটেছে খুলনায়। এর পর আমি ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করি। সেসময় থেকেই আমার বেড়ানো শুরু হয়।’

‘প্রথমে আমি গিয়েছিলাম থাইল্যান্ডে, কিন্তু তখনও সমস্ত পৃথিবীর ঘুরবো এমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। তবে ২০০৯ সালে আমি নেপালে যাই এবং এভারেস্ট দেখি। সেই হিমালয় দেখার পরই আমার মনে হয়, এটাই সময়। তার পর থেকেই আমি পৃথিবীর নানা দেশে যাবার ভিসা সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে থাকি।’

তিনি এমন অনেক দেশে গিয়েছেন যেখানে বাংলাদেশকে লোকে চেনে না, ‘ইন্ডিয়া’ মনে করে। তখন আজমেরিকে বুঝিয়ে বলতে হয় যে বাংলাদেশ কোথায়।

ভ্রমণের খরচ কিভাবে মিটিয়েছেন? তার কথা, এ জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতে হয় তাকে। তিনি ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডে ছিলেন, তখন সেখানেও চাকরি করে ভ্রমণের টাকা জমিয়েছেন।

‘একজন নারী হিসেবে, পর্যটক হিসেবে আমাকে সব সময়ই স্ট্রাগল করতে হয়েছে। ভিসা নিয়ে, অন্য নানা কিছু নিয়ে।’

‘যেহেতু বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমার তাই ইচ্ছে করলেই যে কোন দেশে যেতে পারি না। আমাকে ভিসা পাবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।’

‘আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে মরক্কো। তার পর মিশর, পিরামিড দেখেছি। কিউবাও খুব ভালো লেগেছে। বলিভিয়া গিয়েছি, ব্রাজিল গিয়েছি ৫০তম দেশ হিসেবে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়।’

‘বলিভিয়ায় চে গুয়েভারাকে যে জায়গাটায় হত্যা করা হয়েছিল, ১০ মাইল পায়ে হেঁটে সেই জায়গাটায় গিয়েছি।’

একজন নারী হিসেবে তার এই বিশ্বপর্যটক হবার প্রয়াসে নানা বাধা এসেছে বলছিলেন, কাজী আজমেরি।

‘বাংলাদেশের একজন নারী হিসেবে বা মুসলিম কালচারের দিক থেকে এটা ডিফিকাল্ট। তবে মানুষের সাথে কিভাবে মিশতে হবে, কিভাবে তাদের ফেস করতে হবে তা নিয়ে আমি আগে থেকেই তৈরি হয়েছি।’

‘আমার আম্মু কিছুটা সাহায্য করেছেন। আমার যে গহনা ছিল সেটা বিক্রি করে আমি শুরু করেছিলাম। কাজের ছুটিতে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন – এরকম সময় নিয়ে দেশভ্রমণে বেরুতাম।’

‘আমার আব্বু বলতেন, আমার পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দেয়া হবে। ‘তুমি যে এরকম নানা দেশে ট্রাভেল করছো এটা কাউকে বলা যাবে না’- বলতেন তিনি।’

‘আমার কাজিন, পাড়াপ্রতিবেশী বা বন্ধুরাও এটা সহজ ভাবে নিতো না। তারা বলতো, কেন তুমি এভাবে নিজের টাকা খরচ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেন ইউরোপে একা একা ঘুরে বেড়াবে? এরকম অনেক সমস্যা হয়েছে।’

তবে এখন বাংলাদেশে দৃষ্টিভঙ্গীর একটু পরিবর্তন হয়েছে, একথাও বলছেন কাজী আজমেরি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা