বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা | বান্দরবানে কী কী দর্শনীয় স্থান আছে?

আকর্ষণীয় ও চোখ ধাঁধানো সবুজ পাহাড়, ঝর্ণা, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও রোমাঞ্চকর অনেক জায়গার জন্য বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য হলো বান্দরবান। বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা নিয়ে লিখেছেন ইসরাত জাহান স্বর্ণা।

 

বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রামের প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি একটি পার্বত্য জেলা। জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। আয়তন ৪,৪৭৯.০২ বর্গ কিলোমিটার। বান্দরবান জেলায় বাংলাদেশের ৩টি উচ্চতম স্থান আছে।

১. তাজিনডং(বিজয়)।

২. মৌদক মৌল (সাকা হাফং)।

৩. কেওক্রাডং।

বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা যেমন অনেক, তেমনি এর আছে সমৃদ্ধ ইতিহাসও। এর নামকরণের একটি কাহিনী আছে। এলাকার বাসিন্দাদের মতে, এই এলাকায় একসময় অনেক বানর বসবাস করত। বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে প্রায় সময় লবণ খেতে আসতো। কিন্তু এক সময় অনবরত বৃষ্টির জন্য ছড়ার পাড়ে পানি বৃদ্ধির জন্য বানররা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যায়‌। এটা দেখে এলাকাবাসীরা বান্দরবান নাম দেয়।

বান্দরবান ঘুরতে যাওয়ার জায়গা এর মধ্যে অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয় স্থানের দেখা মিলবে। বান্দরবানে আছে সবুজের সমারোহ।

 

বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা

শৈল প্রপাত: বান্দরবানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জলপ্রপাত হলো শৈল প্রপাত। এটি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান থানচি রোডের পাশে। পর্যটননগরী বান্দরবানের কাছাকাছি হওয়ায় এতে সারাবছর লোকজনের সমাগম থাকে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হিমশীতল পানির অবিরাম প্রবাহধারা। যা অন্যান্য ঝর্ণা থেকে আলাদা ও আকর্ষণীয়।

শৈল প্রপাত বা যেকোন জলপ্রপাতের স্থান দর্শনের উপযোগী  সময় হলো বর্ষাকাল।এ‌ সময় শৈল প্রপাত ঝর্ণা নতুন রুপে আবির্ভূত হয় ‌‌।যদিও বিভিন্ন মৌসুমে শৈল প্রপাত ঝর্ণা বিভিন্ন রুপ ধারণ করে।

পিকনিক স্পটের জন্য শৈল প্রপাত আদর্শ জায়গা। তাছাড়া বান্দরবানের শৈল প্রপাতে ঘুরতে গেলে সেখানকার পাহাড়, ঝর্ণা ও গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে জানতে পারবেন।

মেঘলা

আকর্ষণীয় একটি অবসর বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে মেঘলা কমপ্লেক্স। বান্দরবান শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কেরানীহাট সড়কে অবস্থিত। এটি পার্বত্য জেলার কাউন্সিলের খুব কাছেই অবস্থিত।

মেঘলায় আছে পাহাড়ের নিচে তৈরি কৃত্রিম লেক, একটি মিনি সাফারি পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, ঝুলন্ত ব্রিজ ও নৌকা ভ্রমণের সুবিধা। বাচ্চাদের জন্য এটি একটি সুন্দর বিনোদনের জায়গা।

স্বর্ণ মন্দির

স্বর্ণ মন্দির বলা হয় বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দিরকে। বুদ্ধ ধাতু বলতে কোনো পবিত্র ব্যক্তির হাতে ব্যবহৃত ধাতু। এখানে যে বুদ্ধ মূর্তি আছে তা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুর্তি। বান্দরবান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পালপাড়ায় এ মন্দির অবস্থিত। বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা নিয়ে তালিকা করলে এটি আসবেই।

এই বৌদ্ধমন্দির শুধু বৌদ্ধ তীর্থযাত্রার জন্য নয়, যেকোনো দেশের পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থাণ।এই মন্দিরের পাহাড়ের চূড়ার পাশেই একটা ছোট পুকুর আছে। তা দেবতাদের পুকুর নামে পরিচিত ‌। প্রতি বছর এই মন্দিরে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হয়।

কেওক্রাডং পাহাড়

কেওক্রাডং পাহাড় বান্দরবানের রুমা উপজেলায়। কেওক্রাডং শব্দটি এসেছে স্থানীয় আদিবাসী মারমাদের থেকেই। এর অর্থ হলো সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়। এই পাহাড় প্রায় ৩১৭২ ফুট উঁচু।

কেওক্রাডং পাহাড় বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের মধ্যে ৫ম। দূর থেকে মনে হবে এর চূড়া শূন্যে উঠে আছে। বান্দরবান ঘুরতে গেলে এই সৌন্দর্য আপনাকে করবে মনোমুগ্ধকর ‌।আর এই পাহাড়ের চূড়ার উপর উঠলে পাহাড়ি মেঘ আপনার মনকে করবে আন্দোলিত।

নীলাচল

বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের কাছেই নীলাচল। বান্দরবান শহরের ঠিক কাছেই নীলাচল। এটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে টিগেরপাড়ায় অবস্থিত। নীলাচলকে টাইগার হিলও বলা হয়। এর উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট।

নীলাচলে যাওয়ার উত্তম মৌসুম বর্ষায়। বর্ষায় নীলাচলে হেঁটে যাওয়ার মজাই ভিন্ন। শীতকালের সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ‌আপনার মনকে করবে শীতল। তাছাড়া এখানে খাবার দাবারের কোনো অসুবিধা নেই।

শহরের কাছে হবার জন্য সহজেই প্রাইভেট জিপ বা অটোরিকশায় সহজেই নীলাচল পৌঁছে যেতে পারবেন।

নাফাখুম জলপ্রপাত

বাংলাদেশের আকর্ষণীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে নাফাখুম অন্যতম। এটি থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল রেমাক্রিতে অবস্থিত। সাঙ্গু নদী দিয়ে পরিবাহিত হয় এটি।

বান্দরবান ঘুরতে গেলে পাহাড়ি জিপ রিজার্ভ করে এই জলপ্রপাতের দর্শন করতে যেত পারেন।

বগা লেক

বগা লেক বাংলাদেশের আরেকটি আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক হ্রদ। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বগা লেক অবস্থিত। এর আকর্ষণীয় নীল স্বচ্ছ পানিতে আপনার নজর কাড়বেই।

লেকের আশেপাশে বেশকিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস আছে। বর্ষার সময় লেকের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো মুশকিল ‌‌।

প্রান্তিক লেক

এই লেক বান্দরবানের হলুদিয়া নামক জায়গায় অবস্থিত। কেরানিহাট থেকে বিশ মিনিট লাগে এই লেক যেতে ‌‌ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা বিচার করতে গেলে এটি অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যায়।

তবে এই লেকের চারপাশে বিভিন্ন গাছপালা ভরপুর। লেকের পাশের  পাহাড়ে বিচিত্র পাখির কিচিরমিচির কলকলানি আওয়াজ হয় সারাদিন। লেকের স্বচ্ছ জল ও সবুজ বনানী যেকারোর ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

 

আরও পড়ুন: সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা : দারুণ সুন্দর পাঁচটি স্থান

এ ছাড়াও বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা আরও আছে। বাকলাই ঝর্ণা, চিনরি ঝিরি ঝর্ণা, মিরিংজা পর্যটন, ফাইপি ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, নীলগিরি, রাজবিহার, জীবননগর এসব পর্যটন স্থান তো আছেই। এক কথায় বান্দরবান বাংলাদেশের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বান্দরবান ঘুরতে গেলে  এর অফুরন্ত সৌন্দর্যের জন্যে মুগ্ধ হবে না এমন কেউ নেই।

 

bandarbanbangladesh tourismTravel bangladeshনাফাখুমনীলগিরিনীলাচলবান্দরবানবান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার জায়গাশৈল প্রপাতস্বর্ণমন্দির