Cover Story Travel Destinations বঙ্গোপসাগরের অতল রাজ্য সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড By abc on Nov 18, 2018 সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডবাংলাদেশের দক্ষিণে যেখানে সুন্দরবন শেষ, সেখান থেকেই শুরু সমুদ্রযাত্রা। এ যাত্রায় আরো ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই দেখা মেলে নীল জলরাশির বিস্তীর্ণ রাজ্য, যার নাম সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড । অর্থাৎ যার কোনো তল নেই। বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত এলাকা ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ বা SONG, যা বিশ্বের ১১টি গভীরতম ক্যানিয়নের মধ্যে অন্যতম, যা এক লাখ ২৫ হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল।বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি একটি সামুদ্রিক অভয়ারণ্য। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড নামকরণ করা হয়েছিল কারণ, যেখান থেকে এ অঞ্চলের শুরু সেখানেই হঠাৎ পানির গভীরতা বেড়ে গেছে। তাই ব্রিটিশদের ধারণা ছিল, সমুদ্রের এই খাদের কোনো তল নেই। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডকে স্থানীয়রা বলে ‘নাই বাম’। কারণ, তারা সাগরে ফুট কিংবা মিটারে হিসাব না করে বাম, দশ বাম, বিশ বাম, আর ওই জায়গা নাই বাম, মানে এই জায়গাটির কোনো হিসাব নেই, যা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো। বাংলায় বলে অতলস্পর্শী।বঙ্গোপসাগরের মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে মাছের পাশাপাশি আছে বিশাল আকারের তিমি, ডলফিন, হাঙর, কচ্ছপ আর বিরল প্রজাতির কিছু জলজপ্রাণী। প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইলের বিস্তীর্ণ এলাকাটি বিরল জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র, যা প্রস্তাবিত ব্লু ইকোনমির জন্য হয়ে উঠতে পারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ওই এলাকায় সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে এমন তথ্য দিচ্ছেন গবেষকরা।আর এর নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি রহস্য, আঠারোশ শতকের শেষ দিকে ডুবে যাওয়া একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের কোনো নিশানা না পেয়েই এর নাম দেয় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড, যা সংক্ষেপে গবেষকরা সুন্দর নামও দিয়েছেন—সং। এ অঞ্চলে রয়েছে তিমি, ডলফিন, সবচেয়ে বড় ইরাবতী ডলফিন, ইন্দো-প্যাসিফিক ডলফিন ও পাখনাহীন ইমপ্লাইস ডলফিনসহ বহু সামুদ্রিক প্রাণী। এটি পৃথিবীর একমাত্র সোয়াচ, যেখানে এই তিনটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়।সুন্দরবনের দুবলারচরের দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমে এগিয়ে গেলে এক হাজার ৭৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার দীর্ঘ উপত্যকাটি। এটি তিমি, ডলফিন, হাঙর ও কচ্ছপের প্রধান প্রজননক্ষেত্র। গত মার্চের শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের সেই তলাবিহীন নীল জলরাশিতে ১৩ অভিযাত্রী, গবেষক ও স্কুবা ডাইভাররা চষে বেড়িয়েছেন জীববৈচিত্র্যের সন্ধানে। ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে আর নৌবাহিনীর জাহাজ করতোয়া সহায়তা করে। অভিযানের নাম দেওয়া হয় সাগর ও জীবনের সন্ধানে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার এই অভিযানের দলনেতা। এ সময় মহিসোপানটি হেমারহেড শার্ক ও চার প্রজাতির ডলফিন শনাক্ত করা হয়েছে। মাছ ধরার ট্রলারে উঠে দেখা হয়েছে কী কী ধরনের মাছ ধরা পড়ছে। সোয়াচের আকাশে কোন ধরনের পাখি আছে, তা-ও দেখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে মামলা লড়ে বাংলাদেশ যে সমুদ্র বিজয় করেছে, এর পরিমাণ এক লাখ কিলোমিটারের বেশি, যা আরেকটি বাংলাদেশের সমান। সে হিসেবে সোয়াচে প্রথমবারের মতো অনুসন্ধান করা হয়েছে। সরকারের সব সংস্থার সমন্বয়ে ব্যাপক আকারে পরবর্তী গবেষণা শুরু করবে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন। এবারের অভিযাত্রায় নৌবাহিনীর ম্যাপিং ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সিসমিক সার্ভে ও তেল-গ্যাসসহ খনিজ সম্পদ সম্পর্কে জানতেও অনুসন্ধান হবে। তবে সোয়াচকে সংরক্ষণের আরো কী করা যায়, তা নিয়েও কাজ করা হবে।বর্তমান সরকার এসডিজির আওতায় শুধু সাগরের উপরিভাগ নয়, সাগরতলের জীবন নিয়ে কাজ করছে। এখন প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাগুলো শুধু সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণাই নয়, সংরক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আর ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনার বিষয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও কোথায় কী আছে, তা অনুসন্ধানও শুরু করা জরুরি মনে করা হচ্ছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে মৎস্য ও জলজ প্রাণী, পাখিসহ সমুদ্রে যা আছে, তা লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু করা হবে। সোয়াচের মূল্যবান জীববৈচিত্র্যের তথ্যভাণ্ডারও অবাক করেছে গবেষকদের। সাগরতলের গভীর উপত্যকা বা মেরিন ভ্যালির পানির রং পরিবর্তিত হয়ে নীল আকার ধারণ করেছে। সাগর ও জীবনের সন্ধানে দলের প্রধান গবেষক হিসেবে গবেষণাকাজ শুরু করেছেন ড. আনিসুজ্জামান খান। তাঁর মতে, এতে সীমিত পরিসরে জাহাজ চলাচল করায় ও ব্যাপকভাবে মাছও আহরণ না করার কারণে সোয়াচ এখনো বাংলাদেশের সাগরে অনাবিষ্কৃত ইকোসিস্টেম হিসেবে কাজ করছে। এবারের অনুসন্ধানে এমন কিছু প্রাণী পাওয়া গেছে, যেগুলো বিশ্বে বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ইকোলজিক্যালি, জিওলজিক্যালি, হাইড্রোলজিক্যালি এবং আন্তর্জাতিক বায়োডাইভারসিটি হটস্পটও। বিভিন্ন গবেষকের তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯১৪ সালের ২৭ অক্টোবর এই এলাকাকে বাংলাদেশের প্রথম মেরিন প্রটেক্টেড অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ডলফিন, তিমি, হাঙর দেখে সেটা করা হয়েছিল। কিন্তু পানির নিচে যে জীববৈচিত্র্য আছে ঝিনুক, শামুক, সাপ, সি-উইডস এসবের তথ্য জানতে পানির নিচের ডুবোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলোরও তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন রয়েছে। আর সোয়াচে যে পানি রয়েছে, তা খুবই পরিষ্কার। এই পানির গুণগতমান শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের চেয়েও উন্নত। বিশেষ করে সুন্দরবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল। এটি এ অঞ্চলের জন্য ইকোলজিক্যাল ফিল্টার হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া এতে যে মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব। সোয়াচে প্রধান ডুবুরি হিসেবে কাজ করছেন ডুবুরি এস এম আতিক রহমান। তিনি পানির তলদেশ ঘুরে জেলি ফিশ, সুইমিং ক্র্যাবসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক উদ্ভিদের চিত্র ধারণ করেন। সোয়াচের পানির তল খুবই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। সোয়াচের আরো অজানা তথ্য জানতে আগামী ডিসেম্বরে আরো বড় আকারের অভিযানে নামছে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন। Post Views: 1,750 Related posts: দুবাই ভ্রমণে গেলে যে জায়গাগুলো মিস করবেন না অন্য পৃথিবীগুলো আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে A glittering emirate : travel Sharjah Discover Dhaka Travel Dhaka Know your Hajj ইতিহাসের অজানা সব কথা জেনে নিন আম্রকুঁড়ির গন্ধে তোমায় স্বাগত বৈশাখ সাপে কামড়ানোর পর যেটি করবেন দুবাইয়ের আকাশে মেহজাবীন নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ : নিন অনন্য সব অভিজ্ঞতা Three Travel Destinations 1 : Bangkok to Phuket and so on ভ্রমণেও রয়েছে প্রিয় নবীর সুন্নত , যা ঈদ যাত্রায় পালন করতে পারেন Bangladesh : a Culinary hotspot City life, Dhaka life, Dhaka way The spirit of Ramadan Rome Cavalieri : A perfect Roman stay City life, Dhaka way : has many splendors that delight travelers যে কারণে সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয়তা বেশি অভিবাসীদের কাছে The kingdom of traditional jewelry : Bhakurta Singapore Travel Destinations: the best spots in Singapore