চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আর সেই সঙ্গে চলছে গাজী টিভির সরাসরি অনুষ্ঠান ক্রিকেট এক্সট্রা আর ক্রিকেট ম্যানিয়া। এই দুই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় র্যাম্প মডেল ও কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ। কথা হলো এই ক্রিকেট–কন্যার সঙ্গে। আলাপের শুরুতেই আজরা মাহমুদ চলে গেলেন ছেলেবেলায়। চোখেমুখে খুশির ঝিলিক নিয়ে জানালেন, তখন খেলা শুরু হলে তাঁর বাবা আর ভাই দুজনেই নাকি তাঁকে ঘুষ দিতেন। উদ্দেশ্য, বাবা বা ভাই যে দলের সমর্থক, আজরাকেও সেই দলে নেওয়া। আজরা মাহমুদও কম যান না। তিনি চালাকি করে বাবা আর ভাই দুজনের কাছ থেকেই কোমল পানীয় নিতেন। আর যে দল জিতত, সেই দলকে সমর্থন করতেন।
বিশ্বকাপের উন্মাদনা যে র্যাম্পে দাপিয়ে বেড়ানো আজরাকে ‘লাইভ’ উপস্থাপক বানিয়ে ছাড়ল, তাঁর কাছে প্রথমেই জানতে চাইলাম, ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতার কথা। আবার ফিরে গেলেন মধুর অতীতে। বললেন, ‘তখন আমরা দাদাবাড়ির সামনের রাস্তায় ক্রিকেট খেলতাম। ধানমন্ডির ২৫ নম্বর রাস্তা। নিয়ম ছিল, বল ড্রেনে পড়লে আউট। আর যে বল ড্রেনে ফেলবে, তাকেই তুলে আনতে হবে।’ কথায় কথায় জানালেন, সরাসরি সম্প্রচারিত ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার চ্যালেঞ্জের কথা। বললেন, আগে ক্রিকেট এত জটিল ছিল না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেটে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন সব নিয়ম। এটা এখন যতটা মাঠের খেলা, ততটাই মস্তিষ্কের। আজরা মাহমুদ মনে করেন, বর্তমান সময়ের দর্শক, পাঠক সবাই প্রশংসার চেয়ে সমালোচনা করতে বেশি পছন্দ করেন। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে একজন ‘নারী’ মডেলের জন্য সরাসরি সম্প্রচারিত ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জের। গত বছর থেকে ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরু করেন আজরা। মাঝেমধ্যেই ভুল করেন। এই হয়তো ধারাভাষ্যকারের নাম ভুল বললেন; আর টক ব্যাকে শুনতে পান, বকা দিচ্ছেন প্রযোজক। সঙ্গে সঙ্গে শুধরে নেন।
আজরা মাহমুদ বললেন, অনেকেই নাকি টিভির সামনে বসেন একজন নারী মডেলের ক্রিকেট নিয়ে অনুষ্ঠানের ভুল ধরতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে আজরা মাহমুদ ‘ট্রল’ না হওয়ার ক্রেডিট দিলেন সহকর্মী জান্নাতুল পিয়াকে। বললেন, ‘বিপিএলের সময় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। পিয়া ক্রিকেট নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করত। আর যা জানত, সেটা নিজের মধ্যে না রেখে ছড়িয়ে দিত। ওর কাছ থেকেই আমি ক্রিকেট নিয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’ এ সময় আজরা মাহমুদ তাঁর আর পিয়ার একটা মজার ঘটনাও আমাদের শোনান। তাঁরা একসঙ্গে কোনো একটা খেলা শুরু হওয়ার আগে ‘লাইভ’ শেষ করে দৌড় দেন পারলারে—ম্যানিকিউর, পেডিকিউর করাতে। পরবর্তী লাইভ ছিল খেলার ইনিংস শেষে। কিন্তু তাঁরা যখন ম্যানিকিউর–পেডিকিউরের মাঝামাঝিতে আছেন, এমন সময় উইকেট পড়তে শুরু করল। আজরা মাহমুদের ভাষায়, ‘প্রথমে একটা–দুটো, তারপর টপাটপ করে উইকেট পড়তে শুরু করল। সাত উইকেটের সময় আমরা ভোঁ–দৌড় দিলাম। ঠিক ঠিক যখন শো শুরুর ঘোষণা চলছে, ওই সময় অর্ধেক ম্যানিকিউর, পেডিকিউর করে আমরা শো ধরলাম।’
আজরা মাহমুদ মনে করেন, ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনেক বড় একটা দল। নারীরাও ভালো ক্রিকেট খেলছেন। অল্প সময়ে তাঁদের অর্জন কোনোভাবেই কম নয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশে ‘ক্রিকেট ইন্ডাস্ট্রি’ গড়ে উঠছে। আজরা মাহমুদ সেই ইন্ডাস্ট্রির একজন হিসেবে নিজেকে পাকাপোক্ত করে নারীদের ক্রিকেট উপস্থাপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন অনেকটা দূর।