‘কতটা অপমানিত হলে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে?’

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় ‘ক্ষুব্ধ’ ও ‘মর্মাহত’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

শিক্ষকের কথায় অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা ঘটনাকে ‘অত্যন্ত হৃদয়বিদারক’ বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ ঘটনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা শুনেছি। তাদের বলেছি, কেউ অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়? যে ঘটনাগুলো আমরা শুনছি, এর পেছনের কথা শুনছি, ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এটা অভিভাবকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। তাঁদের ছেলেমেয়েদের এখানে পড়াতে চান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয়তার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কথা অনেক আগেই কানে এসেছে। এসব অনিয়মের কারণে টাকার বিনিময়ে ভর্তি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখানে ভর্তির জন্য একসময় ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো, যা বন্ধ করা হয়েছে।

ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা সবাই মর্মাহত। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আগামী তিন দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদনে দিতে বলা হয়েছে। যে শিক্ষক তাকে ভর্ৎসনা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বা যিনি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তদন্তে যদি এর প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ।’

গতকাল সোমবার রাজধানীর শান্তিনগর থেকে অরিত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, স্কুলে নকলের অভিযোগে অপমানের জের ধরে সে আত্মহত্যা করেছে। সে ভিকারুননিসায় নবম শ্রেণিতে পড়ত। বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসকেরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ের পরীক্ষা চলছিল। রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পায়। মোবাইলে নকল করছে—এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার বাবা-মাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়।

দিলীপ অধিকারী অভিযোগ করেন, তিনি স্ত্রী ও অরিত্রীকে নিয়ে স্কুলে যান। তার ছোট মেয়েও একই স্কুলে পড়ে। তাঁরা প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে যান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল তাঁদের ‘অপমান’ করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেওয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতেও বলা হয়। দিলীপ অধিকারী বলেন, এরপর তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে যান। যেখানে স্কুল পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যও ছিলেন। প্রিন্সিপালও ভাইস প্রিন্সিপালের মতো আচরণ করেন।

দিলীপ অধিকারী বলেন, এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে স্ত্রীসহ তিনি বাড়ি গিয়ে দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে। অরিত্রীকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেন তাঁরা। পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। আত্মহত্যা
সূত্র-প্রথম আলো