Site icon Mati News

হুমকিতে দেশের ২ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎ

দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ অন্যান্য পরিবেশগত বিপর্যয় এই ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুর জীবন হুমকিতে পড়ে যাওয়ার কারণ। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) প্রকাশিত জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের আবাদযোগ্য জমির লবণাক্ততা, বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে জীবিকার জন্য অনেকেই গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে। ভরণপোষণ চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক মেয়ে শিশুকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে পরিবার। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু তাদের পরিবারের সঙ্গে শহরে আসছে। এসব শিশু কাজের জন্য ততোটা শক্তপোক্ত নয়।

ইউনিসেফের ঢাকার মুখপাত্র জিন জ্যাকস সাইমন সংবাদমাধ্যম এপিকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ তারা নদী ভাঙন এলাকা বা এসব অঞ্চলের কাছাকাছি বাস করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য ৪৫ লাখ শিশু বাস করে উপকূলীয় অঞ্চলে। এসব শিশুদেরকে সব সময় ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে থাকতে হয়। প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশু যারা শরণার্থী শিবিরে আছে, তারা বাঁশ ও প্লাস্টিকের তৈরি আশ্রয়স্থলে বসবাস করছে। এর বাইরে ৩০ লাখ শিশু যারা দেশের ভেতরে বাস করে, তারা বেশিরভাগ সময় খরায় ভোগে। এ রকম নানা সঙ্কটের কারণে গ্রাম থেকে পরিবারের সঙ্গে শহরে চলে আসছে শিশুরা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬০ লাখ উদ্ধাস্তু শিশু রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই পরিমাণ দ্গিুণেরও বেশি হতে পারে।

লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন সংস্থার ফেলো সলিমুল হক বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ে শিশুরা যে হুমকিতে পড়েছে, তা বাস্তব। তিনি বলেন, স্থিতিশীল অবস্থার ভাল রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব বিপজ্জনকভাবেই রয়ে গেছে বলে বাংলাদেশের শিশুরা শারীরিকভাবে দুর্বল।

প্রতিবেদনে দেশে আঘাত হানা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার ইতিহাস রয়েছে এ দেশে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। এ যুদ্ধে বাংলাদেশের জয় হয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এতে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই ঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চল নিমজ্জিত, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং দেশের অভ্যন্তরের পানিতে লবণ ঢুকে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ব্রহ্মপুত্র নদীর বন্যায় কমপক্ষে ৪৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৫০ হাজার টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো নিরাপদ পানির চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হতো। বন্যায় উপকূলীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে।

তবে জাতিসংঘসহ বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় দিতে কয়েক হাজার আশ্রয়কেন্দ্র গড়েছে। এছাড়া ঝড়ের সময় বিপদগ্রস্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ। সারা দেশে বন্যা সুরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ভৌগলিক কারণে দেশে বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে।

ইউনিসেফ বলছে, ১৯৯০ সালের প্রথমদিকে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ঝুঁকি কমানো কর্মসূচিগুলো দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে থাকা মানুষকে জলবায়ু বিপর্যয়ের বিপদ থেকে সহনশীল করেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দুর্যোগ সত্ত্বেও বিশ্বের ৫টি দ্রুত ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত দশকে, এর হার বছরে ৬ শতাংশ ছিল। জুনে শেষ হতে যাওয়া চলতি অর্থবছরে এটা বেড়ে ৭.৩ শতাংশে দাঁড়াবে।

কিন্তু সরকারের উচ্চা আকাঙ্ক্ষার এজেন্ডা থাকা সত্ত্বেও, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবারগুলো দরিদ্র ও স্থানচ্যুত করছে। ফলে শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশগত হুমকি বাড়ছে। এগুলোর মুখোমুখি হতে হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলোকে। তারা তাদের সন্তানদের যথোপযুক্ত বাসস্থান, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছে না বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সূত্র : কালের কণ্ঠ

Exit mobile version