আর্জেন্টিনার ভাগ্য এখন অন্যের হাতে

হারলে বিদায়ের শঙ্কা। বাঁচা-মরার এমন ম্যাচে দলের সেরা খেলোয়াড়েরা সাধারণত নিজেদের নিংড়ে দেন। কিন্তু কাল আর্জেন্টিনার জন্য লিওনেল মেসি কতটুকু কী করেছেন, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই খোদ আর্জেন্টিনাতেই।
রিকার্ডো কারুসো লোমবার্দি—নামটা দুনিয়ার এ প্রান্তে বেশ অপরিচিত হলেও আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলে বেশ পরিচিত। বর্তমানে আর্জেন্টিনার প্রিমেরা ডিভিশনের দল তাইগ্রের কোচ এই লোমবার্দি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারের পর লোমবার্দি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের স্রেফ ধুয়ে দিয়েছেন। মেসিকেও ছাড় দেননি। আর্জেন্টিনা দলের প্রাণভোমরাকে তাক করে লোমবার্দির তির, ‘মনে হচ্ছে মেসি ইচ্ছে করেই খারাপ খেলেছে।’
কাল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মেসি আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। কৌতুক করে বললে, ক্রোয়াট সেন্টার ব্যাক দেয়ান লভরেনের ‘পকেটবন্দী’ ছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। প্রথমার্ধে মেসির চেয়ে (২০) আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরোই (২২) বেশিবার বল ধরেছেন। কাল ম্যাচ শেষে ধারাভাষ্যকারেরাও বলেছেন, ম্যাচের প্রথমার্ধে ক্রোয়াট পেনাল্টি বক্সের মধ্যে মেসিকে বল ধরতে দেখা যায়নি। আরও একটি পরিসংখ্যান কিন্তু সবাইকে চমকে দেবে, প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের গোলপোস্টে ১১টি শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু কাল ক্রোয়াটদের পোস্টে মেসি শট নিয়েছেন মাত্র ১টি!
অথচ এমন ম্যাচে মেসির ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিল সবার আগে। কিন্তু মেসি কথা রাখতে পারেননি। কেন পারেননি, সেটিই বোঝার চেষ্টা করেছেন লোমবার্দি। এর আগে একটা ইঙ্গিতও দিয়েছেন তাইগ্রে কোচ, যেটা রীতিমতো ভয়ংকর অভিযোগ, ‘এই খেলোয়াড়েরা কোনো কিছুই পরোয়া করে না। তারা কোচিং স্টাফদের ছুড়ে ফেলে বুরুচাগাকে আনতে চায়, অনেকটা স্পেনে যেভাবে হিয়েরো কোচ হয়েছে।’

সাম্পাওলির সঙ্গে মেসি-আগুয়েরোদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না, সাম্পাওলির স্থলে ’৮৬ বিশ্বকাপজয়ী তারকা বুরুচাগাকে চান খেলোয়াড়েরা—এগুলো এখন মোটামুটি চাউর। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ওলে’ একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলা লোমবার্দির মন্তব্যগুলো প্রকাশ করেছে। মেসিকে দুষে তার বক্তব্য, ‘মেসি কোনো কিছু পরোয়া করে না। সে সাম্পাওলির দুর্ব্যবহারের জবাব দিতেই ওভাবে খেলেছে। মেসি যাদের পছন্দ করে, সব সময় তাঁদেরই আশপাশে দেখতে চায়, সেরা খেলোয়াড়দের নয়।’

‘সেরা খেলোয়াড়’—বলতে লোমবার্দি সম্ভবত মাউরো ইকার্দিকে বুঝিয়েছেন। গত মৌসুমে দারুণ ফর্মে থাকলেও সংবাদমাধ্যমের ধারণা, ব্যক্তিগত জীবনে ঝামেলার জন্য আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে ইকার্দির জায়গা হয়নি। লোমবার্দি এখানেই থামেননি। মেসির কড়া সমালোচনা করে তাঁর ভাষ্য, ‘আমার মতে সাম্পাওলিকে বিপদে ফেলতে মেসি ইচ্ছে করেই বাজে খেলেছে। সাম্পাওলির সঙ্গে ওঁরা (জাতীয় দল) যা করেছে সেটা লজ্জার। ওঁরা তাঁকে দলটা গোছাতে দেয়নি। দুজন কোচিং স্টাফের সঙ্গে কথা হয়েছে—আমি জানি ওঁরা খেলোয়াড়দের কাছে জিম্মি। মেসি চলে গেলে সিমিওনে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেবে। ভেতরের ( ফুটবল ফেডারেশন) অনেকের সঙ্গে কথা বলায় আমি অনেক কিছুই জানি।’

আইসল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা ১-১ গোলে ড্র; পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের হারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। সঙ্গে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে পড়ার চোখ রাঙানি। এসব-ই তাহলে কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের জন্য! লোমবার্দির কথায় অন্তত এমনটাই মনে করবেন আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা।