বয়স মাত্র কুড়ি। এই বয়সের আর পাঁচটা তরুণের যেমন স্বভাব, তিনিও তার ব্যতিক্রম নন। বাড়ির ছেলেকে সর্বক্ষণ মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকতে দেখে বকাবকি করতেন অভিভাবকেরা। ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটির সূত্রেই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের তরুণের হাতে উঠে এসেছে ইউটিউব ক্রিয়েটার অ্যাওয়ার্ড।
শুধু প্রশংসা বা মানপত্র নয়, বাড়ির লোকেরা যাকে ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ বলতেন, সেই ভিডিয়ো তৈরির সুবাদে আর্থিক প্রাপ্তিও ঘটেছে টাকি সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিক রাজার। ভিডিয়ো কতবার দেখা হল, কত শেয়ার হল তার নিরিখে এই পুরস্কার দেয় ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। তবে এই পুরস্কারের অন্যতম শর্ত, সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের অন্তত ১ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
কী নিয়ে ভিডিয়ো বানান আশিক? ওই যুবক জানালেন, সমস্যা থেকে না পালিয়ে তার মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্রই রয়েছে ভিডিয়োতে। আর তাতেই কেল্লা ফতে। কোনও কোনও ভিডিয়ো দেখা হয়েছে লক্ষাধিকবার। উত্তর গোলাইচণ্ডী গ্রামের আবদুর রশিদ মোল্লার একমাত্র সন্তান আশিক। তাঁকে এ বার ইউটিউব অ্যাওয়ার্ড সিলভার প্লে বাটন দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছে গুগল। শনিবার এই পুরস্কার পৌঁছয় আশিকের বাড়িতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশিক বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে। কলেজে পা রাখার পরে স্মার্ট ফোন হাতে পান আশিক। সেই সুবাদেই ইউটিউবের সঙ্গে পরিচয়।
আশিক জানান, ইউটিউবের কিছু ভিডিয়ো তাঁকে উদ্বুব্ধ করেছিল নিজের ভিডিয়ো তৈরিতে। বছরখানেক চেষ্টার পরে নিজের ভিডিয়ো পোস্ট করতে শুরু করেন তিনি। আশিক বলেন, ‘‘বহু মানুষকে জীবনের ব্যর্থতা থেকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে দেখে ঠিক করি, ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়াব। ব্যর্থতা জীবনের শেষ কথা নয়। সেখান থেকে যে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করব। সেই ভাবনা থেকেই শুরু ভিডিয়ো তৈরি।’’
এক বছরে আশিক ৩৪টি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেই সুবাদে রোজগারও হচ্ছে তাঁর। গত ছ’মাসে মোটা অঙ্কের অর্থপ্রাপ্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আশিক নিজেই। তাঁর মা রেবেকা খাতুন বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ছেলের হাতে সর্বক্ষণ ফোন দেখলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে বকাবকি করতাম। সেই ফোন যে ছেলেকে এমন সাফল্য এনে দেবে, তা ভাবতেও পারিনি।’’
Post Views: 1,426