ওজন কমাতে নিয়মিত খান এই খাবারগুলো

মাত্রাতিরিক্ত ওজনের সমস্যা বর্তমানে সমাজে বিশাল আকার নিয়েছে। ছোট বড় সবাই এখন এই সমস্যায় ভুগেন। আর এই বেড়ে যাওয়া ওজন আপনার ফুসফুসের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমতে শুরু করলে ফুসফুসের ওপর এমন খারাপ প্রভাব পরে যে অ্যাজমার (হাঁপানি) মতো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা যায় বেড়ে।  শুধু তাই নয়,অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। যেমন:হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গলব্লাডারে স্টোন, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি। এমনকি অতিরিক্ত ওজনের কারণে দেহের অন্দরে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এখানে কিছু খাবারের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে,যা নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে দেহের ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। সেই সঙ্গে ভিতর এবং বাইরে থেকে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। চলুন জেনে নেই সেসব খাবারের কথা-

লাউ : এই সবজিটিতে উপস্থিত ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বার বার খাওয়ার প্রবণতা যেমন কমে,তেমনি খাবারের পরিমাণও হ্রাস পায়। আর কম খাওয়ার কারণে ওজন কমতে যে সময় লাগে না,তা  বলা বাহুল্য। লাউয়ে উপস্থিত আরও নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন অনিদ্রার মতো সমস্যার প্রকোপ কমায়,তেমনি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।

মরিচ : যে কোনও খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত এই সবজিটি অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে নানাভাবে কাজে লাগে। মরিচের শরীরে থাকা ডিহাইড্রোক্যাপসিয়েট নামক একটি উপাদান হজম ক্ষমতাতে এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে কোনও খাবারই পুরো মাত্রায় হজম হতে সময় লাগে না। ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগ থাকে না। তবে এখানেই শেষ নয়,মরিচে থাকা ভিটামিন সি এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়লে শরীরের মধ্যভাগে মেদ জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমাতে পারে একমাত্র ভিটামিন সি।

মুগ ডাল : শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদকে ঝরিয়ে ফেলতে মুগ ডালের কোনো বিকল্প হয় না। এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ভিটামিন এ,বি,সি,ই এবং আরও নানাবিধ উপকারী উপাদান,যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফাইবার এবং প্রোটিন,শরীরে প্রবেশ করলে ওজন কমাতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়।

ফুলকপি : প্রস্টেট, ব্রেস্ট, লাং ও স্কিন ক্যান্সারকে দূরে রাখার পাশাপাশি এই সবজিটির অন্দরে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস,টেস্টোস্টেরন পরিবারের আরেক সদস্য  হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিও কমিয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়, ফুলকপি ও ব্রকিলতে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি-এর সন্ধান পাওয়া যায়,যা স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পেঁয়াজ : কুয়েরসেটিন নামে এক ধরনের ফ্লেবোনয়েড ভরা রয়েছে পিঁয়াজের শরীরে। এই উপাদানটি চর্বিকে গলিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়,অতিরিক্ত ওজনের কারণে যাতে কোনও ভাবেই হার্টের ক্ষতি না হয়,সেদিকে খেয়াল রাখতেও পিঁয়াজের জুড়ি মেলা ভার। তাই ওজন কমানোর পাশপাশি হার্টকে দীর্ঘকাল সুস্থ রাখতে চাইলে প্রতিদিন পেঁয়াজ খেতে পারেন।

গাজর : বিটা-ক্যারোটিন এবং ফাইবারে ঠাসা এই সবজিটি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা যেমন কমে,তেমনি কাজের ফাঁকে চিপস,কোল্ড ড্রিঙ্কের আনাগোনাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওজন কমাতে আর কোনও বাধাই থাকে না। গাজরে থাকা ডায়াটারি ফাইবার নানাবিধ পেটের রোগ এবং কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পালং শাক : বাঙালির প্রিয় এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন এবং থাইলেকয়েডস। এই দুটি উপাদানই অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। আর পেট ভরা থাকলে অল্প অল্প করে,বারে বারে খাবার খাওয়ার ইচ্ছে চলে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা হ্রাস পায়। সবুজ এই সবজিটি ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরের গঠনে আরও নানাভাবে ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিন যদি পালং শাক খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন,তাহলে শরীর নিয়ে আরও কোনও চিন্তাই থাকে না।

মাশরুম : গবেষণাতে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ওজন কমাতে এই সবজিটির কোনো বিকল্প হয় না। কারণ এতে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন অতিরিক্ত ওজন ঝরানোর কাজটা করে থাকে। আসলে শরীরে ফাইবার এবং প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যালরি গ্রহণের ইচ্ছা কমে যায়। আর ক্যালরি কম মাত্রায় শরীরে ঢোকা মানে ওজন কমার হার বেড়ে যাওয়া।

বাটার মিল্ক : প্রথমে অল্প পরিমাণ দই নিয়ে ভালো করে তা ফেটিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে পরিমাণ মতো পানি ও বিট লবন মিশিয়ে যে পানীয়টি তৈরি হবে,তাই ‘বাটার মিল্ক’ নামে পরিচিত। পুষ্টিবিদদের মতে, নিয়মিত এক বা দুই গ্লাস বাটার মিল্ক খেলে শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে ওজন দ্রুত কমে।