শুধু বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কেন, দণ্ডিত কেউই অংশ নিতে পারবেন না একথা তো আমি আগেও বলেছি। উনি সম্পূর্ণ খালাস পেলে অথবা সেনটেন্স বাতিল করে দিলে, তখন উনি পারবেন।
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আদালতে আমি বলেছিলাম, ফৌজদারি আদালত, বিশেষ করে ফৌজদারি আপিল আদালত তাদের সাজা (সেনটেন্স) স্থগিত করতে পারেন। কিন্তু কনভিকশন মানে তাকে যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেটাকে স্থগিত করার কোনো সুযোগ নেই।
‘আর বিশেষ করে আমি সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) উল্লেখ করে বলেছিলাম, এই সমস্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পরবেন না বা সংসদ সদস্য হিসেবেও থাকতে পারবেন না।’
‘যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি লাভের পরে পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হয়, যে ব্যক্তিরা দরখাস্ত করেছেন তারা সবাই দণ্ডিত। এরা তাদের দণ্ড থেকে এখনও মুক্তি লাভ করেননি। এবং তাদের পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি।’
এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ডকে স্থগিত করে তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয় তবে তা হবে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আমাদের এ বক্তব্যগুলো আদালত গ্রহণ করে তাদের দরখাস্তগুলো খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অবকাশ থাকবে না বলে আমি মনে করি। বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
দুর্নীতির অভিযোগে প্রাপ্ত দণ্ড (কনভিকশন অ্যান্ড সেনটেন্স) স্থগিত চেয়ে করা বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এ আদেশের পর এমন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবী।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে বলেন, নিশ্চয়ই, এটা তো সাংবিধানিক বিধিবিধান। কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বা সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পার্লামেন্টে থাকতে পারবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তিলাভের পরে পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়।
‘এখানে কন্ডিশন হলো, বেসিক্যালি দুইটা। তিনি যদি দণ্ডিত হন পারবেন না। ইতোমধ্যে তিনি যদি তার দণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেন বা তার সাজা যদি বাতিল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে বাতিলের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি পারবেন না। মানে দুটো প্রতিবন্ধকতা তার আছে। এটা সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতা। কাজেই যেকোনো আদালত তার রায় দিয়ে এই সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতাকে ওভারকাম করতে পারেন না, এটাকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না।
হাইকোর্ট আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। এখন তারা যদি আপিল করে, তবে আপিল বিভাগে আমরা একই বক্তব্য দেব।
খালেদা জিয়া দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, তাহলে কি তাকে নির্বাচনের জন্য ২৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে? এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধান তো তাই বলে। আর উনি যদি খালাস পেয়ে যান তারপরও তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।