একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইশতেহার তৈরির কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এরমধ্যে কয়েকটি ইশতেহার প্রকাশিত হলেও প্রধান দলগুলো খসড়া চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত। খসড়া পর্যালোচনা করে নারীনেত্রীরা বলছেন, নারীর ক্ষমতায়নের কথা অনেক হয়েছে। এখন ইশতেহারে তা বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। এমনকি যে দল হারবে, তারা বিরোধী দল হিসেবে সেসব দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে, দলগুলোর কাছ থেকে আমরা এখন এই প্রত্যাশা করি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের খসড়া ইশতেহারের ওপরে কাজ চলছে। চূড়ান্ত না হওয়ায় নারী ইস্যুতে এবার নতুন কী থাকছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত না জানালেও ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতা, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি ও নারী উন্নয়নে যা যা বিষয় বিদ্যমান এবং জরুরি সেটি এবারের ইশতেহারে ফুটে উঠবে।’
বাংলাদেশের মতো দেশে এত অল্প সময়ে নারী ক্ষমতায়নের যে উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারীর এই এগিয়ে যেতে পারার যে দর্শন তার উল্লেখ থাকছে।’
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের ব্যাপারে জানা গেছে, নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ বাধ্যতামূলক মনোনয়নের বিধান করা হবে। তবে এই বিধান প্রণয়ন করা হলেও আগামী অন্তত দুটি নির্বাচনে ১০ শতাংশ সংরক্ষিত নারী আসন রাখা হবে ৩০০ আসনের বাইরে। এছাড়া, ডে কেয়ার স্থাপন, বেসরকারি ডে কেয়ার স্থাপনে ঋণ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও থাকবে
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারে বলা হয়েছে, নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এর অংশ হিসেবে নারীদের ওপর সংঘটিত নানা অত্যাচার বৈষম্য দূর করা, সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা, এমনকি পারিবারিক উত্তরাধিকার আইনের বৈষম্য রোধেও কাজ করার কথা জানিয়েছে দলটি।
ইশতেহার খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে উল্লেখ করে গণসংহতির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইশতেহারে সর্বক্ষেত্রে নারীর জন্য সমঅধিকারের বিষয়গুলোর আইনগত বিধান করার বিষয়টি উল্লেখ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আসছে ইশতেহারে ঘরে-বাইরে কর্মস্থলে নারীর যে নিরাপত্তার প্রশ্ন, বিশেষত যৌন হয়রানি নিয়ে যে নীতিমালা রয়েছে, সেটি আইনে পরিণত করার বিষয়টি থাকবে। পাশাপাশি শিক্ষা কাযক্রমে যৌন হয়রানি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মতো কাজগুলোও তারা করতে চান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আইনগত ও সাংবিধানিক দিক থেকে নারীর সমতা নিশ্চিত করা। নিরপত্তা নিশ্চিত ও অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাঠামো পুনর্বিন্যাস করারও পরিকল্পনা আছে।’
নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের সমানাধিকার ও বৈষম্যবিরোধী কমিশন তৈরি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। নারীর ক্ষমতায়ন করা হবে, আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে— এসব ভাসাভাসা কথা দিয়ে আর হবে না। ক্ষমতায়নটাকে কাজে লাগিয়ে সমতা নির্ধারণ কীভাবে করবেন, সেই দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। কেবল ভোটের জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড না, নারীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে আইন বাস্তবায়নে কী কী করবে, তার উল্লেখ স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি নির্বাচনে না জিতেন, সেক্ষেত্রে বিরোধীদল হিসেবে এসব বাস্তবায়নে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবেন। দলগুলোর কাছ থেকে আমরা এখন এই প্রত্যাশা করি। একটাই কথা, ভাসাভাসা কোনও প্রতিশ্রুতি না, সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়ন নীতি থাকতে হবে।’
নিজেরা করি’র প্রধান নির্বাহী নারী অধিকার নেত্রী খুশি কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন পারিবারিক আইনের কথা বলে আসছি, যারা পারিবারিক আইন নিয়ে কথা তুলবেন, তারা সংশোধনের জায়গাগুলো উল্লেখ করলে সেটি ভাল হবে। আমরা ইশতেহারে কেবল প্রতিশ্রুতি চাই না, ইশতেহারের বাস্তবায়ন চাই এবং বাস্তবায়ন কোন উপায়ে করবেন, সেটিও যেন ইশতেহারে উল্লেখ থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীর গৃহস্থালী কাজ অর্থনীতিতে যুক্ত করার কথা মুখে না বলে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বীকার না করলেও এখনও বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য বিদ্যমান। সেটি দূরীকরণে কী পদক্ষেপ আসবে, আমরা সেটি শুনতে চাই।’