মানুষ কি আবার বানর হওয়ার পথে?

একটি অসাধারণ ভালো খবর দিয়ে বাংলা নতুন বছরের প্রথম লেখাটা শুরু করতে চাই। অধ্যাপক নাজমা আখতার প্রায় একশত বছরের পুরনো ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা উপাচার্য হিসেবে শুক্রবার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চদশ উপাচার্য। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. জাকির হোসেন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মোহাম্মদ আলি জোহর, আবদুল মাজিদ খাওয়জা, মাসিরুল হাসানের মতো ব্যক্তিরা উপাচার্য ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্ম আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। পরবর্তীকালে এটি নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়ার জন্য ভারতের পার্লামেন্টে একটি বিশেষ আইন পাস করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শিক্ষা-দীক্ষায় ভারতের পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় আকৃষ্ট করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু ভারতের একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত নয়, এটি বিশ্বের সব র‌্যাংকিংয়ে নিজের জন্য একটি শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় যদিও গোড়াতে মুসলমানদের জন্য স্থাপিত হয়েছিল, বর্তমানে এখানে সব ধর্মের অনুসারীরা অধ্যয়ন অথবা অধ্যাপনা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ খুবই সমৃদ্ধশালী যেমন সমৃদ্ধশালী উর্দু বিভাগ। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক নাজমা আখতার একজন স্বাভাবিক মহিলা, ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে তিনি কোনও বস্তার মধ্যে প্রবেশ করেননি।

এবার আমার আসল  প্রসঙ্গে ফিরে যাই। বিশিষ্ট ভাষাবিদ, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র (১৮৮৫-১৯৬৯) নামে একটা কথা প্রচলিত আছে। তার জীবদ্দশায় তিনি তার সময়কার মানুষের আচার-আচরণ বিশ্লেষণপূর্বক নাকি মন্তব্য করেছিলেন, ‘বিজ্ঞানী ডারউইন যে বলেছিলেন মানুষের আদি পুরুষ বানর ছিল (ডারউইন অবশ্য ঠিক তেমনটি বলেননি) তা মনে হয় সত্য এবং আরও সত্য, মানুষ বর্তমানে তাদের আচার-আচরণে প্রমাণ করেছে তারা আবার তাদের মূল শেকড়ে ফিরে যাচ্ছে, অর্থাৎ তারা আবার বানর হওয়ার পথে’। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তেমন কোনও কথা বলেছিলেন কি না তা সঠিকভাবে জানি না, তবে বর্তমানে মনুষ্যরূপী কিছু দু’পায়া পশুর আচরণ দেখে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ নামে প্রচলিত বাক্যটি সঠিক মনে হচ্ছে। এর একেবারেই তাজা প্রমাণ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) ওই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলা কর্তৃক যৌন নিপীড়ন ও তাতে রাফিকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা। এই ঘটনায় বর্তমানে বাংলাদেশে তো বটেই বহির্বিশ্বেও তা নিয়ে তোলপাড় চলছে।  মাদ্রাসার আভিধানিক অর্থ বিদ্যালয় বা শিক্ষাঙ্গন যেখানে সব ধরনের জ্ঞানের চর্চা হয়। ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন প্রথম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (স.) পবিত্র মক্কা নগরীতে ইসলামের শুরুর যুগে তার অনুসারীদের নতুন ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। মদিনায় হিজরতের পর তিনি সেখানেও একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যার দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। আল্লাহ রাসূলের মূলবাণী ছিল মানুষে মানুষে সৌভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দ্য,  মদিনার সনদ যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি যখন তার অনুসারীদের নিয়ে পবিত্র মদিনায় হিজরত করেন সেই সময় মদিনা নগরীর জনসংখ্যার সংখ্যাগুরুই ছিলেন ইহুদি। তিনি সে সময় জোর দেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ওপর। প্রতিষ্ঠা করেন মাদ্রাসা বা বিদ্যালয়। সেইসব মাদ্রাসায় ধর্ম শিক্ষা ছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসা, যৌক্তিক চিন্তার কৌশল (Logical Reasoning),  হস্তলিখন, শারীরিক শিক্ষা, মার্শাল আর্ট, সমরবিধ্যা, ঘোড়ায় চড়া ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হতো। খেলাফতের যুগে ধীরে ধীরে এই মাদ্রাসাগুলো সত্যিকারের অর্থে জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয় আইন শাস্ত্র, গণিত শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, রসায়ন শাস্ত্র, দর্শন প্রভৃতি। এই জ্ঞান চর্চার কারণেই পঞ্চম শতকে রোম সাম্রাজ্যের পতন হওয়ার ফলে যখন সমগ্র ইউরোপ এক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে তখন শুরু হয় ইসলামের স্বর্ণযুগ, যার মূল চালিকাশক্তি ছিল জ্ঞান সৃষ্টি, তার  চর্চা ও প্রয়োগ। সেই যুগে যে সকল জগৎ বিখ্যাত পণ্ডিত মুসলিম দুনিয়ায় বিচরণ করেছিলেন তেমনটি বর্তমানে দেখা যায় না কারণ বর্তমানে দেখা যায় এক শ্রেণির ধর্মান্ধ স্বঘোষিত ইসলামি পণ্ডিতের, যারা না সঠিকভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা করতে পারেন, না ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন। তাদের অধিকাংশই ধর্ম নিয়ে শ্রেফ ব্যবসা করেন। তাদের অনেকেই সারা রাত ওয়াজ মাহফিলের নামে নারীদের নিয়ে অশ্লীল কথা বলেন। তেমন একজন ধর্ম ব্যবসায়ী ক’দিন আগে কোনও এক রাতের ওয়াজে সিজারিয়ান অপারেশনের নামে হাসপাতালগুলোর ব্যবসা নিয়ে বলতে গিয়ে বলছিলেন ‘কুত্তিরও তো পাঁচ ছয়টা বাচ্চা হয়, তখন যদি সিজারিয়ান অপারেশন করার প্রয়োজন না হয়ে থাকে তাহলে মানুষের বাচ্চা হওয়ার সময় কেন সিজারিয়ান লাগবে?’ ভালো বিষয়, কিন্তু তিনি কি এটি বুঝতে পেরেছেন তিনি একজন সন্তানসম্ভবা মাকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করছেন? তিনি নাকি আবার কোনও একটি টিভিতে ইসলামের বাণী প্রচার করেন। তার বক্তব্য ইউটিউবে প্রচার হওয়ার পর যখন তিনি তার বক্তব্যের জন্য সমালোচিত হওয়া শুরু করলেন তখন এক ব্যাখ্যায় তিনি বলেন এইসব ওয়াজ গভীর রাতে হয় এবং তখন অনেক মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। তাদেরকে জাগিয়ে রাখার জন্য এইসব সুড়সুড়ি দেওয়ার কথা বলতে হয়। প্রথম কথা হচ্ছে, একজন ভালো আলেম হলে তার কথা শুনতে মানুষ এমনিতেই জেগে থাকবে, সুড়সুড়ি দিতে হবে কেন? তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে কেন গভীর রাত পর্যন্ত মাইকের মাধ্যমে এইসব তথাকথিত ওয়াজ প্রচার করে পাড়া মহল্লার মানুষের ঘুম হারাম করবেন?

ফিরে যাই ইসলামের স্বর্ণ যুগে। সপ্তম শতক হতে শুরু করে পরবর্তী এক হাজার বছর জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মুসলিম দুনিয়া। তখন জ্ঞানের কোনও ধর্ম ছিল না। জ্ঞান ছিল সর্বজনীন। মোহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারজোযোয়নি (৭৮০-৯৫০) ছিলেন তার সময়ে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ আর বাগদাদের সবচেয়ে চিন্তাশীল ব্যক্তি। মরক্কোর ইবনে বতুতা (১৩০৪-১৩৬৯) স্থল ও সমুদ্রপথে ভ্রমণ করেছিলেন উত্তর আফ্রিকা আর এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। যখন সমগ্র ইউরোপ অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে তখন মুসলমান শাসিত স্পেন হয়ে ওঠে জ্ঞানচর্চার একমাত্র তীর্থক্ষেত্র। ওমর খৈয়ামের (১০৪৮-১১৩১) মতো গণিতশাস্ত্রবিদ আর দার্শনিক বিশ্বে খুব বেশি জন্মলাভ করেননি। দার্শনিক আল ফারাবি (৮৭২-৯৫০) অ্যারিসটোটল আর প্লেটোর রচনা আরবিতে অনুবাদ করে মুসলিম দুনিয়ায় পরিচিত করিয়েছিলেন। ইবনে খালদুন, ইমাম গাজ্জালি, আবু রুশদ, ইবনে সিনার মতো জগৎ বিখ্যাত পণ্ডিত দার্শনিকের বিদ্যা অর্জনের কেন্দ্র ছিল সেই স্বর্ণযুগের মাদ্রাসা। পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া মাদ্রাসার মাধ্যমে জ্ঞান চর্চার বিস্তার ঘটেছিল মরক্কো, বাগদাদ, সিরিয়া, উজবেকিস্তান, পারস্য অঞ্চল (বর্তমানে ইরান), ভারতবর্ষ আর মধ্য এশিয়ায়।

বাংলাদেশসহ অনেক দেশের মাদ্রাসা বর্তমান ব্যবস্থায় আর কোনও পণ্ডিত সৃষ্টি করে না। করে ফেনীর সেই ধর্ষক প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজের মতো মনুষ্যরূপী হায়েনা, যাদের যৌন লালসার শিকার হয়ে আগুনে পুড়ে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে আমাদের কন্যা বা বোন নুসরাত জাহান রাফি।

বর্তমানে মাদ্রাসা সংবাদের শিরোনাম হয় ধর্ষণ, বলাৎকার আর হত্যার জন্য। এমন মাদ্রাসা ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে ওসামা বিন লাদেন আর মোল্লা ওমরের মতো সন্ত্রাসের ফেরিওয়ালা। সৃষ্টি করবে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মতো মানবতাবিরোধী অপরাধী। সৃষ্টি করবে ধর্মপরায়ণ নয় ধর্মান্ধ মানুষ। বাংলাদেশে গত চল্লিশ বছরে জ্যামিতিক হারে মাদ্রাসা, মসজিদ আর ‘আল্লামা’র সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর চেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ধর্ষক, পরজীবী, ধান্ধাবাজ, চাঁদাবাজ, চশমখোর, ভণ্ড প্রতারক। দেশে ওয়াজ নসিহত তো কম হয় না, তাহলে তাতে কোনও কাজ হচ্ছে না কেন? তার অন্যতম কারণ যারা এইসব ধর্মের কথা বলেন তাদের অধিকাংশই ধর্মের প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো জ্ঞান রাখেন না, কারণ সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো জ্ঞান তাদের শেখানো হয়নি বা শেখেননি। তাদের শেখানো হয়েছে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা প্রচার করা, নারীদের নিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়ার মতো মন্তব্য করা, পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে অশিক্ষা কুশিক্ষা প্রচার করা। অথচ ইসলাম সব সময় ধৈর্য, সৎ সাহস আর সহনশীলতার শিক্ষা দিয়েছে। এই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সংস্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার সুফলের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় তারা প্রধানমন্ত্রীর মাদ্রাসা বিষয়ক সিদ্ধান্তকে তাদের প্রতি তার দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন। এটি মনে করে থাকলে তারা মারাত্মক ভুল করবেন। এখনও বাংলা নববর্ষের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হচ্ছে কিন্তু নুসরাতের ঘটনার জন্য এই কথিত আলেমদের কাছ হতে কোনও প্রতিবাদ শোনা যাচ্ছে না। অনেকটা প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের কারণে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কুশীলবদের দ্রুত আটক করা হয়েছে। দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে এইসব দুর্বৃত্তকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে এবং এই শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা তেমন কিছু হবে না, হবে দোষী ব্যক্তিকে ক্লীব (neuter) করে দেওয়ার মতো শাস্তি। প্রয়োজনে তেমন আইন করতে হবে।  অনেক দেশে তা প্রচলিত আছে। এক সময় অ্যাসিড সন্ত্রাস মহামারী আকার ধারণ করেছিল। যখন এই অপরাধের জন্য দোষী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আইন করা হলো তখন হতে অ্যাসিড সন্ত্রাস প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কওমি মাদ্রাসার একদল শিক্ষার্থী ঘোষণা করলো তারা তাদের শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা হতে দেবে না। স্থানীয় প্রশাসন যখন এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিলো তখন তারা তাদের অবস্থান হতে সরে আসলো। তারা আরও বললো নুসরাত আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রী ছিল। সেখানে সহ শিক্ষা চালু আছে বলে তার এমন পরিণতি। তারা ভুলে গেলো যেসব মাদ্রাসায় বলাৎকারের ঘটনা ঘটে সেগুলোর বেশিরভাগই  কওমি মাদ্রাসা।

মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার যৌন লালসার  কারণে নুসরাত জাহান রাফি ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। সে এখন শুধু তার বাবা-মার কন্যা নয়, সে বাংলাদেশের কন্যা। রাফি নিজের জীবন দিয়ে শিখিয়ে গেছে কেমন করে ধর্মের নামে বেসাতি করা লম্পট আর দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়।

তুরস্কের মতো দেশে ইচ্ছা করলেই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ বা মসজিদের ইমাম হওয়া যায় না। তাদের অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মতো পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেতে হয়। ইচ্ছা করলেই যেখানে সেখানে মাদ্রাসা বা মসজিদ স্থাপন করা যায় না। প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন হয় আর তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত থাকে। অনেকে মনে করেন বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার নামে যা হচ্ছে বিশেষ করে কওমি ঘরানার মাদ্রাসায় তা বন্ধ করতে হলে মাদ্রাসাই বন্ধ করতে হবে। এটি বাস্তবসম্মত নয়, তবে যা বাস্তবসম্মত তা হচ্ছে এই মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যসূচির আমূল পরিবর্তন করা যেন এখানেই একদিন একজন ইমাম গাজ্জালি, ইবনে খালদুন, ইবনে সিনা অথবা আল ফারাবি তৈরি হবে, পবিত্র ইসলাম ধর্মের কোনও অপব্যাখ্যা দানকারী নন, যার ফলে মানুষে মানুষে হিংসা আর বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ভারতের জামিয়া মিল্লিয়ায় যা ঘটেছে তা অনেকটা একটি বিপ্লবী ঘটনা। বাংলাদেশে তেমন একটি ঘটনার জন্য আরো কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা বলা মুশকিল।

লেখাটি শেষ করি গত ৩ মে ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক টেলিগ্রাফে প্রকাশিত দেবদ্বিপ পুরোহিতের একটি লেখা হতে একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত দু’মেয়াদেরে অর্জনগুলোর অনেক প্রশংসা যেমন করেছেন ঠিক তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের কথাও বলেছেন। এর মধ্যে আছে ব্যাংক খাত, দুর্নীতিকে লাগাম টেনে ধরা আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো কার্যকর করে তোলা। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখে বলেছেন এইসব সংস্কার করা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব, কারণ বাংলাদেশে আর একজন শেখ হাসিনা জন্ম নেবেন না। দেশের চিন্তাশীল মানুষও তাই মনে করেন সম্ভবত সেই কারণেই দেশের সকল সমস্যার সমাধানের জন্য শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। সরকার ও দেশের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই রুখে দিতে পারে মানুষের বানর হওয়ার উল্টো পথের যাত্রাকে।

আমার পাঠকদের বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক