সিঙ্গাপুরের বিদেশি শ্রমিক কমে গেলে দেশটির অর্থনীতি ও ব্যবসায় তার প্রভাব পড়ে মারাত্মক। করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগে অভিবাসী এবং তাদের আবাসন পরিস্থিতি স্পষ্টলাইটে রয়েছে। দেশটি অভিবাসীদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে এটাও একটা বড় কারণ।
সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের ৯০ ভাগই অভিবাসী। বুধবার বেশ কয়েকটি সমিতি এবং নৃ-গোষ্ঠী বাণিজ্য সংস্থা সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি বজায় রাখতে বিদেশি শ্রমিকরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া অভিবাসীদের শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস হওয়া উচিত নয় বলেও জানানো হয়।
তবে সিঙ্গাপুরে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক জনসংখ্যা এবং নিম্ন জন্মহার অন্যতম তাছাড়া সিঙ্গাপুরিয়ানরা ম্যানেজার, নির্বাহী, চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়।
‘যদি সিঙ্গাপুর বিভিন্ন শিল্পে প্রতিযোগিতামূলক প্রবণতা হারায় তবে শ্রমের চাহিদা হ্রাস পাবে এবং চাকরি, জীবিকা ও ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়বে। ফলস্বরূপ, সিঙ্গাপুরবাসীর জন্য পিএমইটি জবের কম সুযোগ থাকবে, যেমন রফতানিমুখী শিল্পগুলিতে’।
হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (এইচডিবি) ফ্ল্যাটগুলিসহ আবাসন প্রকল্প আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে এবং এটি তৈরিতে আরও দীর্ঘ সময় লাগবে বলেও জানান তারা। বর্তমানে কনস্ট্রাকশন সেক্টরে প্রায় ৩ লাখ অভিবাসী কর্মী ও ১ লাখ স্থানীয় কর্মী নিয়োগ রয়েছে।
সিঙ্গাপুর কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড (এসসিএএল) জানিয়েছে, নির্মাণ খাতে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস করার ফলে কোম্পানিগুলি নতুন উৎপাদন সুবিধা, এনার্জি প্লান্ট এবং পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান তৈরির মতো প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করা দীর্ঘায়িত হবে৷
এক বিবৃতিতে সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ বাণিজ্য জোট বলেছে, ‘সিঙ্গাপুরিয়ানরা কি আদৌ প্রস্তুত আছে উচ্চতর ব্যয় এবং অসুবিধাগুলি মেনে নেওয়ার জন্য৷ যদি শ্রম নির্ভর কর্মক্ষেত্রগুলো স্থানীয়দের মাধ্যমে না হলে তখন ঝামেলার শেষ থাকবে না।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ এবং এথিনিক চেম্বার অফ কমার্স আরও উল্লেখ করেছে সিঙ্গাপুরের ‘বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ’ তাদের অভিবাসী শ্রমিকদের দেখাশোনা করার জন্য দায়বদ্ধ।
‘বেসলাইন হিসাবে, আবাসন, কর্মসংস্থান সুবিধাগুলি এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভিবাসী কর্মীদের জন্য নিয়ামক কাঠামো শক্তিশালী এবং বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি যে বেশিরভাগ নিয়োগকর্তা এই বিধিগুলি মেনে চলে’।
অভিবাসী কর্মীদের জন্য এই অঞ্চলে সিঙ্গাপুর একটি শীর্ষ পছন্দ। এখানকার শ্রমিকরা তাদের নিজ দেশগুলির তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি উপার্জন করেন। কারও কারও কাছে, সিঙ্গাপুরে তাদের বার্ষিক বেতন তারা নিজ দেশে যা পান তার চেয়ে দশগুণ বেশি হয়৷
শ্রমিকরা সিঙ্গাপুরে আইন দ্বারা সুরক্ষিত এবং নিয়োগকর্তাদের সাথে মতবিরোধ বা মতপার্থক্য দেখা দিলে, একাধিক চ্যানেলে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারে৷
এসএমএফ, এএসপিআরআই এবং এএসএমআই যোগ করেছে যে সিঙ্গাপুরের নিয়োগকর্তারা বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবার মতো সুবিধাও সরবরাহ করে, যাদের আবাসন ও সুযোগসুবিধাই ‘সেরাদের মধ্যে’ রয়েছে।
প্রবাসীরা জানান, আমরা গর্বিত কারণ দেশটিতে শ্রমিকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে, যা অন্য কোথাও স্বাভাবিকভাবে হয় না। সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আমরা যে আবাসন এবং সুযোগ-সুবিধাগুলি সরবরাহ করি সেগুলি সবচেয়ে সেরা।
প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষে মত দিলেন সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা