পয়সা থাকলেও খাবেন না থাকলেও খাবেন এ হোটেলে

সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট এলাকায় নেমে সাংবাদিক আকরামুল ইসলামের খোঁজ করলাম। ‘গরীবে নেওয়াজ’ তিনি ভালো চেনেন। তাঁর বাইকে চেপেই সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মহাসড়ক ধরে প্রায় ১০ মিনিট গেলাম। সড়কের এক ধারে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগ, আরেক ধারে একাডেমিক ভবন। আরেকটু পরেই দেখলাম লাল রঙের একটি সাইনবোর্ড। লেখা—গরীবে নেওয়াজ। তারপর আরো লেখা—তেল মাথায় দেন, গামছা নেন, গোসল করেন, ভাত খান, পয়সা থাকলেও খাবেন, না থাকলেও খাবেন।

হোটেলটি ছোটখাটো। ঘর টিনের। বড়জোর সাত-আটজন মানুষ একসঙ্গে বসে খেতে পারেন। টেবিল একটাই। সেটি ঘিরে কয়েকটি চেয়ার। খাবার রাখার আলমারি আছে আর আছে একটি টেলিভিশন।

 

যে কারণে পয়সা ছাড়া

হোটেলের মালিক আব্দুর রশিদ সরদারের কাছে জানতে চাইলাম, পয়সা না থাকলেও খাওয়ান কেন? বললেন, ‘কে কখন কোন বিপদে পড়ে, তার কথা কারোর জানা নেই। এখানে অনেকেই আসেন রোগী সঙ্গে করে। গরিব মানুষ তাঁরা। তাঁদের ফ্রি খেতে দিতে হয়। অসহায় মানুষ। বেশি কিছু পারি না, খাবার দিয়ে সাহায্য করি।’

 

শুরুর কথা

মেডিক্যাল কলেজ এলাকার প্রথম দোকানি আব্দুর রশিদ। হিসাব করে বললেন, ‘এখানে দোকান করছি ছয় বছর হয়। তখন ভ্যানের ওপর ছিল দোকান। রুটি, কলা ইত্যাদি বিক্রি করতাম। তারপর এই হোটেল করেছি তিন বছর হলো। আমার স্ত্রী আর ছেলে এই হোটেলেই কাজ করে।’ গরীবে নেওয়াজে দুপুরে পাওয়া যায় সাদা ভাত, ডাল, মাছ আর মাংস। চা, পানি, কেক, বিস্কুট সব সময়ই পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা কেনাবেচা হয়।

হোটেলেই ঘুম

এখন পর্যন্ত কতজনকে ফ্রি খাইয়েছেন তার হিসাব রাখেননি আব্দুর রশিদ সরদার। হিসাব রাখেননি নিজের বয়সেরও। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের চরবালিথা গ্রামে তাঁর বাড়ি। তবে থাকেন হোটেলের ভেতরেই। তাঁর স্ত্রীর নাম ফজিলা খাতুন আর ছেলের নাম সাগর। তাঁরাও হোটেলেই থাকেন। বিদায়বেলায় বললেন, ‘আপনাদের মতো মানুষ আমার খোঁজখবর নিলেন, এটা ভালো লাগল। আল্লাহ আমাকে যত দিন রাখেন, তত দিন আমার যা আছে তাই দিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য করব। গত মাসে একটা রোগী এসে ভর্তি হয়েছিল। খুব গরিব ছিল। আমি তাঁর স্বজনদের খাইয়েছি; কিন্তু রোগীটি সুস্থ হয়নি। মারা গেছে। কষ্ট পেয়েছি অনেক।’