নয় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত
কাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ যেমন আনন্দের, তেমনই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত কষ্টের। আবার কেউ কেউ না জেনে বারবার গর্ভপাতকে জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি।
স্বাভাবিকভাবে কারো মাসিক বন্ধ থাকলে যে পদ্ধতিতে মাসিক নিয়মিত করা হয়, তাকে এমআর বা মাসিক নিয়মিতকরণ বলে। মাসিকের তারিখ পার হয়ে যাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে এটা সতর্কতার সঙ্গে করা হয়।
ঝুঁকি
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত সাময়িক সমস্যার সমাধান মনে হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব মারাত্মক। যাঁরা বারবার গর্ভপাত করান, তাঁদের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন—
♦ সন্তান না হওয়া
♦ কয়েক মাসের গর্ভস্থ সন্তান নস্ট হওয়া
♦ জরায়ুর মুখে ঘা
♦ তলপেটের প্রদাহ
♦ জরায়ু ফুটো হওয়া
♦ মৃত্যুর ঝুঁকি।
করণীয়
♦ সঠিক জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি ব্যবহার।
♦ গর্ভধারণ অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
♦ দক্ষ হাতে মাসিক নিয়মিতকরণ।
♦ খুব অল্প সময়ের গর্ভধারণ হলে জরায়ু ওয়াশ না করে ওষুধের মাধ্যমে গর্ভপাত করিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন (হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে)।
♦ ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ।
জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি
জন্মবিরতিকরণ পিল : বাজারে বর্তমানে অনেক স্বল্পমাত্রার জন্মবিরতিকরণ পিল পাওয়া যায়। এই পিলগুলোর সুবিধা হলো, রোজ গ্রহণ করলে ওজন বাড়ে না, শরীরে পানি আসে না; বরং মাসিক নিয়মিত হয়। তবে সরকারিভাবে সরবরাহ করা পিলগুলো কিছুটা উচ্চমাত্রার জন্মবিরতিকরণ পিল। সন্তানের বয়স ছয় মাস না হওয়া পর্যন্ত শুধু মিনি পিল গ্রহণ করা যায়। পিল ব্যবহারের সুবিধা হলো, এটি খাওয়া বন্ধ করলে অল্পদিনের মধ্যেই গর্ভবতী হওয়া যায়।
ইনজেকশন ডিপো প্রভেরা : এটি সাধারণত সরকারি হাসপাতাল ও জন্মনিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাওয়া যায়। তিন মাস অন্তর একটি করে ইনজেকশন নিলে সহজেই জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ইমপ্ল্যান্ট ও নরপ্ল্যান্ট : এটি দীর্ঘমেয়াদি জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি, সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদে গ্রহণ করা হয়।
কপারটি : জনপ্রিয় একটি জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি। এটি সাধারণত মাসিক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরানো হয়। আবার ডেলিভারির পরপরও পরানো যায়। একবার কপারটি পরার পর পাঁচ থেকে ১০ বছর থাকা যায়।
ইমারজেন্সি জন্মবিরতিকরণ পিল
কখনো কখনো সাবধানতা অবলম্বন করার পরও শেষরক্ষা হয় না। কেউ কেউ জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সেভ পিরিয়ড থিওরি মেনে চলেন—অর্থাৎ গর্ভধারণের জন্য সময় (মাসিকের দশম দিন থেকে ২০তম দিন) বাদ দিয়ে সহবাস করেন। মাসিকের এই ঝুঁকিপূর্ণ দিনগুলোয় যদি কারো অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি থেকে থাকে, তবে তিনি ইমারজেন্সি পিল খেতে পারেন।
সাধারণত এই পিল ঝুঁকিপূর্ণ সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলেই হয়। সহবাসের পর যত দ্রুত ইমারজেন্সি পিল নেওয়া হবে, তত বেশি কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।
মনে রাখতে হবে, ইমারজেন্সি পিল কখনো ভ্রূণের সৃষ্টি প্রতিহত করে না, বরং এটি জরায়ুতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন হতে দেয় না। তবে মাসে একবারের বেশি এই পিল ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ব্যত্যয় ঘটলে মাসিক অনিয়মিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ প্রতিহত করার অনেক পদ্ধতিই প্রচলিত আছে, শুধু নেই সচেতনতা। একমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধিই সাহায্য করতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অবস অ্যান্ড গাইনি, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
কাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ যেমন আনন্দের, তেমনই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত কষ্টের। আবার কেউ কেউ না জেনে বারবার গর্ভপাতকে জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি।
স্বাভাবিকভাবে কারো মাসিক বন্ধ থাকলে যে পদ্ধতিতে মাসিক নিয়মিত করা হয়, তাকে এমআর বা মাসিক নিয়মিতকরণ বলে। মাসিকের তারিখ পার হয়ে যাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে এটা সতর্কতার সঙ্গে করা হয়।
ঝুঁকি
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত সাময়িক সমস্যার সমাধান মনে হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব মারাত্মক। যাঁরা বারবার গর্ভপাত করান, তাঁদের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন—
♦ সন্তান না হওয়া
♦ কয়েক মাসের গর্ভস্থ সন্তান নস্ট হওয়া
♦ জরায়ুর মুখে ঘা
♦ তলপেটের প্রদাহ
♦ জরায়ু ফুটো হওয়া
♦ মৃত্যুর ঝুঁকি।
করণীয়
♦ সঠিক জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি ব্যবহার।
♦ গর্ভধারণ অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
♦ দক্ষ হাতে মাসিক নিয়মিতকরণ।
♦ খুব অল্প সময়ের গর্ভধারণ হলে জরায়ু ওয়াশ না করে ওষুধের মাধ্যমে গর্ভপাত করিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন (হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে)।
♦ ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ।
জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি
জন্মবিরতিকরণ পিল : বাজারে বর্তমানে অনেক স্বল্পমাত্রার জন্মবিরতিকরণ পিল পাওয়া যায়। এই পিলগুলোর সুবিধা হলো, রোজ গ্রহণ করলে ওজন বাড়ে না, শরীরে পানি আসে না; বরং মাসিক নিয়মিত হয়। তবে সরকারিভাবে সরবরাহ করা পিলগুলো কিছুটা উচ্চমাত্রার জন্মবিরতিকরণ পিল। সন্তানের বয়স ছয় মাস না হওয়া পর্যন্ত শুধু মিনি পিল গ্রহণ করা যায়। পিল ব্যবহারের সুবিধা হলো, এটি খাওয়া বন্ধ করলে অল্পদিনের মধ্যেই গর্ভবতী হওয়া যায়।
ইনজেকশন ডিপো প্রভেরা : এটি সাধারণত সরকারি হাসপাতাল ও জন্মনিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাওয়া যায়। তিন মাস অন্তর একটি করে ইনজেকশন নিলে সহজেই জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ইমপ্ল্যান্ট ও নরপ্ল্যান্ট : এটি দীর্ঘমেয়াদি জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি, সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদে গ্রহণ করা হয়।
কপারটি : জনপ্রিয় একটি জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি। এটি সাধারণত মাসিক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরানো হয়। আবার ডেলিভারির পরপরও পরানো যায়। একবার কপারটি পরার পর পাঁচ থেকে ১০ বছর থাকা যায়।
ইমারজেন্সি জন্মবিরতিকরণ পিল
কখনো কখনো সাবধানতা অবলম্বন করার পরও শেষরক্ষা হয় না। কেউ কেউ জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সেভ পিরিয়ড থিওরি মেনে চলেন—অর্থাৎ গর্ভধারণের জন্য সময় (মাসিকের দশম দিন থেকে ২০তম দিন) বাদ দিয়ে সহবাস করেন। মাসিকের এই ঝুঁকিপূর্ণ দিনগুলোয় যদি কারো অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি থেকে থাকে, তবে তিনি ইমারজেন্সি পিল খেতে পারেন।
সাধারণত এই পিল ঝুঁকিপূর্ণ সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলেই হয়। সহবাসের পর যত দ্রুত ইমারজেন্সি পিল নেওয়া হবে, তত বেশি কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।
মনে রাখতে হবে, ইমারজেন্সি পিল কখনো ভ্রূণের সৃষ্টি প্রতিহত করে না, বরং এটি জরায়ুতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন হতে দেয় না। তবে মাসে একবারের বেশি এই পিল ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ব্যত্যয় ঘটলে মাসিক অনিয়মিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ প্রতিহত করার অনেক পদ্ধতিই প্রচলিত আছে, শুধু নেই সচেতনতা। একমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধিই সাহায্য করতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অবস অ্যান্ড গাইনি, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR0QsvcqjH0dMmsEQj-NPglRMt4gW5oe32oH3C-jCb4BnnI893b6ABrzpvk