লাক্স সুপারস্টার : বদলে যাওয়া জীবন

তিনজনের ৩ অজানা

১. তিনজনের একজনও এখন প্রেম করেন না। মিম বললেন, হুট করে একদিন হয়ে যাবে। অথই নিজেকে এখনো শিশু মনে করেন। বৃষ্টি একেবারে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন।

২. তবে তিনজনই বিয়ের ব্যাপারটা সৃষ্টিকর্তা আর বাবা-মায়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। অবশ্য এখনই বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে।

৩. তিনজনই মঞ্চনাটক দেখেন। সুযোগ পেলে তিনজনই মঞ্চে কাজ করতে চান।

তিনজনের অনেক কিছুই একসুতায় গাঁথা। তাঁরা ‘স্বীকৃত’ সুন্দরী। লাক্স সুপারস্টারের মতো মঞ্চ থেকে পেয়েছেন এই স্বীকৃতি। একসঙ্গে গ্রুমিং করেছেন, শিখেছেন এবং অবশেষে দাঁড়িয়েছেন বিচারকদের সামনে। এরপর দেশের টেলিভিশন নাটকে কাজ করে চলেছেন মাস চারেক ধরে। এই তিনজন হলেন মিম মানতাসা, সারওয়াত আজাদ বৃষ্টি, সামিয়া অথই। প্রথমজন ‘লাক্স সুপারস্টার’, দ্বিতীয়জন প্রথম রানারআপ, তৃতীয়জন দ্বিতীয় রানারআপ। এই তিনজন ১ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় এসেছিলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে। আক্ষরিক অর্থেই আড্ডা দিতে আসা। কারণ গতানুগতিক কোনো আলাপেই মুখ ডোবালেন না তিনজন।

শুরুতেই তিনজনের কাছে একটা ‘কমন’ প্রশ্ন ছিল, অনেক দিন ধরে লাক্স সুন্দরীরা কাজ করছেন মিডিয়ায়। আপনাদের সামনে কি কোনো আইডল আছেন, যাঁরা লাক্সের মাধ্যমে এসেছেন? প্রশ্নটা শুনে তিনজনই খানিকক্ষণ ভাবেন। শুরু করেন অথই। ‘আমি আসলে অন্য কারও মতো হতে চাই না। আমি নিজের মতো করে এগোতে চাই। লোকে যেন বলে এটাই অথই। আমার নিজস্বতা যেন সব কাজেই রাখতে পারি, সেই চেষ্টা করব।’ মানতাসা বললেন, ‘লাক্স থেকে বেরিয়ে সবার কাজেরই একটা আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়েছে। তাই সবাইকে ভালো লাগে। আমি নতুন কেউ একজন হতে চাই।’ এবার বৃষ্টির পালা। বললেন, ‘আমি কী হব, জানি না। তবে নিজের মতো করে এগোতে চাই।’ এই নিজের মতো করে এগোতে গিয়ে লাক্স থেকে বেরিয়ে তিনজনই কাজ করেছেন। টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন বেশি। মিউজিক ভিডিও ও স্থির চিত্রে মডেল হওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে। মানতাসা শুরুই করেছিলেন এবারের লাক্স সুপারস্টারের বিচারক তাহসানের বিপরীতে ‘নায়িকা’ হিসেবে একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। বৃষ্টি করেছেন মোশাররফ করিমের মতো অভিনেতার সঙ্গে অভিনয়। আর অথই? আলোচিত ‘লিটন’ চরিত্র নিয়ে নির্মিত লিটনের গরিবি ফ্ল্যাট নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন লিটনের স্ত্রীর চরিত্রে।

বদলে যাওয়া জীবন
এ বছরের ১১ মে পর্যন্ত এই তিনজনের জীবন ছিল একরকম। এখন আরেক রকম। আগে কেউ চিনত না, এখন চেনে—পার্থক্যের ব্যাপারটা শুধু এইটুকুতে সীমাবদ্ধ নেই। তিনজনই শিক্ষার্থী—মিম মানতাসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে, বৃষ্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অথই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। মে মাসের আগে তিনজনই সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে প্রতিদিন ক্লাসে যেতেন। পড়াশোনাতেই বুঁদ হয়ে থাকতেন। কিন্তু এখন? ক্লাসের পড়ার বাইরেও আরও পড়তে হয় চিত্রনাট্য। সেটা পছন্দ করতে হয়। তারপর দাঁড়াতে হয় ক্যামেরার সামনে। তাই নিয়মিত রুটিনের বাইরে ‘লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন–এর’ জন্য সময় বের করতে হয় তিনজনকেই।

জানতে চাই কেমন উপভোগ করছেন এই সময়গুলো? তিনজন একে অপরের দিকে তাকান। শুরু করেন মানতাসা, ‘আমার জন্য এটা একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। শুটিং সেটে হয় মাকে, নয়তো ছোট ভাইকে নিয়ে যাই। এটা সত্যিকার অর্থেই আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ সবকিছুর জন্য সবার সঙ্গে আমাকেই কথা বলতে হচ্ছে। আগে আমার যাবতীয় কাজ আমার মা–বোনেরা করে দিতেন। আগে আমি ভাবতাম আমি কোনো কাজ পারি না। কিন্তু এখন আমি বদলে গিয়েছি।’

অথইয়ের দিকে মুখ ঘোরাতেই দিলেন নতুন তথ্য, ‘আমি লাক্স সুপারস্টারে অংশ নেওয়ার আগে একটা নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। তাই এই মাধ্যমের সঙ্গে আগে থেকেই যুক্ত। কিন্তু লাক্সের ট্যাগ লাইন লেগে যাওয়ায় সবাই আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। চিত্রনাট্য লেখার সময়ই আমার চরিত্রটা নিয়ে ভাবছেন। এটা ভালো লাগছে। এমনকি যিনি আমার সহশিল্পী হচ্ছেন, তিনি কতটা আমাকে মানিয়ে নিতে পারবেন বা আমি পারব, সেটাও কিন্তু ভাবতে হচ্ছে। শুধু এটাই নয়, আমার চরিত্র, পোশাক, ভাষা হলে কেমন হবে—সবই নিজেকে ভাবতে হচ্ছে।’

বৃষ্টি নড়েচড়ে বসেন। বৃষ্টির মা এতক্ষণ পাশেই ছিলেন। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমার মেয়েকে আমি এখনো ভাত খাইয়ে দিই।’ বৃষ্টি লজ্জা পেয়ে যান। ‘আমি কিন্তু ডরিনকে (বৃষ্টির ছোট বোন) খাইয়ে দিই।’ বলেন বৃষ্টি। এবার মা মাথা নাড়িয়ে সমর্থন দেন বৃষ্টিকে। বৃষ্টি বলেন, ‘আমার গণ্ডি ছিল ক্যাম্পাস থেকে বাসা। আর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশে বা দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া। কিন্তু এখন আমার পরিচিতির গণ্ডি বেড়েছে। সবার সঙ্গেই কথা বলতে হয়। যোগাযোগ রাখতে হয়। এটা এক অর্থে বদলে যাওয়াই।’ কথা শেষ করার আগে আগে বৃষ্টি বললেন, ‘অনেক জায়গাতে বদলে গেলেও আমি ক্যাম্পাসে সেই আগের বৃষ্টি। এখনো লোকাল বাসে যাতায়াত করি। কেউ চিনতে পারে, কেউ পারে না। কেউ চিনতে না পারলে আমার খুব মজা লাগে।’

ততক্ষণে সামনে চা–কফি চলে আসে। খাবার দেখে আঁতকে ওঠেন মানতাসা। সেই আঁতকে ওঠার অনুবাদ করে দেন সামনে বসে থাকা মিমের ছোট ভাই। ‘ও তো এখন বাইরের কিছু খায় না। আগে খেত, বিশেষ করে কোলা (কোমল পানীয়)। এখন সেটাও খায় না।’

মিম পুরোনো স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘জানেন, আমরা যখন লাক্সের গ্রুমিংয়ে ছিলাম, তখন কোক খেতে না পেরে কী যে খারাপ লাগত। বাইরের খাবার খাওয়ার জন্য আঁকুপাঁকু করত মন। আমার পরিকল্পনা ছিল, এখান থেকে বের হতে পারলে বাসায় যাওয়ার আগে মন ভরে কোলা খাব। কিন্তু সেটা আর হয়নি। লাক্স সুপারস্টার হওয়ার পর অনেক কিছু বদলে যাওয়ার মতো এই ইচ্ছাটাও বদলে গেছে।’

সামনে কে কোথায়?
১০ বছর পর কাকে কোথায় দেখব আমরা? প্রশ্নটা শুনে ধন্দে পড়ে যান তিনজনই। বৃষ্টি ভেবেচিন্তে বলেন, ‘আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা আমি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হিসেবে যেন দায়িত্ব নিই। চাকরি না করলেও বিসিএসে টিকে দেখাতে হবে। তবে এই মাধ্যমেও একটা জায়গা করে নিতে চাই।’