বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার চোটের কারণে খেলার বাইরে আছেন বেশ কিছুদিন। তবে এই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অনুশীলনে ফেরার কথা রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ব্যক্তিগত জীবনের অনেক গল্প।
মাগুরায় নিজ বাসভবনে বিশ্রামে আছেন সাকিব। বাড়ির আঙিনা নিয়ে এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার জানিয়েছেন কিছু মজার তথ্য। ছোটবেলার খেলার কথা জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘সোজা এইটুকু জায়গাতেও খেলা হতো। বিদ্যুতের খুঁটিকে স্টাম্প বানিয়ে কত খেললাম। রাস্তার ওপর দুপাশের গাড়ি, রিকশা বন্ধ করে খেলা হতো। এখানে মুরগি বেঁধে দিয়ে খেলা হতো রাতে। যারা জিতবে তারা মুরগি, তরমুজ, কলা, বিস্কুট ইত্যাদি পেত। ’
তবে আশ্চর্য হলেও সত্য, ক্রিকেটার হওয়ার কোনো নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল না সাকিবের। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ফুটবলার হবো নাকি ক্রিকেটার হবো, এমন কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। ফুটবলার বা ক্রিকেটার যাই হই না কেন, সবই ছিল পড়াশোনা সম্পর্কিত। কারণ মধ্যবিত্ত পরিবার, বাবা চাকরি করেন। এত বড় পর্যায়ে কেউ যায়নি।’
তবে ক্রিকেটার হওয়ার জন্য কখনোই চাপও নেননি তিনি, ‘ক্রিকেটার হতেই হবে, এর জন্য এমন কোনো চাপ নিইনি আমি। চাপ নিলে হয়তো ক্রিকেটারই হতে পারতাম না। কারণ আমার কাছে মনে হয়, এটা একটা মানসিক চাপ।’
পারিবারিক জীবনে কন্যা আলাইনা হাসান অব্রির ব্যাপারে স্নেহময়ী পিতা সাকিব বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সবচেয়ে বড় উপহার আমার মেয়ে। আগে অন্যরা বলত বাবা হওয়ার ব্যাপারে। ভাবতাম এসব কি, কোনো বিশেষ অনুভূতি ছিল না। তবে বাবা হওয়ার আগে এ অনুভূতি কেউ বুঝতে পারবেন না।’
বিবিসি বাংলায় সাকিব জানিয়েছেন নিজের পছন্দ-অপছন্দ। খাবারের ব্যাপারে সাকিব বলেন, ‘আমি খাবার খেতে প্রচণ্ড ভালোবাসি। খাবারের মধ্যে একমাত্র পটোল বাদে আমি সব খাই। কারণ, পটোলের বীজ আমার পছন্দ না। বাকি সবই খাই।’ তবে পোশাকের ব্যাপারে পাঞ্জাবির প্রতি দুর্বলতা রয়েছে সাকিবের। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু পোশাক আছে পছন্দের। কিন্তু পাঞ্জাবি পরা এবং খোলার জন্য সবচেয়ে সোজা। সবচেয়ে সুবিধা পাওয়া যায় পাঞ্জাবিতে।’
কিছুদিন আগে জা এন জি আইসক্রিমের বিজ্ঞাপনে কাজ করার সময় লুঙ্গির ওপর স্যুট পরা একটি ছবি ভাইরাল হয় সাকিবের। এই ব্যাপারে সাকিব বলেন, ‘এটাই খুব সম্ভবত আমার প্রথমবার লুঙ্গি পরা। লুঙ্গি পরা নিয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। এটা আমার কাছে পাঞ্জাবির মতো খুবই আরামদায়ক মনে হয়েছে। এটা বাংলাদেশের একটা ঐতিহ্য। তাই প্রথমবার লুঙ্গি পরতে পেরেও আমি অনেক খুশি।’
বিশ্বজুড়ে অগণিত ভক্ত সাকিবের। এমনকি খুলনায় বাসায় থাকার সময়েও ভক্তরা ছবি তুলতে কিংবা অটোগ্রাফ নিতে চলে আসেন। তবে এটিকে বিড়ম্বনা মনে করেন না সাকিব। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ পাঁচশ মানুষ একসঙ্গে এসে ছবি তুলতে চাইলে সেটা বিড়ম্বনা হয়। এমনটা সচরাচর হয় না। আর আমি আসলে এটা উপভোগ করি। আমি মনে করি, এটা আমাকে ভালো খেলতে উদ্বুদ্ধ করে।’
কিছুদিন আগেও ব্যাড বয় উপাধি পেয়েছিলেন সাকিব। কটূক্তির কারণে দর্শকদের মারধর কিংবা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি অথবা আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে থাকলেও এখন রাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন সাকিব। এই ব্যাপারে সাকিব বলেন, ‘আগে চিৎকার করতাম, রাগারাগি করতাম, সামনে কিছু পেলে হয়তো ভেঙে ফেলতাম। এখন এ রকম কিছু হয় না। এখন আমি কোনো ঘটনা ঘটলে ব্যাপারগুলো বুঝতে সময় নিই। রাগারাগি যেন না হয়, সেভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমি এখন জানি।’
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সাকিব। টেস্ট দলের অধিনায়ক কিংবা ছোট ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোয় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবেই হোক, সব সময় নিজেকে উজাড় করে খেলার চেষ্টা করেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ক্রিকেটে তিনি আবারও স্বরূপে ফিরে আসবেন, এমনটিই প্রত্যাশা ক্রীড়াপ্রেমীদের।