চাকরির সফল সাক্ষাৎকারের টিপস : সাক্ষাৎকারের সাত-সতেরো

নিজেরা সফলভাবেই উতরে গেছেন সাক্ষাৎকার পর্ব। কিন্তু ভোলেননি ভাইভা বোর্ডে প্রশ্নকর্তাদের সাক্ষাৎকারের  মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা। কিঙ্কর আহ্সানকে তা-ই শুনিয়েছেন সাত খাতের সাত তরুণ পেশাজীবী

মানস পাল
গ্রুপ প্ল্যানিং ডিরেক্টর
ইস্টারস্পিড
‘মনে করো, তুমি একটি বড় মাছ। বাস করার জন্য তোমাকে ছোট পুকুর ও সাগর থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। পুকুরে তোমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অন্যদিকে প্রতিযোগীর কারণে সাগরে টিকে থাকা মুশকিল। কী করবে? অপশন বেছে নেওয়ার পেছনের কারণও বলতে হবে।’ এমন অনেক সৃজনশীল এবং মজার প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরির পাওয়ার একটা বড় শর্ত হলো সৃজনশীল হতে হবে।
প্রশ্ন ছিল মার্কেটিংয়ের বিষয়েও। দেশের বিজ্ঞাপনের বর্তমান অবস্থা, বাইরের দেশের বিজ্ঞাপন নিয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। জানতে চেয়েছে পণ্যের প্রচারণার কৌশলটা কেমন হওয়া উচিত। উত্তর করেছি প্রশ্নকর্তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে। আমার ভেতরের প্রাণচাঞ্চল্য, সৃজনশীলতা, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতা ফুটিয়ে তোলার কারণেই চাকরি পাওয়াটা সহজ হয়েছে।

ফারহানা জাহান উপমা
সহকারী কমিশনার
প্রথম স্থান, ৩১তম বিসিএস
আত্মবিশ্বাস না থাকলে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন। মোটেও ভয় পাওয়া চলবে না। আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা ছিল। শুরুতে প্রশ্ন করা হয়েছে আমার নাম আর শিক্ষপ্রতিষ্ঠান নিয়ে। সংক্ষেপে বলতে হয়েছে, এ পেশায় আসতে চাওয়ার কারণ। পরিবার নিয়েও জানতে চেয়েছেন প্রশ্নকর্তারা। আমার স্বামী বিসিএস ক্যাডার। মজা করে জানতে চেয়েছেন, এক পরিবারে দুজন ক্যাডার থাকলে লড়াই হবে না? ভাইভা বোর্ডের যে কঠিন পরিবেশের কথা শুনেছিলাম তার মুখোমুখি হইনি একদমই। প্রায় ২৫ মিনিটের ভাইভায় আমাকে বলতে বলা হয়, দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি নিয়ে। দেশে নারীদের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ, জাতীয় সংসদে কতজন নারী সদস্য আছেন এমন অনেক প্রশ্ন ছিল। নিজ জেলা থেকেও প্রশ্ন করা হয়েছে।

উত্তর না পারলে ভান করিনি
আতিকুর রহমান
টেরিটরি বিজনেস ম্যানেজার সিটিসেল
মৌখিক পরীক্ষায় পোশাক নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বেছে নিয়েছিলাম সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট ও কালো জুতা।
প্রশ্ন ছিল সাম্প্রতিক অনেক বিষয়ে। জানতে চাওয়া হয়েছে, যে পদটির জন্য মৌখিক দিচ্ছি, সেটি পছন্দের কারণ সম্পর্কে। ‘সেলস’-এ কাজ করতে অনেক ছোটাছুটি করতে হয়। হতে হয় পরিশ্রমী। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারব কি না। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ছিল। সবশেষে জানতে চেয়েছে, কাজের ্ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণের জন্য আমি কী কী ত্যাগ স্বীকার করতে পারব। প্রশ্ন ছিল পণ্য এবং প্রতিষ্ঠানের ‘ব্র্যান্ডিং’ নিয়েও। প্রশ্নের উত্তর না পারলে বিনয়ের সঙ্গে নিজের অপারগতার কথা জানিয়েছি। ‘জানতাম, ভুলে গিয়েছি’ এ-জাতীয় ভান করলে অসততা প্রকাশ পায়।

যাচাই করা হয়েছে ইংরেজি দতা
মশিউর রহমান
সেল্স অফিসার
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লি.
শুরুতেই নিজের পরিচয় দিতে হয়েছে। তারপর বলতে হয়েছে নিজের একটি দুর্বলতার কথা। প্রশ্নকর্তা জানতে চেয়েছেন, মানুষের মধ্যে কী গুণ থাকলে তাকে নিখুঁত বলা যায়। সব প্রশ্নের উত্তর এমনভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে উত্তরে নেতিবাচক কোনো কিছু প্রকাশ না পায়। আমার স্কুল, কলেজজীবন নিয়েও কিছু প্রশ্ন করা হয়। কেন আমাকে এই চাকরিতে নেওয়া উচিত তা নিয়ে কিছু বলতে বলেন প্রশ্নকর্তারা। চাকরিতে আমার আগ্রহ, ক্যারিয়ারে ভালো করার ইচ্ছা, কেন সেল্সে কাজ করতে চাই এসব নিয়েও জানতে চেয়েছেন। কী যোগ্যতা দেখে চাকরিতে নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে বলতে হয়েছে নিজেকেই। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করতে হলে ইংরেজিতে দখল থাকাটা জরুরি। তারও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ভাইভায়।

জানতে চেয়েছে পছন্দ-অপছন্দ
কাওসার মিয়া
সিনিয়র প্রোডাকশন অফিসার এসিআই লিমিটেড
আমি দুবার মৌখিক পরীার মুখোমুখি হয়েছি। প্রথমবার প্রশ্নকর্তারা পরিবার নিয়ে বলতে বলেছেন। ফার্মাকোলজি নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। প্রডাকশন ম্যানেজার ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি থেকে কিছু প্রশ্ন করেছেন। কী করতে পছন্দ করি, আমার ব্যক্তিগত কোনো অর্জন আছে কি না এসব জানতে চেয়েছেন প্রশ্নকর্তারা। লিখিত পরীক্ষার কোন বিষয়গুলো পারিনি, কেন পারিনি জানতে চেয়েছেন দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায়। ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে কি না, এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নিয়েছি কি না তা জানতে চেয়েছেন। ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিগুলোয় ব্যবহার করা হয় এমন কিছু যন্ত্রপাতির নাম বলেছি প্রশ্নকর্তাদের।

যাচাই করেছিল জীবনবৃত্তান্তের তথ্য
আহমেদ শিহাব জামান
ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল
ব্র্যাক
উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে এনজিওতে চাকরি পাওয়া সহজ। জানতে চাওয়া হয়েছে এ বিষয়ে আমার কী অভিজ্ঞতা আছে। কেন এনজিওতে কাজ করতে চাই, দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারব কি না, ‘ব্র্যাক’ সম্পর্কে কি জানি এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন প্রশ্নকর্তারা। ‘ব্র্যাক’-এ কাজ করে মানুষ এবং সমাজের কতটা কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব, কাজের কৌশল কেমন হওয়া উচিত এমন প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজে আগ্রহ আছে তা না বোঝাতে পারলে এনজিওতে চাকরি পাওয়া কঠিন। জীবনবৃত্তান্তে দেওয়া তথ্য যাচাই করা হয় পরীায়। তাই কোনো মিথ্যা বা বাড়তি কিছু লেখা যাবে না। লিখিত পরীা ভালো হওয়ায় মৌখিক পর্ব উতরে যেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।

প্রশ্নকর্তাদের সঙ্গে তর্কে জড়াইনি
কাজী ফারহান জামিল
স্পেশাল ক্যাডার অফিসার ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড
উত্তর দেওয়ার জন্য বেশি সময় নিলে প্রশ্নকর্তারা বিরক্ত হন। পরীার সময় সচেতন ছিলাম এ ব্যাপারে। প্রশ্ন করা হয়েছিল সাম্প্রতিক বিষয়ে। কোনো উত্তরেই নেতিবাচক কিছু বলিনি। নিজের দেশ, সমাজ, প্রজš§, পরিবেশ নিয়ে হতাশাজনক কিছু বলা মোটেও উচিত নয়। যেহেতু ব্যাংকের েেত্র গ্রাহকসেবা গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রশ্ন ছিল ‘সার্ভিস মার্কেটিং’ সম্পর্কে। জানতে চাওয়া হয়েছে দেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমার ভাবনার কথা। প্রতিষ্ঠান বা কর্তাব্যক্তিদের সম্পর্কে অযৌক্তিক প্রশংসা এবং তোষামোদ থেকে বিরত ছিলাম। বিতর্কিত বিষয়ে প্রশ্নকর্তাদের সঙ্গে তর্কে জড়াইনি। জীবনবৃত্তান্ত থেকে কিছু প্রশ্ন ছিল। পড়াশোনার বাইরে কী করতে পছন্দ করি জানতে চাওয়া হয়েছিল তাও।